Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে ছাঁচ ভেঙে সংখ্যালঘু মঞ্চ কারাটদের

পর পর তিনটি বড় নির্বাচন গেল, বাংলায় বাম বাক্সে সংখ্যালঘু ভোটের বিশেষ দেখা নেই। আবার কেরলে বামেরা ক্ষমতায় এলেও সংখ্যালঘু ভোট তাঁদের পক্ষে স্থিতিশীল থাকবে, এমনটাও বুক ঠুকে বলা যাচ্ছে না!

স্বপন সরকার ও প্রেমাংশু চৌধুরী
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

পর পর তিনটি বড় নির্বাচন গেল, বাংলায় বাম বাক্সে সংখ্যালঘু ভোটের বিশেষ দেখা নেই। আবার কেরলে বামেরা ক্ষমতায় এলেও সংখ্যালঘু ভোট তাঁদের পক্ষে স্থিতিশীল থাকবে, এমনটাও বুক ঠুকে বলা যাচ্ছে না! সুতরাং সঙ্কট-প্রহরে নিয়ম নাস্তি! কমিউনিস্ট হিসাবে ধর্ম থেকে দূরে থাকার মন্ত্রে দীক্ষিত যারা, ঠ্যালায় পড়ে সেই সিপিএমই এ বার রাজ্যে রাজ্যে সংখ্যালঘু মঞ্চ গড়ে তুলতে চাইছে। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির স্বার্থে’ যাকে সিপিএমের তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান বদল হিসাবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।

সিপিএমের পোশাকি যুক্তিতে অবশ্যই ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির কথা মানা হচ্ছে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার বক্তব্য, গত বছর কলকাতায় সর্বভারতীয় প্লেনামেই ধর্ম নিয়ে ছুঁৎমার্গ ত্যাগ করেছে সিপিএম। দলীয় তরফে তখনই বলা হয়েছিল, ধর্মাচরণ নিয়ে দলের কোনও বাধা নিষেধ থাকবে না। কেউ যদি তা করতে চান, ব্যক্তিগত ভাবে করতে পারেন। রাজ্যে রাজ্যে সংখ্যালঘু মঞ্চ গড়ে তোলার ভাবনাও প্লেনামের সেই আলোচনা থেকেই উঠে এসেছে। তবে দলের ওই নেতার যুক্তি, ধর্মভিত্তিক ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে এই সিদ্ধান্তকে সামাজিক আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবে দেখতে হবে। কারণ, সারা দেশে সংখ্যালঘুরা এখন বিভিন্ন ভাবে আক্রান্ত। বিভাজনের রাজনীতির বিষ ছড়াচ্ছে আরএসএস এবং বিজেপি। ফলে সংখ্যালঘুদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দাবি আলাদা করে তুলে ধরা আরও বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন হল, এটাই যদি যুক্তি হয়, তা হলে অনেক আগেই এ ধরনের মঞ্চ গড়া কি জরুরি ছিল না? স্বাধীনতার প্রায় সাত দশক পরে হঠাৎ এই ভাবনার উদয় কেন?

ঘরোয়া আলোচনায় সিপিএম নেতারা স্বীকার করছেন, আসলে মঞ্চ গড়ার তাগিদটা বারো আনাই রাজনৈতিক। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে সংখ্যালঘু সমাজে প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন, তাতে বামেদের সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার নানা নির্বাচনে সংখ্যালঘু এলাকায় বামেদের ভোট কমছে। মোদী-মমতা আঁতাত নিয়ে অভিযোগ তুলেও বিশেষ লাভ হয়নি। দলের নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, পরবর্তী লোকসভা ভোটে তৃণমূল ও বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি পুরো মাত্রায় বজায় রাখলে সিপিএমের হাতে পড়ে থাকবে পেন্সিল! তাই সংখ্যালঘুদের ভোট পুনরুদ্ধারের সব রকম চেষ্টা করা এখন সময়ের দাবি। বহু বছরের বিতর্কের পরে সাবেক শ্রেণিগত দৃষ্টিভঙ্গি ছেড়ে সিপিএম যে ভাবে আদিবাসী তথা দলিতদের জন্য ন্যায়বিচার মঞ্চ গড়েছে বৃন্দা কারাটের নেতৃত্বে, সে ভাবেই এ বার সংখ্যালঘুদের জন্যও পৃথক মঞ্চের আয়োজন হচ্ছে। সিপিএমের যুক্তি, মঞ্চ গড়লে দলের বাইরে থেকেও নানা শক্তিকে কাছে টানা যায়। সম্ভবত পুজোর পরেই এর জন্য বাংলায় কনভেনশন ডাকা হতে পারে।

বস্তুত, সংখ্যালঘু মঞ্চ গড়ে তোলা নিয়েও সিপিএমে বিতর্ক নতুন নয়। অনেক আগেই ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ সর্বভারতীয় স্তরে ও রাজ্যে রাজ্যে সংখ্যালঘু মঞ্চ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সরোজ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বঙ্গ সিপিএমের তখন পাল্টা যুক্তি ছিল, এতে সমাজে বিভাজন তৈরি হবে। বাংলায় তখন দেশভাগের স্মৃতি দগদগে। সেই অবস্থায় সংখ্যালঘু মঞ্চ গড়লে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারতো।

পরবর্তী কালে অবশ্য বঙ্গ সিপিএমেরই হাসিম আব্দুল হালিম, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, মইনুল হাসান, আব্দুস সাত্তারেরা সংখ্যালঘু মঞ্চের পক্ষে দাবি করেছিলেন। তাঁদের দাবিও তখন দলের মৌলিক মতাদর্শের গেরোয় আটকে গিয়েছিল।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের রসিকতা, ‘‘দলের রাজ্য দফতরের সামনের রাস্তার নাম আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। পার্টি অফিসের নাম মুজফ্ফর আহমেদ ভবন। রাজ্য দফতরের একটি কক্ষের নামও আব্দুল হালিমের নামে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা করে ভাবতে অনেক সময় চলে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minorities CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE