এ রাজ্য থেকে তাঁদের ঝুলি ভরার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সেই নিরাশায় না ডুবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আসর জমিয়ে রাখলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ!
বিধানসভায় সোমবার ভোট-পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘুরে ঘুরে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বাম বিধায়কদের কাছে এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের জন্য কৌশলে প্রচার চালিয়ে গেলেন খড়গপুরের বিধায়ক দিলীপবাবু। রাজ্যের মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের প্রার্থী মীরা কুমারের নির্বাচনী এজেন্ট ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে পেয়ে বলে রাখলেন, ভিতরে তিনিই থাকবেন। যেখানে ভোট দেওয়ার, যেন দিয়ে দেন। দৃশ্যতই বিড়ম্বনায় পড়ে ফিরহাদ দ্রুত সরে গেলেন সেখান থেকে। দিলীপবাবুর পরের গন্তব্য ছিল বিরোধী দলনেতার ঘর। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আব্দুল মান্নানের কাছে আবেদন জানালেন, যিনি জিতবেন, ভোটটা তাঁকেই দিতে! অন্য কংগ্রেস বিধায়কদের প্রতিও বিজেপি নেতার আর্জি, ভোটটা নষ্ট করবেন না!
বিরোধী দলনেতার ঘরে দেখা করতে এসেছিলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। সঙ্গে কিছু বাম বিধায়ক। তাঁদেরও একই কথা বলেছেন দিলীপবাবু। সুজনবাবুরা পাল্টা বলছিলেন, মোর্চার বিধায়কেরা বিজেপিকে সমর্থন করছেন কি না, সেটা বরং দিলীপবাবু দেখুন। তাতেও থামেননি বিজেপি সভাপতি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘দিল্লির চিন্তা আমার নেই। এ রাজ্য থেকে ৮ জনের ভোট আমাদের বাঁধা। আমার কাজ ওই আটের উপরে ভোট নিয়ে যাওয়া। আমি সেটাই করছি!’’
এই কাজ করতে গিয়েই অবশ্য এ দিন এক প্রস্ত বচসা বেধে গিয়েছিল বিধানসভার অলিন্দে। তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল দিলীপবাবুকে চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, এটা বিজেপির পার্টি অফিস নয়! এখানে এ ভাবে প্রচার করা যায় না। দিলীপবাবু কিন্তু উত্তর দিচ্ছিলেন হেসেই। পরেশবাবুকে তিনি বলেন, মাথা গরম করছেন কেন? পরেশবাবু বলতে থাকেন, ‘‘তুমি একটা ফালতু লোক! ভদ্রতা, সভ্যতা কিছু জানো না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায় এখানে এসেছো!’’ দিলীপবাবু অবশ্য অবিচলিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে না পারলে বন্ধুত্ব করেন কেন?’’
নির্দিষ্ট গোলাপি ব্যালটে রাজ্যের ২৯৪ জন বিধায়ক এবং সবুজ ব্যালটে রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিয়ে তৃণমূলের ৪২ জন সাংসদ এ দিন বিধানসভায় ভোট দিয়েছেন। তৃণমূলের ২১১, কংগ্রেসের ৩৬ ও বামফ্রন্টের ৩১ বিধায়কের প্রত্যেকে ভোট তো দিয়েছেনই। দলত্যাগীরাও সকলে নিজেদের মতো এসে ভোট দিয়ে গিয়েছেন। আর শেষ বেলায় আদালতের সম্মতি হাতে নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ।
রাজ্য থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলেও মীরার জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘হারব জেনেও ভোট দিয়েছি আমরা ১৭টা বিরোধী দল। এটা প্রতিবাদের, প্রতিরোধের ভোট। বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নথিভুক্ত করা দরকার ছিল।’’ আর বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবুর মন্তব্য, ‘‘এখন ভোট মানেই দখলদারি আর পেশির দাপট। গত ৬ বছরে এই প্রথম শান্তিতে, নির্বিঘ্নে একটা ভোট হল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy