বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠক। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তাঁর মাথাব্যথা ফের তা বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিভিন্ন বৈঠকে ইদানীং তিনি তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেন। সতর্ক করেন বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের। পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও কোনও রকম দলাদলি না করতে দলের সর্বস্তরে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকেও নিজের দলের কোন্দলের বিরুদ্ধে একাধিক বার সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ধমক দেন সংশ্লিষ্ট বিধায়ক, নেতা ও জেলার পদাধিকারীদের।
জেলার কেশপুর, ডেবরা, নারায়ণগড়ের মতো এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল চাপা নেই। সেই দলাদলিতে ধাক্কা খায় উন্নয়ন। এ সবে মুখ্যমন্ত্রী যে রুষ্ট এ দিন তা চাপা থাকেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পূর্ত দফতরের নামে নালিশ ঠুকতে যান নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ। তাঁর বক্তব্য ছিল, পূর্ত দফতরের অসহযোগিতায় বেলদায় বাসস্ট্যান্ডের কাজ আটকে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, “তুমি নিজে নিজের সঙ্গে সহযোগিতা করো তো? তুমি, কওসর, মিহিরবাবু আর সূর্য— এই চার জন মিলে একসঙ্গে কাজ করো তো?”
বিধায়ক প্রদ্যোতবাবু, তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা কওসর আলি, দলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্টের মধ্যে আকচাআকচি কারও অজানা নয়। তাই মমতার হুঁশিয়ারি, “পরিষ্কার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি, তোমরা চার জন একসঙ্গে কাজ করবে। কেউ বড় নয়।”
ধমক খেয়েছেন ডেবরার বিধায়ক সেলিমা খাতুনও। তাঁর এলাকায় ‘জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান’-এর বরাদ্দ আসে না বলে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুযোগ করেন সেলিমা। ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “সব চেয়ো না। অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। যেটা জঙ্গলমহলের জন্য শোভা পায় সেটা তোমার জন্য শোভা পায় না। তোমার ডেবরা তো মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা নয়। কেন ভুলভাল করো?” ডেবরাতেও সেলিমা, প্রাক্তন বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি, জেলা নেতা অলোক আচার্য, জেলা পরিষদ সদস্য বিবেক মুখোপাধ্যায়ের পারস্পরিক সুসম্পর্ক নেই। তাই সেলিমাকে মমতার নির্দেশ, “পরিষ্কার বলছি, তুমি, রাধাকান্তবাবু, অলোক এবং বিবেক একসঙ্গে কাজ করবে।” তৃণমূলের কোন্দলে বারবার উত্তপ্ত হওয়া কেশপুরেও এক সঙ্গে কাজ করে শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কে সত্যি ভাল কাজ করছেন, কে নয়, সব যে তাঁর নজরে রয়েছে, তা-ও জানাতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে ধমকে তিনি বলেন, “তুমি শালবনি, গোয়ালতোড়ে নজর দিচ্ছ না। সব দিদি করে দেবে, আর নিজেরা ঘুরে বেড়াবে, এটা হবে না।” মমতার কথায়, “তুমি ফাঁকি দিচ্ছ বলেই তো বললাম। সবাইকে তো বলছি না। যাঁকে বলব, সে বুঝবে, আমার কাছে ইনফরমেশন আছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “নিজেরা লড়াই করবে না, শান্তিতে থাকবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy