বধূ নির্যাতনের অভিযোগে ছেলেকে ধরতে এসে বাবাকে মারধর করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। ছেলেকে নিয়ে পুলিশ বেরিয়ে যাওয়ার পরেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
নদিয়ার চাকদহ থানার পিটুলিতলা এলাকার এই ঘটনায় শনিবার সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। বৃদ্ধের দেহ আটকে পথ অবরোধ করা হয়। এসডিপিও (কল্যাণী) উত্তম ঘোষ এবং চাকদহ থানার আইসি পিন্টু সাহা কমব্যাট ফোর্স নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। মৃতদেহ উদ্ধার করে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হয়। তবে রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। বৃদ্ধের ছেলে এ দিনই জামিনে ছাড়া পেয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৃতের নাম ইদ্রিস মণ্ডল (৬০)। তাঁর তিন ছেলে, তিন মেয়ে। বছর দেড়েক আগে ছোট ছেলে আব্দুল আলিম মণ্ডলের বিয়ে হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার রাজাপুরের রোজিনা খাতুনের সঙ্গে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। কিছু দিন শ্বশুরবাড়িতে কাটানোর পর রোজিনা বাপের বাড়িতে ফিরে বধূ নির্যাতন ও খুনের হুমকির অভিযোগ করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ গাইঘাটা ও চাকদহ থানার দু’টি গাড়ি আব্দুলের বাড়িতে যায়। জনা দশেক পুলিশকর্মী নেমে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢোকেন। আব্দুল ছিল ঘরে। বারান্দার শুয়েছিলেন তার বাবা-মা। কয়েক জন কনস্টেবল আব্দুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তার বাবা বাধা দেন। তার মা হালিমা বিবির অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধর করে। ছেলের পিছু-পিছু তিনিও ছুটে যান পুলিশের গাড়ির দিকে। তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। গাড়ি দু’টো বেরিয়ে যাওয়ার পরে বাড়িতে ফিরে তিনি দেখেন, মারা গিয়েছেন স্বামী। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।
হালিমার অভিযোগ, “আমার স্বামী নির্দোষ। পুলিশের মারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।” এসডিপিও (বনগাঁ) অনিলকুমার রায় অবশ্য দাবি করেন, “বৃদ্ধকে মারধর করার অভিযোগ ঠিক নয়। ছেলের শোকে বা অসুস্থতার কারণে ওঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।” এসডিপিও (কল্যাণী) উত্তম ঘোষ বলেন, “কী কারণে এই মৃত্যু, তা জানতে দেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি।”
ছেলের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও হালিমা বিবি তা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “আমার ছেলে ঘরজামাই থাকতে রাজি ছিল না। কিন্তু বৌমা তাকে বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকার জন্য জোর করত। এই নিয়ে তাদের মধ্যে গণ্ডগোল ছলছিল। এরই মধ্যে পুলিশ এসে ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়।”
এসডিপিও (বনগাঁ) অবশ্য বলেন, “ওই যুবকের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ভয় দেখানো ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাই নিয়ম মেনেই চাকদহ থানার সাহায্য নিয়ে ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” শনিবার তাকে বনগাঁ আদালতে তোলা হয়। তবে ইতিমধ্যে বাবার মৃত্যু হওয়ায় সরকারি আইনজীবী তার জামিনের বিরোধিতা করেননি। বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy