প্রতীকী ছবি
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, রোজ ভ্যালির মালিক গৌতম কুণ্ডুর মতো অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে টাকা পাচারের আইনে। সেই ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ (পিএমএলএ) বা অবৈধ ভাবে টাকা পাচার প্রতিরোধ আইনে দোষী সাব্যস্ত হলেন আলাউদ্দিন শেখ নামে নদিয়ার এক আফিম-কারবারি।
বিচার ভবনের বিশেষ আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় সোমবার আলাউদ্দিনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ, মঙ্গলবার তাঁর শাস্তি ঘোষণা করবেন ওই বিচারক। আইনজীবীদের একাংশের দাবি, পিএমএলএ মামলায় এ রাজ্যে এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত।
কী এই পিএমএলএ?
আইনজীবী মহলের বক্তব্য, টাকা নয়ছয়, অবৈধ ভাবে তা পাচার নিয়ে পিএমএলএ-র মতো আলাদা একটি আইন যে আছে, সারদা-রোজ ভ্যালির মতো অবৈধ অর্থ লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার আগে অনেকেই তা জানতেন না। সারদা-সহ বেশির ভাগ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে এই আইনেই মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তারা জানাচ্ছে, নানা ধরনের অপরাধের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে রোজগার করা টাকায় কেউ যদি সম্পত্তি কেনেন, তিনি পিএমএলএ-র আওতায় পড়বেন। এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের মধ্যে মাদক তৈরি ও বিক্রি যেমন রয়েছে, তেমনই আছে চোরাচালান এবং অন্য বেশ কিছু দুষ্কর্ম। কেন্দ্র ২০০৫ সালে এই আইন তৈরি করে এবং তা বলবৎ হয় ২০০৭-এ।
আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইডি-ই। তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, ২০০৬ সালের ২৩ অগস্ট ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে প্রায় চার কিলোগ্রাম আফিম-সহ আলাউদ্দিন শেখ ওরফে হেলু-কে আটক করে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। হেলুর বাড়ি নদিয়ার তেহট্টের ছোট নালদায়। ওই রাতেই সেই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এনসিবি আরও ২৪ কেজি আফিম এবং ৫৫০ কেজি আফিমের খোলা বাজেয়াপ্ত করে।
মাদক রাখা এবং তা বিক্রির অভিযোগে পরের দিন গ্রেফতার করা হয় আলাউদ্দিনকে। মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে বারাসত আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
ইডি-র আইনজীবী দীপককুমার মুখোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ ভদ্র জানান, মাদক বিক্রির টাকা অবৈধ ভাবে পাচারের অভিযোগে ওই বছরেই পিএমএলএ-তে আলাদা মামলা রুজু করা হয় আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। জেলবন্দি অবস্থাতেই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করেন ইডি-র তদন্তকারীরা। ইডি-র দাবি, আলাউদ্দিন জেরায় স্বীকার করেন, গ্রামে তিনি অবৈধ ভাবে পোস্ত চাষ করতেন। নিজের খেত এবং লাগোয়া জেলায় উৎপন্ন পোস্ত থেকে তৈরি হতো আফিম। সেই আফিম এবং তার খোলা বিক্রি করে বেআইনি ভাবে কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করেছেন তিনি।
ইডি-র অফিসার অক্ষয়কুমার সিংহ আদালতে জানান, অবৈধ উপায়ে আলাউদ্দিন যে-বিপুল অর্থ রোজগার করেছিলেন, সেই টাকায় তিনি ধানজমি কেনেন এবং কিছু টাকা রাখেন পলাশির গ্রামীণ ব্যাঙ্কেও। এ ছাড়া বেশ কিছু অস্থাবর সম্পত্তিও কেনেন তিনি। অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে রোজগার করা টাকায় সম্পত্তি কিনেছেন বলেই আলাউদ্দিন পিএমএলএ-র আওতায় পড়েছেন। সেই জন্য মাদক আইনে দণ্ড বিধানের পরেও এই আইনে আদালত তাঁকে শাস্তি দিতে চলেছে।
শাস্তি ঘোষণার আগেই আলাউদ্দিনের আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস এ দিন জানান, নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy