Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আহতকে রক্ত দিলেন চিকিৎসকের স্ত্রী

সানাউল্লার রক্তের গ্রুপ ‘ও পজিটিভ’। শনিবার রাতে হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই গ্রুপের রক্ত ছিল না। এ দিকে, ভ্যানচালক সানাউল্লার বাড়ির লোকজন তখনও হাসপাতালে এসে পৌঁছননি। তা হলে কী হবে? অমরেন্দ্র বিড়বিড় করেন, ‘‘আমার স্ত্রীর ও পজিটিভ। দাঁড়াও তো, এক বার ফোন করে দেখি।’’

সৌমি চক্রবর্তী রায়

সৌমি চক্রবর্তী রায়

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:২৮
Share: Save:

পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ডাম্পারের চাকা। তড়িঘড়ি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়েছিল শেখ সানাউল্লাকে (৪০)। হাসপাতালের অস্থি-শল্য বিভাগের চিকিৎসক অমরেন্দ্রনাথ রায় জানিয়ে দিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না। লাগবে অনেক রক্তও।

সানাউল্লার রক্তের গ্রুপ ‘ও পজিটিভ’। শনিবার রাতে হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই গ্রুপের রক্ত ছিল না। এ দিকে, ভ্যানচালক সানাউল্লার বাড়ির লোকজন তখনও হাসপাতালে এসে পৌঁছননি। তা হলে কী হবে? অমরেন্দ্র বিড়বিড় করেন, ‘‘আমার স্ত্রীর ও পজিটিভ। দাঁড়াও তো, এক বার ফোন করে দেখি।’’

স্বামীর ফোন পেয়ে আর দেরি করেননি সৌমি চক্রবর্তী রায়। রেস্তোরাঁর খাবার ফেলে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে এসে রক্ত দেন তিনি। তার পরেই শুরু হয় অস্ত্রোপচার। তবে এত চেষ্টা করেও বাঁচানো
যায়নি বহরমপুরের গোবিন্দপুরের বাসিন্দা সানাউল্লাকে। রবিবার ভোরে তিনি মারা যান।

সানাউল্লার ছেলে ওবাইদুল্লা ইসলাম বলছেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বাবাকে বাঁচানোর খুব চেষ্টা করেছেন। আর ওই ম্যাডামের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’ যা শুনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ‘ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি’ সৌমি বলছেন, ‘‘শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে ছেলেদের রেখেই হাসপাতালে ছুটেছি। আক্ষেপ একটাই, ভদ্রলোককে বাঁচানো গেল না।’’

শনিবার রাতে সানাউল্লা ভ্যান চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বহরমপুরের উত্তরপাড়া মোড়ে একটি ডাম্পারের ধাক্কায় তিনি পড়ে যান। ডাম্পারের চাকা চলে যায় বাঁ পায়ের উপর দিয়ে। পুলিশই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসক অমরেন্দ্রনাথ এ দিন অন-কল ডিউটিতে ছিলেন। সন্ধ্যায় স্ত্রী, দুই ছেলে ও বাবা-মাকে নিয়ে বহরমপুরের একটি রেস্তোরাঁতে গিয়েছিলেন। জরুরি বিভাগ
থেকে ফোন পেয়ে তিনি হাসপাতালে চলে আসেন। রক্তের জন্য ফোন করেন স্ত্রী সৌমিকে।

তবে এই ঘটনার পরে হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তশূন্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সানাউল্লার ছেলে ওবাইদুল্লা বলছেন, ‘‘এত বড় হাসপাতালে রক্তই বা থাকবে না কেন? ম্যাডাম রক্ত না দিলে তো বাবা তখনই শেষ হয়ে যেত।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কম হওয়ার কারণেই এমন রক্তের সঙ্কট। আগামী দিনে শিবিরের সংখ্যা না বাড়ালে সমস্যা মেটানো কঠিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Humanity Blood Donation Doctor Wife Injured
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE