Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এক দিন কনভয়ে যাব, তুমি দেখো: অমিতাভ

শনিবার রাতে নিমতলায় দাহকাজ সেরে ফেরার পর থেকে ঘন-ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন অমিতাভের স্ত্রী বিউটি। তার মাঝেই মোবাইলের গ্যালারি খুলে স্বামীর ছবি বার করে শুধুই তাঁর সঙ্গে কথা বলে চলেছেন।

বিধ্বস্ত: মধ্যমগ্রামের বাড়িতে বিউটি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

বিধ্বস্ত: মধ্যমগ্রামের বাড়িতে বিউটি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

ক’দিন বাদেই কালীপুজো। গোটা বারাসত-মধ্যমগ্রাম জুড়ে লাগানো হচ্ছে আলো। দীপাবলির সেই আলোর আগেই রবিবার গোটা এলাকা আলোয় ভরে উঠল। উত্তরবঙ্গে নিহত পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিকের জন্য মোমবাতি মিছিল শুরু হল সন্ধ্যা ছ’টায়।

মধ্যমগ্রামের পাটুলিতে অমিতাভর বাড়িতে এ দিন সকাল থেকেই ভিড় জমেছিল। ঢল নেমেছিল রাজনৈতিক নেতা থেকে সাধারণ মানুষের। অমিতাভর বাবা সৌমেন মালিক বলেন, ‘‘সবাই পাশে রয়েছেন, এটাই আমাদের বল। অপরাধীদের শাস্তি চাই।’’

শনিবার রাতে নিমতলায় দাহকাজ সেরে ফেরার পর থেকে ঘন-ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন অমিতাভের স্ত্রী বিউটি। তার মাঝেই মোবাইলের গ্যালারি খুলে স্বামীর ছবি বার করে শুধুই তাঁর সঙ্গে কথা বলে চলেছেন। সকালে স্বামীকে বোর্নভিটা মিশিয়ে দুধ দিতেন। রবিবার সকালেও তা তৈরি করে ফেলেন বিউটি। লুকিয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছু করার ছিল না পরিবারের অন্যদের।

এ দিন সকাল দশটা নাগাদ বিউটি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তারবাবুকে দেখে ময়না-তদন্তের পরে তোলা অমিতাভর একটা ছবি দেখান বিউটি। কপাল জোড়া সেলাই অমিতাভর। চিকিৎসককে দেখিয়ে বিউটি বললেন, ‘‘ওর প্রেশারটা চট করে দেখুন তো ডাক্তারবাবু। গুলি তো সেই কালকেই মাথা থেকে বার করা হয়েছে। কপালের এই সেলাইগুলো শুকোতে মাস ছয়েক লেগে যাবে না?’’

শোকে এমন বিপর্যস্ত অবস্থাতেও বিমল গুরুঙ্গের শাস্তি দাবি করেন বিউটি। বলেন, ‘‘ওই গুরুঙ্গ ওর চিকিৎসাটাও করাতে দেয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেয়নি। এত নিষ্ঠুর। রাস্তাও কেটে রেখে দিয়েছিল।’’ স্বামী তাঁকে বলতেন, রাজ্য ভাগ হবেই না, হওয়ার প্রশ্নও নেই। বিউটি বলেন, ‘‘শুধু বলত, বিমল গুরুঙ্গকে আমরাই ধরব।’’

এর পরে একটু ধাতস্থ হয়ে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের টুকরো টুকরো ছবি তুলে ধরেন বিউটি। সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জানান, ২০১৪ সালে ফেসবুকে আলাপ হয় অমিতাভর সঙ্গে। চলতি বছরের মার্চে বিয়ে। তার পর সিকিমে হানিমুনে গিয়ে এক দিন পরেই ফিরে আসতে হয়েছিল। কাজের চাপেই লম্বা মধুচন্দ্রিমা হয়নি। তার বদলে নভেম্বরে সান্দাকফু যাবেন বলে আইসি সাহেবের কাছ থেকে ছুটিও নিয়ে রেখেছিলেন অমিতাভ। এ দিন বিউটি বলেন, ‘‘সেই যাওয়া আর হল না। সব সময়ে কাজ আর কাজ। খালি ফোন আসত— ‘অমিতাভ এখানে এসো। অমিতাভ ওখানে চলো।’ দার্জিলিং অশান্ত হওয়ার পর থেকে দুপুরে খেতেও আসতে পারত না। আসলে এসপি সাহেব থেকে শুরু করে সবাই ওকে খুব ভালোবাসতেন।’’

শুধু সহকর্মীরা নন, আপনজনদের সকলেরই বড় ভালবাসার মানুষ ছিলেন অমিতাভ। বিউটি বলেন, ‘‘ওকে সকলেই খুব ভালোবাসত। বাসবে না-ই বা কেন, খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। সব সময়ে বই পড়ত। আর অনলাইনে জামা-কাপড় কেনবার নেশা ছিল।’’

স্বামীর শেষযাত্রার কনভয়ে বসে অপূর্ণ স্বপ্নের কথা ভেবেছেন বিউটি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অমিতাভ ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিল পুলিশের উচ্চ পদে কাজ করবে বলে। কিন্তু কয়েকটা নম্বর কম ছিল। আমাকে বলেছিল— যে ভাবে আমি পুলিশ বিভাগে কাজ করছি, তাতে এক দিন আমি এসপি হয়েই অবসর নেব। যখন এসপি হব, তখন আমাদের সঙ্গে কনভয় থাকবে, দেখো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE