Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

দিল্লি নাক গলাবে না

দার্জিলিং নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একেই সিকিমে চিনের সঙ্গে সীমান্তে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ রয়েছে। তার উপরে দার্জিলিং বিজেপির লোকসভা কেন্দ্রও। অস্বস্তি রয়েছে গুরুঙ্গেরও। পাহাড়ে এর মধ্যেই দোকান-বাজার খুলতে শুরু করেছে।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৩
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মনে করেন, কেন্দ্র নয়, দার্জিলিঙের সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কোনও ভাবেই নাক গলাবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে এই পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দার্জিলিং নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি রাজনাথকে ডেকে পাঠান মোদী। রাজনাথ আলোচনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বিমল গুরুঙ্গ চাইছেন দিল্লিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হোক। তখন মোদী জানতে চান, অতীত দৃষ্টান্ত কী বলছে? রাজনাথ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল জানান, সুবাস ঘিসিঙ্গের সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুই প্রথম আলোচনা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, রাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে না। এর মধ্যে রাজনাথ প্রধানমন্ত্রীকে জানান, গোর্খা নেতারা স্মারকলিপি জমা দিতে সময় চেয়েছিলেন। তাই তিনি দেখা করেছেন। কিন্তু এটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকের পরে লখনউ যাওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি বার্তা দিয়ে রাজনাথ বলেন, ‘‘কেন্দ্র এই বন্‌ধকে সমর্থন করছে না। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দার্জিলিঙের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আমি মমতা দিদিকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’’ দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আলোচনাই একমাত্র জট ছাড়াতে পারে।’’

এর পরে রাজনাথ ফোন করলে মমতা তাঁকে জানান, বন্যা ও ত্রাণ নিয়ে তিনি খুব ব্যস্ত। দু’এক দিনের মধ্যে সব কিছু সামলে নিয়ে পাহাড়ে নজর দেবেন।

দার্জিলিং নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একেই সিকিমে চিনের সঙ্গে সীমান্তে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ রয়েছে। তার উপরে দার্জিলিং বিজেপির লোকসভা কেন্দ্রও। অস্বস্তি রয়েছে গুরুঙ্গেরও। পাহাড়ে এর মধ্যেই দোকান-বাজার খুলতে শুরু করেছে। মোর্চার মিছিলে লোকও কমছে। কিন্তু মমতা তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। বেশি দেরি হলে পরিস্থিতি যদি বদলে যায়, এই ভয়ও আছে গুরুঙ্গের।

তাই মোর্চা সভাপতি চাইছেন চাপ বাড়াতে। রাজনাথকে দেওয়া স্মারকলিপিতে তাই তাঁদের দাবি, এক) জিটিএ আইনেই তো গোর্খাল্যান্ড শব্দটি ছিল। তাই এ বার শুধু গোর্খাল্যান্ড নিয়েই আলোচনা করতে হবে। দুই) চলতি আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তাঁদের নিঃশর্ত রেহাই দিতে হবে। তিন) রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার চুক্তিতে বলা হয়েছিল, আন্দোলনকারীদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। তাই ভানুভবনে আক্রমণকারীদের ছেড়ে দিতে হবে। চার) পাহাড়ে ইন্টারনেট চালু করতে হবে।

মোর্চার প্রথম দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র মমতাকে জানিয়েছে, পৃথক রাজ্য মেনে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। কিন্তু আলোচনা করতে অসুবিধা কোথায়? দিল্লির আরও অনুরোধ, ‘‘গোর্খা ও ডুয়ার্স-তরাইয়ের একটি অংশের দীর্ঘদিনের দাবি, রাজ্য সরকার সমীক্ষা করুক ও যথাযথ বিচারের আশ্বাস দিক। রাজ্য তো সেই আশ্বাস খতিয়ে দেখতে পারে।’’ গুরুঙ্গের দাবি, প্রাক-নির্বাচনী সমঝোতায় তো মমতা এই আশ্বাস দেন। উল্টো দিকে রাজনাথকে মমতা জানান, হিংসা বা জিটিএ-র নামে মানুষের টাকা লুঠ করার কথা কি চুক্তিতে লেখা ছিল? এই দু’টি বিষয়ে মীমাংসা না হলে রাজ্য আলোচনায় বসবে কেন?

এখন এই জটেই আটকে পাহাড়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE