Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রেফতার কাল্লু, পুলিশ-নেতা-মন্ত্রীরা কোথায়, ফুঁসছে রসপুঞ্জ

দুর্ঘটনার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে পুলিশের হাতে এল ঘাতক গাড়ির চালক কাল্লু মোল্লা। তার বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। তবে রসপুঞ্জ এখনও জ্বলছে। উত্তাপ কমার কোনও লক্ষণ বুধবার বিকেল পর্যন্ত নেই। বরং, এ দিন দুপুরে রসপুঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে ক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়।

জনরোষ। বুধবার, বিষ্ণুপুরের রসপুঞ্জে ছবিটি তুলেছেন দীক্ষা ভুঁইয়া। ধৃত কাল্লু মোল্লা। — নিজস্ব চিত্র

জনরোষ। বুধবার, বিষ্ণুপুরের রসপুঞ্জে ছবিটি তুলেছেন দীক্ষা ভুঁইয়া। ধৃত কাল্লু মোল্লা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩০
Share: Save:

দুর্ঘটনার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে পুলিশের হাতে এল ঘাতক গাড়ির চালক কাল্লু মোল্লা। তার বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। তবে রসপুঞ্জ এখনও জ্বলছে। উত্তাপ কমার কোনও লক্ষণ বুধবার বিকেল পর্যন্ত নেই। বরং, এ দিন দুপুরে রসপুঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে ক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়।

মঙ্গলবার আগুন দেওয়া হয়েছিল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে, আর ফাঁড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল, জ্বালানো হয়েছিল একের পর এক পুলিশের গাড়ি। এ দিন পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছে অবাধে। কারণ, এ দিন গোটা তল্লাটে কার্যত পুলিশের টিকিটিরও দেখা মেলেনি।

ঘাতক গাড়ির চালক কাল্লু কেন ধরা পড়ল না, সেটা অবশ্যই জনতার ক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল। তাই, এ দিন দুপুরে কাল্লু পুলিশের হাতে আসার পরে প্রশাসনের একাংশ মনে করেছিল, ক্ষোভের আগুন এ বার নিভবে। তা কিন্তু হয়নি। উল্টে ক্ষোভের মাত্রা বেড়েছে। প্রশাসনের কাছে অন্য একগুচ্ছ দাবি রেখে বাখরাহাট রোডের একটা বড় অংশ এ দিনও অবরোধ করে রেখেছে জনতা।

রাস্তা জুড়ে বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলা। স্কুল, দোকানপাট বন্ধ। এলাকার মানুষের দাবি, ঘাতক গাড়ির চাকায় মৃত ও আহতদের প্রত্যেকের পরিবারের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এলাকায় মদ্যপান ও ইভ-টিজিং বন্ধ করতে হবে। বাখরাহাট রোড ও রসপুঞ্জ মোড় যেন ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারির আওতায় থাকে, এটাও দাবি সাধারণ মানুষের।

একাধিক বাসিন্দার কথায়, ‘‘একটা মাতাল স্কুলের সামনে ইচ্ছা করে গাড়ি চাপা দিয়ে এতগুলো মানুষের ক্ষতি করল। এত বড় ঘটনায় কোনও নেতা-মন্ত্রীর দেখা নেই! অথচ, পাড়ার পুজোর ফিতে কাটতেও নেতারা চলে আসেন।’’ আর এক জনের কথায়, ‘‘চোলাই খেয়ে মৃতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলে দুর্ঘটনাগ্রস্তেরা কেন পাবেন না? যেখানে এত জন স্কুলপড়ুয়ার ক্ষতি হল!’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে ঘরে ঘরে ঢুকে মহিলাদের শাসিয়ে গিয়েছে পুলিশ— ‘আলো নিভিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।’ পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কিন্তু পুলিশকে এ দিন ওই তল্লাটে দেখা যায়নি কেন?

দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা গেলেই মানুষ আরও ক্ষিপ্ত হচ্ছেন। তাই, আমরা বুধবার দিনভর রসপুঞ্জে যাইনি। তা ছাড়া, আমাদের বাহিনীর একটা বড় অংশ ভাঙড়ে।’’ ওই অফিসার বলেন, ‘‘রসপুঞ্জে দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত মূল অভিযুক্ত কাল্লু মোল্লা আমাদের হাতে এসেছে। মানুষের ক্ষোভ আপনা থেকেই কমবে। তবে এটাও ঠিক, কোনও জায়গায় দিনের পর দিন আইনশৃঙ্খলা থাকবে না, সেটা বরদাস্ত করা যায় না।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, পুলিশ যাতে এলাকায় ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে এ দিন সন্ধ্যার পরে রাস্তায় ইট উপর ইট সাজিয়ে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়।

ঘাতক গাড়ির চালক কাল্লুর বাড়ি বনগ্রামে। রসপুঞ্জ থেকে এক কিলোমিটার দূরে। পুলিশ সূত্রের খবর, পরিচিত কয়েক জনের মাধ্যমে মঙ্গলবার থেকে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করার ফলে কাল্লু এ দিন ধরা দিয়েছে। তবে পুলিশের হাতে কাল্লু আসার পরে বনগ্রামের পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশ পাল্টা দাবি তোলেন, ‘কাল্লু ভাল ছেলে। ভুল করে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।’ যদিও ‘ভাল ছেলে’ কাল্লুর গাড়ির চাকার তলায় মা ও ছেলের প্রাণ তো গিয়েছেই, সেই সঙ্গে জখম ছ’জনের মধ্যে ছ’বছরের অনুশ্রী এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। রসপুঞ্জের বহু মহিলা এ দিন অভিযোগ করেছেন, দুপুরে তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোলে অনেক সময়েই কাল্লুর অভব্য আচরণের মুখে পড়তেন এবং প্রতিবাদ করলে কাল্লু তাঁদের বাড়িতে বোমা মারার হুমকি দিত!

এ দিন আলিপুর আদালতে কাল্লুর আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় মিশ্র জানান, কাল্লু আত্মসমর্পণ করার পরে তাকে ১৫ দিন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। পরে পুলিশের আবেদনে বিচারক তাকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে কাল্লুর মুখ ঢাকা ছিল না। তবে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর সে দেয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rasapunja Kallu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE