Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর মৃত্যুতে ধৃত ভুয়ো ডাক্তার

উল্টোডাঙা এলাকার বিশ্বজিৎ নস্কর এবং টুম্পা নস্করের বছর দে়ড়েক বয়সী শিশুকন্যা গৌরী নস্করের ঠান্ডা লেগে বুকে সংক্রমণ হয়েছিল। তাঁরা শিশুটিকে সঞ্জীববাবুর চেম্বারে নিয়ে যান। তিনি শিশুটিকে পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়েছিলেন।

শোকার্ত: মৃত গৌরীর মা টুম্পা নস্কর। —নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত: মৃত গৌরীর মা টুম্পা নস্কর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

কয়েক দশক ধরে মুরারিপুকুরে ‘ডাক্তারবাবু’ বলেই পরিচিত তিনি। কিন্তু বুধবার একটি শিশুর মৃত্যুতে জানা গেল, ‘ডাক্তারবাবু’ চিকিৎসক নন। ভুয়ো ডাক্তার হিসেবে সঞ্জীব চাকী নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি ডাক্তারি পাশের প্রমাণ এবং রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি দেখাতে পারেননি। এ দিন শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হলে তাঁকে ৭ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।

উল্টোডাঙা এলাকার বিশ্বজিৎ নস্কর এবং টুম্পা নস্করের বছর দে়ড়েক বয়সী শিশুকন্যা গৌরী নস্করের ঠান্ডা লেগে বুকে সংক্রমণ হয়েছিল। তাঁরা শিশুটিকে সঞ্জীববাবুর চেম্বারে নিয়ে যান। তিনি শিশুটিকে পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ওষুধ খেয়ে শিশুটির স্বাস্থ্যের অবনতি হয় বলে অভিযোগ। পরে শিশুটিকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। শনিবার শিশুটির পরিবার ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করে।

পুলিশ সূত্রের খবর, পরিবারের অভিযোগ পেয়ে তদন্তকারীরা কাঁকুড়গাছিতে সঞ্জীববাবুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে মুরারিপুকুরে তাঁর চেম্বারেও যাওয়া হয়। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন উল্টোডাঙায় বস্তিতে গিয়ে দেখা তাঁর মা মেঝেতে লুটিয়ে রয়েছেন। শিশুটির মা টুম্পা বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু চার রকমের সিরাপ দিয়েছিলেন। তা খাওয়াতেই মেয়ের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুগত কয়েক দশক ধরে যে কোনও রকমের রোগেরই চিকিৎসা করতেন সঞ্জীববাবু। ২০-২৫ টাকা করে ‘ফি’ নিতেন তিনি। মূলত দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত লোকেরাই তাঁর রোগী ছিলেন। পরিচিত ‘ডাক্তারবাবু’র গ্রেফতারের খবরে এ দিন মুরারিপুকুরের অনেকেই বিস্মিত। ধৃতের চেম্বারের উল্টো দিকের এক দোকানমালিকের কথায়, ‘‘ওঁর ডিগ্রি নেই তা তো এলাকার সবাই জানত। শিশুটি না মারা গেলে এত কিছু হতো না।’’ ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানান, নিজের নামে ছাপানো কোনও প্রেসক্রিপশন দিতেন না সঞ্জীববাবু। সাদা কাগজে ওষুধ লিখতেন। প্রেসক্রিপশনে সই থাকত না বলেও পুলিশ সূত্রের দাবি।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, জেরাতেও নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করেননি সঞ্জীববাবু। তিনি বলেছেন, তাঁর ওষুধের দোকান রয়েছে। সেই সূত্রেই এলাকার লোকজন তাঁর কাছে আসত। তিনি নিজের জ্ঞানমতো ওষুধ দিতেন। কিন্তু এমন ভাবে চিকিৎসা করাও অপরাধ বলে পুলিশের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE