Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ির লোকের চোখে পড়ায় বন্ধ হল মেয়াদ উত্তীর্ণ কেমোর ওষুধ

ডাক্তার জানিয়েছিলেন, দ্রুত চালু করতে হবে কেমোথেরাপি। সোমবার দুপুরে তা চালুও হয়েছিল। স্যালাইনের মধ্যে দিয়ে কেমোথেরাপির ওষুধটি দেওয়া চলতে চলতেই আর একটি ওষুধও স্যালাইনের মাধ্যমে রোগিণীকে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার মধ্যেই রোগিণীর এক পরিচিতের চোখে পড়ে যায়, যে ওষুধটি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, সেটি মেয়াদ উত্তীর্ণ!

মেয়াদ উত্তীর্ণ এই কেমোর ওষুধই দেওয়া হচ্ছিল ক্যানসার আক্রান্ত শোভারানি মণ্ডলকে-—নিজস্ব চিত্র।

মেয়াদ উত্তীর্ণ এই কেমোর ওষুধই দেওয়া হচ্ছিল ক্যানসার আক্রান্ত শোভারানি মণ্ডলকে-—নিজস্ব চিত্র।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৪
Share: Save:

ডাক্তার জানিয়েছিলেন, দ্রুত চালু করতে হবে কেমোথেরাপি। সোমবার দুপুরে তা চালুও হয়েছিল। স্যালাইনের মধ্যে দিয়ে কেমোথেরাপির ওষুধটি দেওয়া চলতে চলতেই আর একটি ওষুধও স্যালাইনের মাধ্যমে রোগিণীকে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার মধ্যেই রোগিণীর এক পরিচিতের চোখে পড়ে যায়, যে ওষুধটি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, সেটি মেয়াদ উত্তীর্ণ!

ঘটনাস্থল—চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট। রোগিণীর পরিচিত ব্যক্তিটি ওই হাসপাতালেরই কর্মী। তাঁর থেকে খবর পেয়ে রোগীর বাড়ির লোকেরা তখনই বন্ধ করে দেন চিকিৎসা। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে কিছুটা উত্তেজনাও ছড়ায়। কেন এমন ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত দুই নার্সকে অন্য বিভাগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সপ্তাহ দুয়েক আগে পায়ুদ্বারে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের শোভারানি মণ্ডলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্যানসার চিকিৎসক কল্যাণকুসুম মুখোপাধ্যায়ের অধীনে তিনি ভর্তি হন। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিন পাঁচ-এ নেমে যাওয়ায় কেমোথেরাপি শুরু করা যায়নি। পরে কয়েক ইউনিট রক্ত দিয়ে তাঁর হিমগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো হয়। সোমবারই তাঁর কেমোথেরাপি শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে সময় সময় পরিবারের লোকেদের ওয়ার্ডে থাকার অনুমতি না থাকায় তাঁরা নীচে অপেক্ষা করছিলেন।

শোভাদেবীর ছোট ছেলে রাকেশ জানান, ওই হাসপাতালেরই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এক জন তাঁদের পরিচিত। ওয়ার্ডে গিয়ে শোভাদেবীকে দেখে আসার জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হয়। রাকেশের অভিযোগ, ‘‘উনি কিছু ক্ষণ পরে এসে জানান, একটি স্যালাইনের বোতলের ৭৫ শতাংশের বেশি ওষুধ মাকে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আর একটি স্যালাইনের বোতলে ৫০ মিলিগ্রাম করে মোট পাঁচটি অ্যাম্পুলের ওষুধ মেশানোর কথা। তার মধ্যে একটি মেশানো হয়ে গিয়েছে। সেটি তো বটেই, বাকি চারটিও, অর্থাৎ মোট পাঁচটি অ্যাম্পুলই মেয়াদ উত্তীর্ণ! ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রত্যেকটিরই মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে!’’

রাকেশের বক্তব্য, বিষয়টি জেনেই তিনি উপরে গিয়ে স্যালাইনের সূচ খুলে দেন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে খবর পাঠান। চিকিৎসকও এসে দেখেন, ওষুধগুলির মেয়াদ ফুরিয়েছে। তিনি
তৎক্ষণাৎ কেমো বন্ধের নির্দেশ দেন।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, নার্সরা ওই ওষুধ হাসপাতালের স্টোর্স থেকেই নিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধও মজুত থাকে? কোনও ওষুধ রোগীকে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট নার্সরা কি এক বার তা দেখেও নেন না? কল্যাণবাবুর দাবি, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাঁর কথায়, ‘‘এমন আগে হয়নি। ওষুধটা স্যালাইনের বোতলে ‘পুশ’ করা হলেও রোগিণীর দেহে ঢোকেনি। তবে ওই দুই নার্সকে কেমোথেরাপি বিভাগ থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’’

কী বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘মেয়াদ উত্তীর্ণ কেমোর ইনজেকশনের খোঁজ নিতে হাসপাতালের মেডিক্যাল স্টোর্সে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও কিছুই পাওয়া যায়নি।’’ যদিও হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দাবি, ঘটনা জানাজানি হতেই মেয়াদ উত্তীর্ণ
বেশ কিছু ওষুধ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ ধরনের ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। ওষুধ দেওয়ার আগে সব সময়েই দেখে নেওয়া উচিত, তার মেয়াদ শেষ কবে হচ্ছে।’’ তাঁর মতে ওই ওষুধটির মেয়াদ যে হেতু মাস তিনেক আগে শেষ হয়েছে, তাই বড় বিপদের সম্ভাবনা হয়তো ছিল না। কিন্তু আরও বেশি আগে মেয়াদ ফুরনো হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE