Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি ধূপগুড়িতে

মাধ্যমিকের শেষ দিন জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল মেয়েটি। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আসন পড়েছে তার। যাওয়ার সময় হঠাৎই তার পথ আটকে দাঁড়ায় কয়েক জন মহিলা। প্রশ্ন, স্থানীয় এক যুবকের বিয়ের প্রস্তাব কেন বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে সে? কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি।

ধৃত অনুকূল মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত অনুকূল মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

রাজকুমার মোদক
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

মাধ্যমিকের শেষ দিন জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল মেয়েটি। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আসন পড়েছে তার। যাওয়ার সময় হঠাৎই তার পথ আটকে দাঁড়ায় কয়েক জন মহিলা। প্রশ্ন, স্থানীয় এক যুবকের বিয়ের প্রস্তাব কেন বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে সে? কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি। অভিযোগ, গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয় মেয়েটিকে। শ্লীলতাহানিও করা হয় বলে অভিযোগ। তাকে বাঁচাতে এসে মার খান তার মা ও ভাইও। শেষে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় মেয়েটিকে।

হাসপাতালের বেডে শুয়েই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটি। যুবকটিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

ধূপগুড়িতেই সালিশি সভায় বাবাকে অপমানের প্রতিবাদ করায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল গত বছর। তারপরে এ দিন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নিগ্রহ করায় এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে।

শহর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রী সকাল দশটা নাগাদ ভাইয়ের সাইকেলে বসেই পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে রওনা হয়। অভিযোগ, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই রাস্তার উপরেই কয়েকজন মহিলা ওই ছাত্রীর রাস্তা আটকে দাঁড়ান। বচসা শুরু হয়। এলাকার আরও কয়েক জন মহিলাও পৌঁছে গেলে রাস্তায় বেশ ভিড় দাঁড়িয়ে যায়। ওই ছাত্রীকে চুলের মুঠি ধরে সাইকেল থেকে টেনে নামিয়ে তখন বেধড়ক মারধর করে ওই মহিলারাই। প্রহৃত হয় তার ভাইও। তাদের মা ছুটতে ছুটতে ঘটনাস্থলে চলে এলে, তাঁদের তিন জনকেই এরপরে গাছের সঙ্গে বেঁধে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মারা হয়। সে সময়েই এক যুবক এবং তার বন্ধুরা ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে দেওয়ার ও ধর্ষণের হুমকি দেয় বলে ওই কিশোরীর অভিযোগ। পুলিশকে ওই ছাত্রী বলেছে, ‘‘ওরা বলতে থাকে, জামাকাপড় সব খুলে নেব। সবাই তোকে দেখবে। ধর্ষণ করে শিক্ষা দেবে বলেও হুমকি দেয়। ভয়ে আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। মাথা ঘুরতে শুরু করে। তার পরে কিছু মনে নেই।’’

প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে এই কাণ্ড চলার পরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের নীরেন রায় ও অন্য বাসিন্দারা এসে ওই তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে গিয়ে হুঁশ ফিরলে পরীক্ষা দিতে চায় ছাত্রীটি। হাসপাতালেই তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সে যে স্কুলের ছাত্রী তার প্রধানশিক্ষক অমিতকুমার দে বলেন, ‘‘এত কিছুর পরেও যে ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে, তাতে তার সাহসকে কুর্নিশ জানাই।’’

বিকেলে পুলিশ মূল অভিযুক্ত অনুকূল মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। সিপিএমের নীরেনবাবুর দাবি, মারধরে জড়িতরা সকলেই তৃণমূল কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত, সে কারণেই পুলিশ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি। তবে জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, ‘‘পুলিশ দেরি করেনি। ছাত্রীর বয়ান নেওয়া হয়েছে।’’

অভিযোগ, এলাকার এক যুবক বেশ কিছু দিন আগে ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে রাজি না হওয়াতেই এ দিন হামলা করা হয়। অভিযুক্তের পরিবারের অবশ্য দাবি, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাদের দাবি, পড়শির ছাগল নিয়ে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। তাতে কিছু বচসা হয় মাত্র। তৃণমূলের জেলা কমিটির সম্পাদক গুড্ডু সিংহ অবশ্য বলেছেন, ‘‘অভিযুক্তরা তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত নয়। আর যে যা দল করুক, অভিযুক্তদের শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE