একটি নয়। দু’ দুটি নিম্নচাপে নাজেহাল পূর্ব থেকে পশ্চিম ভারত।
এতেই রক্ষা নেই। তাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে পাকিস্তান থেকে আসা একটি পশ্চীমী ঝঞ্ঝা। যার প্রভাবে কাশ্মীর পাহাড় ও সংলগ্ন এলাকার অবস্থা সঙ্গীন।
একটি নিম্নচাপ আরব সাগর থেকে উৎপন্ন হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে অতি গভীর নিম্নচাপ হিসেবে রাজস্থানের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার প্রভাবে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে গোটা গুজরাত উপকূল এবং রাজস্থানে। ওই গভীর নিম্নচাপটির ফলে বন্যার মুখোমুখি সৌরাষ্ট্র এবং গুজরাত ঘেঁষা রাজস্থানের বিস্তীর্ণ এলাকা।
অন্য নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছে পূর্বে। বঙ্গোপসাগরে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ উপকূলের কাছে। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে গত তিন দিনে সে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ হয়েছে। আরও শক্তি বাড়িয়ে মঙ্গলবার রাতের দিকে তা অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তার প্রভাবে গোটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থরহরিকম্প। প্রবল বর্ষণে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন নদীর জল প্লাবিত করেছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
রাজস্থানের উপরে থাকা অতি গভীর নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতি অবশ্য এদিন কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। পুণের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দফতরের আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ওই গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে রাজস্থানের ভিতরে ঢুকে যাবে। তার ফলে গুজরাত এবং সংলগ্ন রাজস্থানে বৃষ্টির প্রকোপ শুক্রবার থেকে কমবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা।
তবে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপটির জন্য গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের কপালে আর কত দুঃখ রয়েছে সে ব্যাপারে কোনও আগাম খবরই দিতে পারছে না হাওয়া অফিস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর, এখনও একই স্থানে দাঁড়িয়ে নিম্নচাপটি তার শক্তি বাড়িয়ে যাচ্ছে। এঅ ভাবে কতক্ষণ সে একই স্থানে দাঁড়িয়ে শক্তি বাড়াবে তা বুঝতে পারছেন না আবহবিদেরা। এক আবহবিদের কথায়, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম এদিন সকালেই গভীর নিম্নচাপটি অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বুধবার নাগাদ গতিপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু এখনও তা হওয়ায় আমরাও কিছুটা চিন্তিত। যতো বেশিদিন ধরে নিম্নচাপটি শক্তি বাডা়তে থাকবে ততোই আবহাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’’
এই পরিস্থিতিতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জন্য আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আলিপুর হাওয়া অফিস। তারা জানিয়ে দিয়েছে, যতোক্ষণ না পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপটির ঠিকানা নির্দিষ্ট হচ্ছে ততোদিন বঙ্গোরপসাগরে জারি থাকবে সতর্কবার্তা। মৎসজীবীদের গভার সমুদ্রে যেতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারা আবহাওয়া দফতরে ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কিন্তু কোনও আশার বাণি শোনাতে পারেননি আবহবিদেরা। আরও অন্তত দুই দিন দুশ্চিন্তার মধ্যেই থাকতে হবে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন আহবিদেরা।
দেশের একেবারে উত্তরপ্রান্তে কাশ্মীরের পাহাড়েও প্রবল বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। তবে সেখানে নিন্মচাপের কারিকুরি নেই। আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে আসা পশ্চীমী ঝঞ্ঝা জম্মু-কাশ্মীর, হিমালচল প্রদেশ, সংলগ্ন পঞ্জাবে প্রবল বৃষ্টি দিচ্ছে হত দুই দিন ধরে। ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা নীচের দিকে নামলে গোটা উত্তর ভারতে বৃষ্টি বাড়বে বলে জানিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। আবার রাজস্থানের উপরে থাকা গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে ঢুকে আসবে উত্তর ভারতের দিকেই। তাই আগামী বৃহস্পতি- শুক্রবার থেকে দিল্লি হরিয়ানা, উত্তরপর্দেশেও প্রবল বৃষ্টি নামবে বলে আগাম জানিয়ে রেখেছে দিল্লির মৌসম ভবন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাজস্থান এবং গুজরাতের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে। রাজস্থানের দিসায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গুজরাতের ভুজে ২৫ সেন্টিমিটার, ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে ২০ সেন্টিমিটার ওড়িশার পারাদ্বীপে ১৭ সেন্টিমিটার, দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়ায় ১২ সেন্টিমিটার এবং জম্মুতে ৮ সেন্টিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে মৌসম ভবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy