Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লোকসানেই বন্ধ কারখানা, বলছে শালিমার

অগ্নিকাণ্ড তো গত মার্চের ব্যাপার! হাওড়ার শালিমার পেন্টস আর্থিক সমস্যায় পড়েছিল তার অনেক আগেই। এবং সেই সমস্যার মূলে আছে ক্রমাগত লোকসান। কারখানা-কর্তৃপক্ষ রবিবার সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের রং বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। তাই ব্যাপক লোকসানের মুখে শালিমার। অবস্থা এমনই যে, বাজার থেকে নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগও নেই।

কারখানার সামনে ধর্নায় কর্মীদের পরিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

কারখানার সামনে ধর্নায় কর্মীদের পরিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

অগ্নিকাণ্ড তো গত মার্চের ব্যাপার! হাওড়ার শালিমার পেন্টস আর্থিক সমস্যায় পড়েছিল তার অনেক আগেই। এবং সেই সমস্যার মূলে আছে ক্রমাগত লোকসান। কারখানা-কর্তৃপক্ষ রবিবার সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের রং বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। তাই ব্যাপক লোকসানের মুখে শালিমার। অবস্থা এমনই যে, বাজার থেকে নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগও নেই।

লোকসান ঠিক কতটা?

কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গত বছরেই শালিমারের লোকসান হয়েছে দু’কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এ দিনই প্রথম ই-মেল করে এটা স্বীকার করে নিয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন ওই সংস্থা। তারা জানাচ্ছে, শ্রমিকদের বেতন দিতে এবং কারখানা চালিয়ে যেতে গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ধার করতে হয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজার থেকে কার্যত ছিটকেই গিয়েছে শালিমার পেন্টস। ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। কারখানায় তালা।

১২ মার্চ হাওড়ার গোয়াবেড়িয়ায় শালিমারের রং তৈরির কারখানায় আগুন লেগে অনেক সম্পদ পুড়ে খাক হয়ে যায়। কিন্তু শুধু সেই অগ্নিকাণ্ডের জন্য কারখানা বন্ধ করে দিতে হল, এমন কথা মানতে রাজি নন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, শ্রমিকদের বিক্ষোভের জন্য কারখানা বন্ধ হয়নি। বাজারে তাঁদের পণ্য বিক্রি না-হওয়া এবং তার জেরে ক্রমাগত লোকসানের ফলেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

এত দিনের একটি সংস্থাকে চাঙ্গা করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে না কেন?

হাওড়া শালিমারের ম্যানেজার অনন্যা মুখোপাধ্যায় এ দিন ই-মেলে জানান, পরিস্থিতি যা, তাতে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে কারখানাকে ফের চাঙ্গা করে তোলা যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে সংস্থার কর্তৃপক্ষের হাতে অত টাকা নেই।

টাকা না-থাকার এই সব যুক্তি মানতে রাজি নন শ্রমিকেরা। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছে। সেই অন্ধকার কাটানোর একমাত্র পথ ফের কারখানা চালু করা। কী ভাবে সেটা সম্ভব, কর্মী-শ্রমিকদের তরফে তার সুলুকসন্ধানও দেওয়া হচ্ছে কিছু কিছু। তাঁদের বক্তব্য, বাজার থেকে ঋণ নিয়ে তো কারখানার পুনরুজ্জীবনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার পথ যে আর নেই, কারখানা-কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই তা জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমা ছিল ১১০ কোটি টাকা। তার পুরোটাই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এবং কারখানার দৈনন্দিন কাজেই তা খরচ করা হয়েছে।

ঋণ-সীমার বিষয়ে কর্মী-শ্রমিকেরা কিছু বলছেন না। কয়েক বছর ধরে সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য যে ভাল যাচ্ছে না, তাঁরাও সেটা বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে পরিবার নিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে তাঁদের। তাই তাঁদের প্রস্তাব, কারখানার ভিতরে অনেক জমি পড়ে আছে। সেই জমি বেচে বা অন্য ভাবে ব্যবহার করে বাজার থেকে সহজেই টাকা তোলা যায়। সেটাই করা হোক।

পড়ে থাকা জমি বেচে টাকা জোগাড়ের ব্যাপারে শালিমার-কর্তৃপক্ষ এখনও কিছু বলেননি। কিন্তু সেই নীরবতায় শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এত দিন শুধু কর্মী-শ্রমিকেরাই কারখানার গেটে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন। রবিবার থেকে সেই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন তাঁদের পরিবারের লোকজনও। এত দিন যাঁরা শুধু হেঁশেল সামলাতেন, পেটে টান পড়ায় সেই শাহনাজ বেগম, হাতিবা বেগম, তসলিমা নাসরিনেরা নেমে এসেছেন রাস্তায়। ২৩ জুলাই রাজ্য সরকারের সঙ্গে শালিমার-কর্তৃপক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকের দিকেই চেয়ে আছেন কর্মী-শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজন। কারখানার গেট ফের না-খুললে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছেন তসলিমারা। স্বামীদের পাশে বসে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। তাঁদের অনুযোগ, “এতগুলো পরিবারের কী হবে, কেউই সেটা ভেবে দেখছে না! সামনে দুর্গাপুজো। সামনে ঈদ। তার আগে কারখানা না-খুললে সমস্যা বাড়বে।”

শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক ব্রজমোহন মজুমদার। কারখানার তৃণমূল সমর্থিত ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি-র নেতা দেবাশিস সেন কারখানার ভিতরের জমির প্রসঙ্গ তুলেছেন। কারখানার শেয়ার বা ঋণপত্র বিক্রি করে টাকা তোলার পরামর্শও দিয়েছেন এই শ্রমিক-নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

labour factory closed due to huge loss shalimar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE