লিখিত নির্দেশ জারি করেছিলেন খোদ স্বাস্থ্য সচিব। কিন্তু নজিরবিহীন ভাবে কার্যত কোনও মেডিক্যাল কলেজই তা কার্যকর করেনি! মাঝখানে কেটে গিয়েছে ১৩টি দিন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে সম্প্রতি মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে ৩০ জন শিক্ষক-চিকিৎসককে বদলি করা নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের অফিসের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার অফিসের। তার জেরেই গত ২৪ জুলাই স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মার জারি করা নির্দেশ সত্ত্বেও প্রায় কোনও হাসপাতালই বদলির তালিকায় নাম থাকা শিক্ষক-চিকিৎসকদের ছাড়েনি।
স্বাস্থ্য ভবনে বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এমসিআই-এর হাত থেকে মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গের ‘হারানো’ আসন ফিরে পেতে বিকল্পের ব্যবস্থা না-করেই তাঁদের শিক্ষক-চিকিৎসকদের সেখানে পাঠানো হলে তাঁরাও এমসিআই-এর পরিদর্শনে ফেল করবেন। একাধিক মেডিক্যাল কলেজ তো স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশের পরোয়া না-করে চলতি সপ্তাহেই এমসিআই-পরিদর্শনের সময়ে বদলির তালিকায় নাম থাকা চিকিৎসকদেরই নিজেদের চিকিৎসক হিসেবে দেখিয়েছে।
শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতির জন্য জুনে ৫০টি করে আসন কাটা গিয়েছে মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের। ওই আসন পুনরুদ্ধারের জন্য অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিক্ষক-চিকিৎসকদের সেখানে পাঠিয়ে অন্য হাসপাতালগুলিকেও আসন হারানোর মুখে ঠেলে দিতে রাজি ছিল না স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার অফিস। কিন্তু স্বাস্থ্য সচিবের অফিসের যুক্তি ছিল, যে কলেজ বেশি বিপদে, আগে তাকে উদ্ধার করতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতরের প্রছন্ন সমর্থন পেয়েই এত দিন বদলির তালিকায় থাকা চিকিৎসকদের ছাড়েনি মেডিক্যাল কলেজগুলি। কিন্তু তাঁর নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি জেনে স্বাস্থ্য সচিব সম্প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অবিলম্বে নির্দেশ কার্যকর করতে বলেন। তার পরেও সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজগুলি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে বদলি কার্যকর না হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে বহু বার ফোন করা হলেও স্বাস্থ্য সচিব তা ধরেননি, এসএমএসের উত্তর দেননি। আর স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমাকে দয়া করে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।’’
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর, নীলরতন প্রভৃতি হাসপাতাল থেকে শিক্ষক-চিকিৎসকদের মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গে বদলি করা হয়েছে। ন্যাশনাল থেকে সার্জারি এবং অ্যানাস্থেশিয়ার দু’জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়। কিন্তু ন্যাশনালের অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, ‘‘এই সপ্তাহেই দু’দিন আমাদের এমসিআই-পরিদর্শন ছিল। ওই দু’জনকে ছাড়া হয়নি এবং ওঁদের আমাদের শিক্ষক হিসেবেই দেখিয়েছি।’’ এর জন্য কারণ দর্শানোর মুখে পড়তে হবে না? অধ্যক্ষের উত্তর, ‘‘প্রশ্ন করা হলে উত্তর দিয়ে দেব।’’
বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের মাইক্রোবায়োলজির মাত্র দু’জন শিক্ষক। তার মধ্যে একমাত্র প্রোফেসরকে মেদিনীপুরে বদলি করেছে বিকল্প কাউকে না এনেই। আমরা ইউজি কোর্সের অনুমোদন জোটানোর চেষ্টা করছি। শিক্ষকের অভাবে পিজি কোর্সের অনুমোদন আটকে গিয়েছে। স্বাস্থ্য সচিবকে তো বুঝতে হবে, এক জনকে বাঁচাতে হিয়ে অন্য জন মারা পড়ছে।’’
মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গে সব চেয়ে বেশি শিক্ষক-চিকিৎসক বদলি হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ থেকে। তিন জন মেডিসিনের, দু’জন পেডিয়াট্রিক্সের। মেডিসিন বিভাগ স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছে, চিকিৎসক কম থাকায় গত বছর মেডিসিনের আসন ২৩ থেকে ১৫ হয়ে গিয়েছে। আরও তিন জন শিক্ষককে ছেড়ে দিলে তা ১২ হয়ে যাবে। তাতে পিজিটি এত কমে যাবে যে, বিভাগ চালানো যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy