Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ধরহরার নীচে নিথর দীপেশ

আগের রাতেই বোনের কাছে ফুটবল এবং নিজের বুটজোড়া চেয়ে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কে জানত, আর কোনও দিনই তাঁর ফুটবল মাঠে নামা হবে না? কে জানত, আচমকা প্রবল জোরে দুলে উঠে আছড়ে পড়বে কাঠমান্ডুর ধরহরা টাওয়ার? আর তার দশ তলা থেকে ইট-পাথরের চাঁইয়ের সঙ্গে সোজা মাটিতে নেমে এসে নিথর হয়ে যাবে ছেলেটির দেহ? কতই বা বয়স? মোটে ছাব্বিশ।

দীপেশ রাই।

দীপেশ রাই।

রেজা প্রধান
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

আগের রাতেই বোনের কাছে ফুটবল এবং নিজের বুটজোড়া চেয়ে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কে জানত, আর কোনও দিনই তাঁর ফুটবল মাঠে নামা হবে না? কে জানত, আচমকা প্রবল জোরে দুলে উঠে আছড়ে পড়বে কাঠমান্ডুর ধরহরা টাওয়ার? আর তার দশ তলা থেকে ইট-পাথরের চাঁইয়ের সঙ্গে সোজা মাটিতে নেমে এসে নিথর হয়ে যাবে ছেলেটির দেহ? কতই বা বয়স? মোটে ছাব্বিশ। কাঠমান্ডুতে মাসির বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। কাজের খোঁজও চলছিল। দার্জিলিং কলেজ থেকে পাশ করেছেন। আপাতত মাসির রেস্তোরাঁ দেখভাল করছিলেন। শনিবার সকালে নেপালের পোখরা থেকে উঠে যে ভূমিকম্প দিল্লি থেকে কলকাতা পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছে, তাতে মৃত হাজার তিনেকের তালিকায় যোগ হয়ে গেল তাঁর নামও— দীপেশ রাই, সিংতাম চা বাগান, দার্জিলিং।

সপ্তাহখানেক আগেই নেপালে মাসির কাছে গিয়েছিলেন দীপেশ। তাঁর কাকা দেবেন রাই বলেন, ‘‘মাসির বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল ও। কাজও খুঁজছিল।’’ দীপেশের বাবা নিরাপত্তা কর্মী, মা একটি পরিবারের দেখাশোনার কাজের সূত্রে হংকংয়ে থাকেন। দেবেনবাবুর কথায়, ‘‘এখানে কাজের তেমন সংস্থান না থাকায়, অনেকেই কাজের খোঁজে নেপালে বা বাইরে কোথাও যায়। দীপেশ নেপাল গিয়ে মাসির রেস্তোরাঁ দেখভালের কাজ শুরু করেছিল।’’

দার্জিলিঙের সিংতাম চা বাগানে দীপেশ রাই-এর শোকার্ত আত্মীয়স্বজন। ছবি: রবিন রাই।

কাজ ছাড়া দীপেশের মাথায় আর যা ছিল, তা ফুটবল। শুক্রবার রাতে ফেসবুকে বোনের সঙ্গে ‘চ্যাট’ করার সময়ে তিনি লিখেছিলেন, এর মধ্যে কেউ যদি দার্জিলিং থেকে কাঠমান্ডু যায়, তার হাতে ফুটবল এবং তাঁর বুটজোড়া পাঠিয়ে দিতে। বোন নির্মিতা বলেন, ‘‘ফেসবুকে বেশি ক্ষণ কথা হয়নি। ফুটবল আর বুট ছাড়া একটা হেডফোনও চেয়েছিল ও।’’

নেপালে ভূমিকম্পে মৃত তন্ময় দত্তের বাড়িতে ভিড় এলাবাবাসীর। সোমবার জিয়াগঞ্জে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পরের দিনই বাড়িতে মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছয়। যদিও সোমবার পর্যন্ত দীপেশের দেহ আসেনি। এ দিন শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় ভূমিকম্প নিয়ে বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নেপালে গিয়ে দার্জিলিঙের এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর দেহ আনার জন্য সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’ দীপেশের মা ইতিমধ্যে হংকং থেকে নেপালে চলে গিয়েছেন। তিনি নিজেই ছেলের দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। পাওয়া গিয়েছে দীপেশের মোবাইলও। তাতে ধরহরার উপর থেকে তোলা কাঠমান্ডুর বেশ কিছু ছবি রয়েছে।

ভূমিকম্পে নেপালে মারা গিয়েছেন মুর্শিদাবাদের তন্ময় দত্ত-ও (২৩)। মাস দুই আগে কর্মসূত্রে তিনি নেপালে যান। ভূমিকম্পের পরে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সোমবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে বাড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE