সপ্তাহখানেক আগে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অটো-শাসনের আশ্বাস দেওয়ার পরে চালকেরা ফুৎকারে তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অটোচালকেরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা নেতা-মন্ত্রী চেনেন না। তাঁরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াবেন। অটোয় গানও বাজাবেন।
বুধবার পরিবহণমন্ত্রী জানালেন, বেলাগাম অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে আগামী ৩ অক্টোবর, সোমবার অটো-নীতি ঘোষণা করবে সরকার। তার পরেও অনেক অটোচালক বেপরোয়া ভঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন, পুজোর জন্য মহালয়ার দিন থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হবে। এবং পুজোর পরে অনেক রুটে ভাড়াও বাড়বে। তাঁদের এই থোড়াই কেয়ার মনোভাব দেখে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, অটোর দাদাগিরি রোখার হাতে-গরম দাওয়াইয়ের কথা ভাবা হচ্ছে না কেন? যেটা প্রয়োগ করলে শৃঙ্খলাবিধিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা কমে? একটু স্বস্তি পেতে পারেন যাত্রিসাধারণ?
নবান্নের কর্তাদের একটি অংশের বক্তব্য, পুজোর আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে জলঘোলা চান না বলেই পুলিশ-প্রশাসন অটোর ব্যাপারে সে-ভাবে সক্রিয় হচ্ছে না। তার মধ্যে পরিবহণমন্ত্রী অটো-নীতি ঘোষণার নির্ঘণ্ট জানিয়ে দেওয়ায় যাদের সতর্ক হওয়ার কথা, সেই অটোচালকদেরই কোনও হেলদোল নেই। এ দিন মন্ত্রী যখন নতুন নীতির কথা ঘোষণা করছেন, তখনও কলকাতার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অটোচালকেরা। কোথাও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাঁচ-ছ’জন যাত্রী তোলা হচ্ছে। কোথাও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। কোথাও আবার কাটা রুটে ছুটছে অটো। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অটোর এই চেনা চেহারা ও চরিত্রে কোনও বদল নেই। পরিবহণমন্ত্রীর নীতি ঘোষণার কথা শুনে অনেক অটোচালক যে-ভাবে বাড়তি ভাড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন জোর গলায়, তাতে যাত্রীদের আশঙ্কা, তাঁদের দুর্ভোগ শেষ হওয়ার নয়।
শুধু যাত্রিসাধারণই অসহায় বোধ করছে না। এই প্রেক্ষিতে অটোর দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সরকার ঠিক কোন পথে হাঁটবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না পরিবহণ দফতরের কর্তারাও। ওই দফতর সূত্রের খবর, যে অটো-নীতি ঘোষণা হতে চলেছে, তাতে কোনও চমক থাকছে না। এমনকী কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিক্লস অ্যাক্ট বা মোটরযান আইন মেনে অটোকে এখনই মিটারে চালানোর কোনও ভাবনাও নেই সরকারের। এ দিন কসবায় পরিবহণ দফতরের এক অনুষ্ঠানে পরিবহণমন্ত্রীও ঠারেঠোরে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। অটো-নীতি ঘোষণার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অটো নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে পুলিশের পাশাপাশি পরিবহণ দফতরও সব দিক খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট চালক বা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে কিছু অটোচালক ভুল করলে তো আর অটোরিকশাই তুলে দেওয়া যায় না! কারণ, লক্ষ লক্ষ যুবকের জীবন-জীবিকা এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।’’
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের অনেকেই মনে করেন, অটোয় মিটার-ব্যবস্থা থাকলে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরতে পারত। সেই বন্দোবস্ত করতে না-পারলে নাম-কা-ওয়াস্তে নীতি ঘোষণা করে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে করছেন না ওই কর্তারা।
সম্প্রতি পরপর কয়েকটি ঘটনায় অটোর দাদাগিরি এবং বেপরোয়া মনোভাবে দুর্ভাবনা বেড়েছে যাত্রীদের। গৌরীবাড়িতে একটি অটো সিগন্যাল অমান্য করে বাসে ধাক্কা মারায় মৃত্যু হয় পূজা পাল নামে এক কলেজছাত্রীর। তার পরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে বচসা এবং তাঁর রক্ষীকে অটোরিকশা ধাক্কা দেয় মধ্য কলকাতায়। পরের দিন ঠিক একই জায়গায় এক পুলিশকর্মীকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে কিছু অটোচালকের বিরুদ্ধে। তার পরেই তড়িঘড়ি পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শুভেন্দুবাবু।
২০ সেপ্টেম্বর সেই বৈঠকের পরেই পরিবহণমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কোনও অটো রুটে বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না। মন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সুর মিলিয়ে শাসক দলের অটো ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ১১ দফা নির্দেশিকা জারি করা হয়। কিন্তু মন্ত্রী বা ইউনিয়ন, কারও তোয়াক্কা করছে না অটো। সে চলছে নিজের আইনে। উল্টে ইউনিয়নের নির্দেশিকা জারি ও পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে সোমবার ঘণ্টাখানেকের জন্য উল্টোডাঙায় অটো চালানো বন্ধ রাখেন এক শ্রেণির চালক।
অটোর বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের এই আবহে সরকারের প্রস্তাবিত অটো-নীতি নিয়ে বিশেষ আশাবাদী নয় বিরোধী সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু। সংগঠনের অটো ইউনিয়নের নেতা অজিত চৌধুরী বলেন, ‘‘এই সরকারের আমলে বহু কমিটি, বোর্ড, টাস্ক ফোর্স, নীতি তৈরি হয়েছে। সেগুলো জানানোও হয়েছে ঘটা করে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।’’
স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। তাদের অটো ইউনিয়নের নেতা শুভাশিস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘যাত্রী এবং অটোচালক— উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষিত করে একটি নির্দিষ্ট নীতি চালু করা উচিত। সরকার সেটাই করছে। এতে ভালই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy