Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ছাড়পত্র নেই

বক্রেশ্বর বন্ধ হবে না কেন, প্রশ্ন কোর্টের

ক্রমাগত পরিবেশ দূষিত করতে থাকায় পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার মুখে পড়েছিল বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গোটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটাই বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না কেন, এ বার সেই প্রশ্ন তুলল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

ক্রমাগত পরিবেশ দূষিত করতে থাকায় পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার মুখে পড়েছিল বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গোটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটাই বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না কেন, এ বার সেই প্রশ্ন তুলল জাতীয় পরিবেশ আদালত। কারণ একটি বা দু’টি ইউনিট নয়, ওখানকার মোট পাঁচটি ইউনিটই চালানো হচ্ছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমতি না-নিয়ে!

এই অবস্থায় বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের পূর্বাঞ্চলীয় ডিভিশন বেঞ্চ। হলফনামায় জানাতে হবে, বিনা ছাড়পত্রে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ায় ওই কেন্দ্র বন্ধ করা হবে না কেন।

শুধু বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষ নয়, অনুমতি ছাড়া এত বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কী ভাবে চলছে, সেই ব্যাপারে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। তাদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরীকেও এ ব্যাপারে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত। ২৮ অগস্ট পরবর্তী শুনানি হবে।

বক্রেশ্বর কেন্দ্রের ছাই উপচে স্থানীয় বক্রেশ্বর নদ ও চন্দ্রভাগা নদীর জল দূষিত করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ও নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে দিয়ে সমীক্ষাও করিয়েছিল আদালত। তাতে ছাই থেকে ওই দু’টি নদনদী এবং এলাকার পরিবেশে মারাত্মক দূষণের কথাই উঠে এসেছে। এ ভাবে পরিবেশ দূষিত করায় বক্রেশ্বর কেন্দ্রের পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে না কেন, এই প্রশ্ন তুলে কর্তৃপক্ষের জবাব চেয়েছিল আদালত। কিন্তু বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষ তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। সেই ব্যাপারে এ দিন অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ফের ওই প্রশ্নের জবাব চেয়েছে বেঞ্চ।

এত দিন মূলত ছাই-দূষণের বিষয়টি নিয়েই বিচার-বিবেচনা চলছিল। কিন্তু এ দিন বড় হয়ে ওঠে ছাড়পত্র ছাড়াই বক্রেশ্বর চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, দু’বছর ইউনিট চালানোর জন্য ২০১৩ সালে পর্ষদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পর্ষদ তাঁদের অনুমতি দেয় এক বছরের জন্য। সেই এক বছরের কাজ দেখে অনুমতির মেয়াদ বাড়ানোর কথা ছিল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেই এক বছরের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে পর্ষদ আর অনুমতির মেয়াদ বাড়ায়নি। গত ২০ মে অনুমতি বাড়াতে বলে ফের চিঠি দেন বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের চিঠির ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই ব্যাপারেও হলফনামা দিতে বলা হয়েছে পর্ষদকে।

পর্ষদের একাংশ বলছেন, বৈধ অনুমতি ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে তারাপীঠ ও সুন্দরবনের বহু হোটেল বন্ধ করার নোটিস দিয়েছে পরিবেশ আদালত। এ বার বক্রেশ্বর বন্ধ করার প্রশ্ন উঠছে সেই যুক্তিতেই। মামলার আবেদনকারী সুভাষবাবু বলেন, ‘‘অনুমতির মেয়াদ ফুরোনোয় এখন খাতায়-কলমে আইন ভেঙেই চলছে বক্রেশ্বরের পাঁচটি ইউনিট।’’

বিষয়টি এত দিন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরে আসেনি কেন?

এক পর্ষদ-কর্তা জানান, ডিসেম্বরে অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার আগেই দূষণ নিয়ে মামলা হয়েছিল পরিবেশ আদালতে। তাই বিচারাধীন বিষয়ে নাক গলানো হয়নি। তা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র জনপরিষেবামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠান বলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধা কাজ করেছিল।

কী বলছেন বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষ?

বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মহীতোষ মাজি জানান, আগে দু’বছর অন্তর ছাড়পত্র নবীকরণ হত। ২০১৪ সালে সেই নিয়মের কিছুটা বদল ঘটিয়ে ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণের মেয়াদ এক বছর করেছে পর্ষদ। সেই জন্য ওই বছর প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বছরের নভেম্বরে পরিবেশ আদালতে মামলা হয়। পরিবেশ দফতরও ছাড়পত্র পাঠায়নি। কেন ছাড়পত্র দেওয়া হল না, তার কোনও কারণও দেখায়নি পর্ষদ। ‘‘কারণ জানতে চেয়ে গত মে মাসে আমরা দুর্গাপুরে পর্ষদের আঞ্চলিক দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছিলাম। আদালতে আমরা সেই চিঠি দেখিয়েছি,’’ বললেন মহীতোষবাবু। তাঁর দাবি, আঞ্চলিক দফতর থেকে সোমবারেই তাঁদের জানানো হয়েছে, সাধারণ ডাকে ছ’মাসের জন্য ছাড়পত্র পাঠিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE