Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আক্রমণেই খেলা ঘোরাতে চায় আলিমুদ্দিন

ফুটবলের পরিভাষায় যাকে বলে, ‘হোম ম্যাচ’ জেতা হয়ে গিয়েছে! এ বার নামতে হবে ‘অ্যাওয়ে ম্যাচে’! গত মাসখানেক ধরে পরিকল্পনামাফিক আগ্রাসন দেখিয়ে বৃহত্তর জোটের পক্ষে জমি তৈরি করেছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব।

— ফাইল চিত্র।

— ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

ফুটবলের পরিভাষায় যাকে বলে, ‘হোম ম্যাচ’ জেতা হয়ে গিয়েছে! এ বার নামতে হবে ‘অ্যাওয়ে ম্যাচে’!

গত মাসখানেক ধরে পরিকল্পনামাফিক আগ্রাসন দেখিয়ে বৃহত্তর জোটের পক্ষে জমি তৈরি করেছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। আলিমুদ্দিনের এখন আশা, এই আক্রমণাত্মক ভূমিকা এবং গোটা রাজ্য জু়ড়ে বিরোধী শিবিরে তৈরি হওয়া বাতাবরণ দিল্লির ম্যাচেও উতরে দেবে।

আলিমুদ্দিনে দু’দিন ধরে রাজ্য কমিটির বৈঠকে সশরীর হাজির থেকে বাংলার জেলায় জেলায় নেতাদের মনোভাব সম্যক বুঝে নিয়েছেন দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। বাংলায় দলের স্বার্থের কথা ভেবে ফের ‘আত্মহত্যা’র পথে এগিয়ে না যাওয়ার জন্য যে ভাবে রাজ্য কমিটিতে প্রায় হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছে এ বার, সাম্প্রতিক অতীতে তেমন ঝড়ের মুখে কারাটকে পড়তে হয়নি! শুধু সেখানেই শেষ নয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পর্যন্ত বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে কারাটের সামনেই বলে দিয়েছেন, দলটা ফের ভেঙে যাক, তা তাঁরা চান না! রাজ্য সম্পাদকের এই বক্তব্যকে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি হিসাবেই দেখছে দলের বড় অংশ। যার অর্থ, এ বার হেস্তনেস্ত করার মনোভাব নিয়েই দিল্লি যাচ্ছেন সূর্যবাবুরা!

বস্তুত, সেই ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাবে সায় দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনার সময়ের পরে সিপিএমের কোনও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ঘিরে দলের ভিতরে-বাইরে এত উত্তেজনা তৈরি হয়নি। সে বার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোটাভুটিতে হেরেছিল জ্যোতিবাবুর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্ন। তবে তখন বঙ্গ সিপিএমের মধ্যেও ওই বিষয়ে দ্বিমত ছিল। এ বার আলিমুদ্দিনের শীর্ষ মহলে জোট-প্রশ্নে তার চেয়ে অনেক বেশি মতৈক্য। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য শুধু কংগ্রেস-প্রশ্নে জোরালো আপত্তি জানিয়ে রেখেছেন। কেরল সিপিএম বেঁকে বসবে, দক্ষিণী শিবিরের বিরোধিতা থাকবে— এ সব ধরে নিয়েই এ বার আক্রমণাত্মক সওয়াল করতে তৈরি হচ্ছেন গৌতম দেবেরা। দলের একাংশের বক্তব্য, বঙ্গ ব্রিগেড আক্রমণাত্মক ছিল বলেই ১০ মাস আগে বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে সীতারাম ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হতে পেরেছিলেন। আগামী সপ্তাহে দিল্লিতেও জোট-প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ করাতে তাদের একই ভূমিকা নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্যসংখ্যা এখন ৯১। অর্থাৎ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে ৪৬টি ভোট দরকার। বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের মত জোটের বিরুদ্ধে যেতে পারে। তার সঙ্গেই দিল্লি-নিবাসী কিন্তু বাঙালি নেতা আছেন তিন জন। যাঁরা প্রত্যেকেই জোটের পক্ষে দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে দলে কারও কারও সংশয় আছে। অর্থাৎ সব মিলে বাংলার ১৮-র মধ্যে ১৩-১৪ জনের সমর্থন পেলেও ঘাটতি থাকবে আরও ৩২! সুতরাং পাটিগণিতের হিসাবে, বাংলার একার ক্ষমতায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে জোট-প্রশ্নে সিলমোহর আদায় সম্ভব নয়। সেই সম্ভাবনা আঁচ করেই স্বয়ং ইয়েচুরি বিভিন্ন ছোট রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। এ রাজ্য থেকে এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও বলছেন, ‘‘যদি ভোট হয়, হবে! আমরাও তৈরি হয়েই দিল্লি যাব!’’

দলেরই একাংশের অবশ্য ধারণা, বিষয়টি ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়াবে না। পার্টি কংগ্রেসের দলিলের অধ্যায় বিশ্লেষণ করে সূর্যবাবুরা যে ভাবে কারাটের সামনেই বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করে দিয়েছেন, তার পরে বাংলায় দলের ভাবাবেগ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে অন্য পথে হাঁটতে না-ও চাইতে পারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কট্টরপন্থী শিবির।

রাজ্য কমিটিতে ৫৪ জন বক্তার মধ্যে জোটের পক্ষে সায় দিয়েছেন ৪৩ জন, বিপক্ষে ১১। দলের অন্দরের সেই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করেও সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম শনিবার বলেছেন, ‘‘তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করতে বাম ঐক্যের পাশাপাশিই আমরা ব্যাপকতর ঐক্য গড়ে তুলতে চাইছি। গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করতে চাইছি। বাংলার মানুষের কী আশা-আকাঙ্খা, সেটা আমরা দিল্লিতে ড্রয়িং বোর্ডে ফেলব! সেখানেই চূড়ান্ত নকশা তৈরি হবে।’’ আর একই সঙ্গে রাজ্য কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গকে নৈরাজ্য ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, জীবন-জীবিকার উপরে আক্রমণ রুখতে, গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাকে বজায় রাখতে যারা রাজি, তাদের ঐক্যবদ্ধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জারি রাখার কাজই আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করছি’।

দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘রাজ্য সম্পাদকের নেতৃত্বে ধাপে ধাপে বৃহত্তর জোটের পক্ষে বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে এখানে। এর পরে দিল্লি গিয়ে তরী ডুববে না আশা করি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE