Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কমিশন খেও না, প্রশাসনিক বৈঠকে বিধায়ককে ভর্ত্সনা মমতার!

এ দিন তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজের ওই বৈঠকে কিছুটা আবদারের সুরে চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত (তপন) মজুমদার বলতে শুরু করেন, “চুঁচুড়ায় আমি একটা স্টেডিয়াম করছি। বাজেট ২১ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি রাজ্যসভার এক সাংসদ দিয়েছেন। কাজ শেষ করতে আরও টাকা প্রয়োজন।”

প্রার্থনা: প্রশাসনিক বৈঠকের আগে তারকেশ্বর মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রদীপ আদক।

প্রার্থনা: প্রশাসনিক বৈঠকের আগে তারকেশ্বর মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রদীপ আদক।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৪:৩৪
Share: Save:

দু’দিন আগে ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি দলের নেতাদের দাঁড় করিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। বৃহস্পতিবার হুগলির প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দাগলেন দলের এক শ্রেণির নেতার ‘কমিশন’ খাওয়া নিয়ে।

এ দিন তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজের ওই বৈঠকে কিছুটা আবদারের সুরে চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত (তপন) মজুমদার বলতে শুরু করেন, “চুঁচুড়ায় আমি একটা স্টেডিয়াম করছি। বাজেট ২১ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি রাজ্যসভার এক সাংসদ দিয়েছেন। কাজ শেষ করতে আরও টাকা প্রয়োজন।”

স্টেডিয়ামের বাজেট শুনেই মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ সপ্তমে, ‘‘আর কোনও কাজ হবে না নাকি? স্টেডিয়াম করতে অত টাকা? পাব কোথায়?” জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলতে শুরু করেন,“না ম্যাডাম, ১৪ কোটি টাকাতেই স্টেডিয়াম হয়ে যাবে।” এই কথোপকথনের মাঝেই ফের বিধায়ক অসিতবাবু উঠে বলেন, “না দিদি, টাকা কিন্তু লাগবে। অত কম টাকায় (১৪ কোটি) হবে না।” এ বার বিধায়কের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ, ‘‘একদম বাজে কথা বলবে না। কমিশন খেও না। তা হলেও স্টেডিয়ামটা হয়ে যাবে। সব কিছুর একটা সীমা আছে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে বিধায়ক হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি আর কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে পড়েন নিজের আসনে। উপস্থিত সকলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করেননি। জেলাশাসকের দিকে রীতিমতো আঙুল তুলে তিনি বলতে থাকেন, “পাঁচ কোটির মধ্যে ডিপিআর তৈরি করো। আমি কোনও কাটমানি বা কমিশন দেব না।”

আরও পড়ুন: ছাত্রছাত্রীদের সামনে ধমক উপাচার্যকেই

কিন্তু এতটা অগ্নিশর্মা হয়ে কেন উঠলেন মমতা?

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকারি প্রকল্পে দলের এক শ্রেণির নেতার ‘কাটমানি’ খাওয়ার কথা ইদানীং নানা সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কানে আসছে। এর ফলে, ঠিকাদারেরা যে নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে কাজ করতে পারছেন না, সেই অভিযোগও মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত পাচ্ছিলেন। সরকারি প্রকল্পকে ঘিরে জেলায় জেলায় নানা অনিয়ম যে শত চেষ্টাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। এ দিন সেই বিরক্তিরই চরম প্রকাশ ঘটেছে। হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন তিনি।

এ দিন বিধায়ক অসিতবাবু তোপের মুখে পড়েছেন ঠিকই, কিন্তু বাদ যাননি অন্য অনেক নেতাও। মমতা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন সরকারি কাজের ক্ষেত্রে কোনও রকম অনৈতিকতা তিনি বরদাস্ত করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জেলার যা কাজের অনুমোদন হবে তার বেশিরভাগটাই দুই তপন (তপন দাশগুপ্ত এবং তপন মজুমদার), বেচা (বেচারাম মান্না) আর মেহেবুবরা (মেহেবুব রহমান) ভাগ করে নেবে, তা আর হবে না। এখন আর নেতাদের কোনও কথায় জেলায় কাজ করব না। এখন থেকে কর্মীদের কথায় কাজ হবে।” ওই নেতাদের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কড়া সুরেই বলেন, ‘‘তোমরা যাদের পছন্দ করো, তাঁরাই শুধু কাজ পাবে, অন্যেরা পাবে না— তা হবে না। এ সব করতে গিয়ে খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়ার মতো জায়গায় উন্নয়ন সমান ভাবে হচ্ছে না।”

সামনে পঞ্চায়েত ভোট। উন্নয়নের প্রশ্নে যে তিনি কাউকে রেয়াত করবেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। সতর্ক করে দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তাদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE