Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
তলব এ বার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-কে

সারদা চক্রান্তের শিকড় খুঁজতে পদক্ষেপ ইডি-র

একটি সংস্থা ইতিমধ্যেই জেরার সামনে পড়েছে। সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের উৎস সন্ধানে সেবি’র মতো আর্থিক ক্ষেত্রের আর এক নজরদারও এ বার পড়তে চলেছে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। পশ্চিমবঙ্গে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ম্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকাও যাচাই করতে মাঠে নামছে কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

একটি সংস্থা ইতিমধ্যেই জেরার সামনে পড়েছে। সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের উৎস সন্ধানে সেবি’র মতো আর্থিক ক্ষেত্রের আর এক নজরদারও এ বার পড়তে চলেছে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। পশ্চিমবঙ্গে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ম্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকাও যাচাই করতে মাঠে নামছে কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

সূত্রের খবর: সল্টলেকের ইডি-দফতরে তলব করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক অফিসারকে সমন পাঠানো হয়েছে। পুজোর আগেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে ক্রমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আরও কিছু অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এই কেলেঙ্কারির নেপথ্যে যে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে, তার শিকড় খুঁজে বার করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে জন্য আর্থিক ক্ষেত্রের অন্যতম দুই নিয়ন্ত্রক ও নজরদার সংস্থা সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিষয়টির সঙ্গে কতটা জড়িত, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। সিবিআইয়ের পাশাপাশি এ ব্যাপারে ইডি-কে নিজস্ব দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত তাদের দ্রুত তদন্ত শেষ করতে বলে।

সেই মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী-সহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি এবং সিবিআই। কয়েক জনকে সিবিআই নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে। এ দিন যেমন ওড়িশার এক টিভি চ্যানেলের কর্তা মনোজ দাস এবং একটি সংবাদপত্রের মালিক মধুসূদন মহান্তিকে গ্রেফতার করেছে তারা। এ ছাড়াও সেবি-অফিসারদেরও ডেকে পাঠিয়ে এক দফা জেরা করেছে ইডি। এ বার তারা নজর দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে। কেন?

ইডি-সূত্রের বক্তব্য: যে জাতীয় প্রকল্পকে সামনে রেখে সারদার মতো লগ্নিসংস্থা বাজার থেকে টাকা তুলেছে, ১৯৯২-এর সেবি-আইনের ১১ নম্বর ধারা মোতাবেক তা ‘কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম, যা চালাতে হলে সেবি-রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন আবশ্যিক। কিন্তু সেই নিয়ম ঠিকঠাক মানা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সারদা আমানতকারীদের থেকে সরাসরি টাকা নিয়ে চড়া সুদ-সমেত ফেরতের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আবার টাকা জমা নিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল। একই ভাবে রাজ্যের আর একটি বড়সড় অর্থলগ্নি সংস্থা মানুষের থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পে সুবিধাদানের আশ্বাস দিয়েছে। বস্তুত প্রাথমিক তদন্তে ইডি’র দাবি, বিভিন্ন প্রকল্প সামনে রেখে ও অবাস্তব মুনাফার টোপ ঝুলিয়ে ওই সংস্থাটি সারদার চেয়েও বেশি আমানত বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে। আর সারদার মতোই কারবারের জাল ছড়িয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তাদের অফিসে হানা দিয়ে কয়েক হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে ইডি। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ওই সংস্থাটির সঙ্গেও নানা ভাবে সমাজের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত, যাঁরা কিনা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে সংস্থার কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

এবং সারদার মতো এমন সব লগ্নিসংস্থার এ হেন রমরমা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জ্ঞাতসারেই হয়েছে কি না, ইডি তা জানতে চায়। জানতে চায়, লগ্নি-কারবারে নামার আগে এরা প্রথা মেনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আদৌ আবেদন করেছিল কি না। আরবিআই যদি অনুমতি না-দিয়ে থাকে, তা হলে দীর্ঘ দিন ধরে সংবাদপত্র-টিভিতে সংস্থাগুলির ফলাও বিজ্ঞাপন দেখেও তারা কেন হাত গুটিয়ে বসে ছিল, ইডি’র সেটাও জিজ্ঞাস্য। পাশাপাশি ইডি’র তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে চান, সংস্থাগুলির কাজ-কারবারে সাধারণ আমানতকারীদের টাকা মার যাওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাজ্য সরকারকে আদৌ সতর্ক করেছিল কি না।

এ দিকে কেন্দ্রীয় কপোর্রেট বিষয়ক মন্ত্রকে পেশ করা তদন্ত-রিপোর্টে সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও) সম্প্রতি দাবি করেছে, সারদার অন্তত দু’শো কোটি টাকা আমেরিকা ও আরব মুলুকে পাচার হয়েছে। ফলে পুরো কেলেঙ্কারিটি ব্যাপকতর মাত্রা পেয়েছে। এমতাবস্থায় ইডি-ও দাবি করেছে, তদন্তের কোনও ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানো হবে না। “লগ্নিসংস্থাগুলির সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যোগাযোগ থেকে থাকলে মাধ্যম যারা ছিল, সকলকে খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে।” রবিবার মন্তব্য করছেন ইডি-র এক কর্তা।

ইডি-সূত্রের খবর, ‘নজরদারের’ ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করা হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে সেবি-র এক অফিসারকে ডেকেও এমন নানা প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ইডি’র সামনে মুখ খুলতে চাননি। উত্তর পেতে ইডি তাই সেবি-র আরও উঁচুতলায় যোগাযোগ করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE