ফাইল চিত্র।
রাত বারোটায় মেডিসিন-এর রাতের শিফটের ডাক্তারের কাছে খবর এল, নিউরোলজিতে ভর্তি ডেঙ্গি রোগীর অবস্থা এখন-তখন। মেডিসিন-এর ডাক্তারবাবু তখন মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন। অন্য ওয়ার্ডে যাওয়া সম্ভব নয়। পরের পাঁচ মিনিটে জানা গেল চোখ, মনোরোগ এবং অর্থোপেডিক বিভাগ মিলিয়ে জ্বরের আরও চার রোগীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। মাথায় হাত দিয়ে ওয়ার্ডেই বসে পড়লেন ডাক্তার। কোন কোন জায়গায় দৌড়বেন তিনি?
কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা। ওখানেই এক দিন মনোরোগ বিভাগে দুপুর থেকে হুলুস্থূল। এক মনোরোগী উত্তেজিত হয়ে পাশের শয্যার জ্বরের রোগীকে ধাক্কা মেরেছেন। আতঙ্কে হাসপাতাল ছাড়তে চাইছেন জ্বরে নেতিয়ে থাকা সেই প্রৌঢ়।
আরও পড়ুন: গুরুঙ্গকে ধরা দিতে নির্দেশ
কলকাতার আর এক মেডিক্যাল কলেজে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তির জন্য তিন দিন এসে ফিরে গিয়েছেন ফিমার বোন-ভাঙা এক রোগী। তিন বারই শুনতে হয়েছে, ‘বে়ড নেই। জ্বরের প্রকোপ কমলে আসবেন।’ অভিযোগ, জ্বরের রোগীর ভিড় সামলাতে গিয়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে এ ভাবেই প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন অন্য রোগী। ভর্তি হতে না পেরে মারাও যাচ্ছেন অনেকে।
জ্বরের রোগীরা অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি কেন? রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, সরকারের নয়া নির্দেশিকার জেরেই এই ব্যবস্থা। কোনও হাসপাতালই জ্বর সারার পরে দু’দিন না কাটলে রোগীদের ছাড়তে পারছে না। অথচ ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীরোগ বিভাগ বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত ওয়ার্ডে জ্বরের রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এক-একটি বিভাগ এক-এক বিল্ডিংয়ে। সেখানে মেডিসিন-এর ডাক্তাররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেতেই পারছেন না।
ডেঙ্গির পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই তলানিতে এসে ঠেকে। এই পরিস্থিতিতে অন্য রোগীদের সঙ্গে থেকে ডেঙ্গি রোগী অন্য নানা সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকদের বড় অংশই স্বীকার করছেন, সরকারি হাসপাতালগুলির অবস্থা এই মুহূর্তে ভয়াবহ।
বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, নিউরোলজি, অর্থোপেডিক, আই, সাইকিয়াট্রি-সহ বিভিন্ন বিভাগে প্রতি দিন যত রোগী সাধারণ ভাবে ভর্তি হতেন, এখন হচ্ছেন বড়জোর তার ২০ শতাংশ। জেলা হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ। উত্তর ২৪ পরগনার এক হাসপাতালের সুপার জানালেন, স্বাস্থ্য ভবন যাই বলুক, তাঁরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নিয়ম মেনে রোগীর মধ্যে আশঙ্কাজনক কিছু উপসর্গ দেখলে তবেই জ্বর সারার পরে আরও দু’দিন রাখছেন। নচেৎ ছেড়ে দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন ভুল কিছু বলেনি। জ্বর কমার পরে অনেক সময়েই জটিলতা তৈরি হয়। কিন্তু সেটা সকলের নয়। উপসর্গ চিনে নেওয়াটা খুব জরুরি।’’
বেশির ভাগ সরকারি চিকিৎসকেরই যুক্তি, ডেঙ্গি যে ভাবে ছড়িয়েছে তাতে মানুষ আতঙ্কিত। জ্বর হলেই তাঁরা হাসপাতালে ছুটছেন। কিন্তু সকলের পরিস্থিতি তো এক নয়। কার ভর্তি থাকা দরকার, কার নয়, বিচারের স্বাধীনতাটুকু চিকিৎসকের হাতে থাকাটা দরকার। কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বললেন, ‘‘অনেককে আমরা বলছি, আমরা তো ডিসচার্জ লিখতে পারব না। তাই আপনারাই রিস্ক বন্ডে সই করে বাড়ি চলে যান। না হলে অন্য কোনও সংক্রমণ ধরে যেতে পারে।’’
স্বাস্থ্য ভবন কী বলছে এ ক্ষেত্রে? এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও কিছু চিকিৎসক রোগীকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেন। এতে মৃত্যু বাড়ছে। সেই কারণেই জ্বর ছাড়ার পরেও রোগী ভর্তি রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এতে সাময়িক যত অসুবিধাই হোক, আমরা নিরুপায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy