সবং বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘লাইন’ মানার বাধ্যবাধকতা ছিল। তাই সেখানে কংগ্রেসের জন্য আসন ছাড়া যায়নি। কিন্তু আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে জোটের ডাক দিয়ে রাখল সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পঞ্চায়েতের বাস্তবতা মেনে তৃণমূল এবং বিজেপি-কে রুখতে যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়াই করবে।
পঞ্চায়েত বা পুরসভা ভোটে অবশ্য চিরকালই স্থানীয় সমীকরণের ভিত্তিতে রকমারি সমঝোতা হয়ে যায়। লোকসভা বা বিধানসভার মতো রাজনৈতিক লাইন সেখানে কাজ করে না। তবু পঞ্চায়েত ভোটে আগে থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএমের জোট-আহ্বানকে তাৎপর্যপূর্ণই ধরা হচ্ছে।
গত বছরের বিধানসভা ভোটের পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশিকা ছিল, আপাতত কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও নির্বাচনী সমঝোতা হবে না। সেই নির্দেশিকা মেনেই কোচবিহার লোকসভা এবং দক্ষিণ কাঁথি, সবং বিধানসভার উপনির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দিয়েছে বামেরা। সবংয়ে জোট-প্রস্তাব বামেরা না মানায় ক্ষুব্ধও হয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্য কমিটির বৈঠকের জবাবি ভাষণে মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে সমদূরত্বের কোনও প্রশ্নই নেই। কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে উপনির্বাচনে প্রার্থী দিতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেস কোনও ভাবেই তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ নয়। বৈঠকে সূর্যবাবু উদাহরণ দিয়ে বলেন, উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা হলে সেখানে গিয়ে বাম নেতারা তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে যতটা বলবেন, কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও তেমনই বলবেন— এটা কখনও হতে পারে?
বৈঠকের পরে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে যেখানে আমাদের শক্তি আছে, আমরা লড়ব। যেখানে আমরা দুর্বল, সেখানে যারা তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে শক্তিশালী, তাদেরই আমরা সমর্থন করব। বামফ্রন্টে আলোচনার আগে বিশদে আর কিছু বলতে চাই না।’’ এই সমর্থন কংগ্রেসের জন্যও থাকবে কি না, প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে তো লড়াই নয়। শুধু কংগ্রেস কেন, তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণ না করে যারা লড়াইয়ে থাকবে, তাদেরই আমরা সমর্থন করব।’’
সিপিএমের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘‘আমি বা সূর্যবাবু কী বললাম, তার উপরে তো পঞ্চায়েত ভোটে সব কিছু নির্ভর করে না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির লাইনের বাধ্যবাধকতা আমি বুঝি। তবু বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে সমঝোতা করতে না পারলে আমরা বোধহয় মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাব। সবংয়ে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়ার যে সুযোগ ছিল, নিয়মতান্ত্রিকতার গেরোয় সেটা হাতছাড়া হল!’’
এত কালের জোটপন্থী, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বরং কিছুটা কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘এ সব লোক দেখানো! ওরা স্পষ্ট করে বলুক, পঞ্চায়েতে কি এক মঞ্চে প্রচারে যাবে? সবংয়ে সুযোগ নষ্ট করে এখন মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে!’’ সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিধানসভা ভোটে এই সবংয়েই মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে এক মঞ্চে প্রচারে গিয়েছিলেন সূর্যবাবু। তার পরে মানসবাবু কি কংগ্রেসে থাকলেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy