Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যন্ত্রের জিভে-নাকে চাল ও চায়ের গুণ বিচার

যন্ত্রমানব অনেক আগে থেকেই খিদমতগারি করছে মানুষের। এ বার মানুষের নাক বা ঘ্রাণশক্তি এবং জিভ বা আস্বাদনশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এসে গেল যন্ত্রনাসিকা এবং যন্ত্ররসনা। তবে মানুষের উপকারই তাদের লক্ষ্য। চা কিংবা চালের স্বাদ বা গন্ধের আসল-নকল বিচারে মানুষের নাক বা জিভের শক্তি যেখানে শেষ, এই সব নতুন যন্ত্রের খেল্ শুরু সেখান থেকেই। যন্ত্ররসনায় চা বা চাল দিলেই সে বলে দেবে, ওই পণ্য কোন মানের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

যন্ত্রমানব অনেক আগে থেকেই খিদমতগারি করছে মানুষের। এ বার মানুষের নাক বা ঘ্রাণশক্তি এবং জিভ বা আস্বাদনশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এসে গেল যন্ত্রনাসিকা এবং যন্ত্ররসনা। তবে মানুষের উপকারই তাদের লক্ষ্য।

চা কিংবা চালের স্বাদ বা গন্ধের আসল-নকল বিচারে মানুষের নাক বা জিভের শক্তি যেখানে শেষ, এই সব নতুন যন্ত্রের খেল্ শুরু সেখান থেকেই। যন্ত্ররসনায় চা বা চাল দিলেই সে বলে দেবে, ওই পণ্য কোন মানের। উৎকৃষ্ট না নিকৃষ্ট। নাকি মাঝারি মানের। আবার চা বা চাল যন্ত্রনাসিকার সামনে ধরলে গন্ধ বিচার করে একই ভাবে সংশ্লিষ্ট পণ্যের গুণমান জানিয়ে দেবে সে।

খাদ্যশস্যে ভেজাল সারা দেশেই একটা বড় সমস্যা। এই অবস্থায় সকাল-সন্ধ্যায় যে-দু’টি জিনিস আমাদের না-হলেই নয়, সেই চাল আর চায়ের গুণমান যাচাইয়ের জন্য যন্ত্রনাসিকা আর যন্ত্ররসনা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং (সিড্যাক)’-এর কলকাতা শাখা। তাদের কোনওটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইলেকট্রনিক নোজ অ্যান্ড ভিশন’ বা ইনোভিশন, কোনওটির নাম ‘ই-টাং’ বা বৈদ্যুতিন জিভ। চালের গুণমান বিচার করবে যে-যন্ত্র, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অন্নদর্পণ’।

‘ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া’ নিয়ে সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে সিড্যাকের কলকাতা শাখার এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অসিতকুমার নাথ বলেন, এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। তারা যন্ত্র তৈরি করে বাজারে ছাড়বে। তবে সংস্থার কর্তারা জানান, সরকার চাইলে এই সব যন্ত্র সরকারি সংস্থাকে দিয়েও তৈরি করাতে পারে।

এই যন্ত্র তৈরি করে লাভ কী?

সিড্যাকের কর্তারা বলছেন, বাজারে সুগন্ধি চাল ও চায়ে প্রচুর ভেজাল মেশানো হয়। তার ফলে অনেক নিম্ন মানের জিনিসও বিক্রি হয় চড়া দামে। ক্রেতারা ক্রমাগত ঠকতেই থাকেন। এই সব যন্ত্র সেই সমস্যার ক্ষেত্রে মুশকিল আসানের ভূমিকা নেবে। ভেজাল ধরতে পারবে।

কী ভাবে ভেজাল ধরবে?

দুর্গন্ধ পেলে মানুষ নাক কোঁচকায়। একই ভাবে বিস্বাদ অনুভূত হলে মুখ বিকৃত করে মানুষ। সিড্যাকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, মানুষের নাক ভেজালের গন্ধ ধরতে পারে না। এই যন্ত্রনাসিকার বিশেষ ‘সেন্সর’ তা ধরে দেবে। তবে তার কাজের ভঙ্গি অন্য রকম। চা বা চালে কোনও কৃত্রিম গন্ধ মেশানো থাকলে ওই যন্ত্র কোনও ‘সাড়া’ই দেবে না। তখন বুঝতে হবে, ওই চাল বা চায়ে কৃত্রিম কোনও গন্ধ মেশানো হয়েছে। ওই সব পণ্যে আসল গন্ধ থাকলে সেটা কোন শ্রেণির, যন্ত্র সেটা বলে দেবে। আসলে আগে থেকেই যন্ত্রের মগজে পুরে দেওয়া হবে বিভিন্ন স্তরের গন্ধের প্রোগ্রাম। যন্ত্রনাসিকার সামনে চা বা চাল রাখা হলে মগজ-আবদ্ধ গন্ধের সঙ্গে মিলিয়ে সে বলে দেবে, কতটা গুণ রয়েছে ওই পণ্যের। একই ভাবে স্বাদের প্রোগ্রাম ভরা থাকবে যন্ত্ররসনার মস্তিষ্কে। যন্ত্রের জিভে চা বা চাল দিলে সে বলে দেবে, ওই পণ্য স্বাদের দিক থেকে কোন মানের।

এই যন্ত্র নিয়ে রাজ্যের কৃষি দফতরের সঙ্গে কথা বলেছেন সিড্যাকের স্থানীয় কর্তারা। এ রাজ্যের গোবিন্দভোগ, তুলাইপাঞ্জির মতো সুগন্ধি চালের উপরে এই যন্ত্র পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারও করা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

সিড্যাকের কলকাতা শাখার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর নবারুণ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এই যন্ত্র ব্যবহার করলে প্রকৃত পণ্যের বিক্রেতা-চাষিরা বাজারে ন্যায্য দাম পাবেন। সরকার ইচ্ছে করলে চা ও সুগন্ধি চাল বিক্রির ক্ষেত্রে এই যন্ত্রের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করতে পারে।’’

কৃষি ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই ব্যবহার করেছে সিড্যাক। তারা জানিয়েছে, রেশমকীটের পেব্রিন নামে এক ধরনের রোগ হয়। কীটের সেই রোগ রয়েছে কি না, তা জানার জন্য ‘পেব্রিন-ও-স্কোপ’ নামে একটি যন্ত্র তৈরি করেছিল ওই সংস্থা। সেই যন্ত্রে লাগানো অতিক্ষুদ্র ক্যামেরা রেশমমথের ছবি তুলে রোগ বিচার করতে পারে। তার ফলে রেশমচাষিরা রোগাক্রান্ত মথ চিহ্নিত করতে পারেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ঝাড়খণ্ডের রেশমচাষিদের এই প্রযুক্তি দেওয়া হয়েছে।

সিড্যাক এ দিন জানায়, ছোটদের ডায়াবেটিস চিহ্নিত করার জন্যও একটি যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিশেষ ধরনের ক্যামেরা তৈরির কাজও চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE