Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অতিবর্ষণে ঘোর বিপদের আশঙ্কা

যা হয়েছে, তার উপরে আরও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসেই বিপদের গন্ধ পাচ্ছে সেচ দফতর। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। টানা বৃষ্টির পিছনে আছে তারই কারিকুরি।

বানভাসি: কংসাবতীর লকগেট উপচে বইছে জল। পশ্চিম মেদিনীপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ।

বানভাসি: কংসাবতীর লকগেট উপচে বইছে জল। পশ্চিম মেদিনীপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৫:২০
Share: Save:

সারা জুন ঝিমিয়ে থেকে জুলাইয়ে তেড়েফুঁড়ে আসর জমাচ্ছেন বরুণদেব!

বর্ষা সমাগমের মাস জুড়ে তেমন বৃষ্টি মেলেনি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। জুলাইয়ের শেষ পর্বে এসে এ বার অতিবৃষ্টির দাপট সইতে হচ্ছে জেলাগুলিকে। গত দু’দিনে বর্ষণের জেরে এমনিতেই দক্ষিণবঙ্গের নদনদী টইটম্বুর হয়ে রয়েছে। আলিপুরের আবহাওয়া দফতর রবিবার জানিয়ে দিয়েছে, আজ, সোমবার এবং কাল, মঙ্গলবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই জোরালো বৃষ্টি হবে। কোনও কোনও এলাকায় অতিভারী বর্ষণেরও আশঙ্কা আছে।

এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন সেচমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাঁর দফতরের ছোটবড় সব কর্তাই। জলসম্পদ ভবনের কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টাই লাগাতার নজর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে দফতরের পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারদের। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রকৃতির যা মনোভাব, তাতে চিন্তা তো বাড়ছেই।’’ তিনি জানান, এ দিন দক্ষিণবঙ্গে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ১৮০ থেকে ২০৪ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিও রেকর্ড করা হয়েছে কোথাও কোথাও। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বিকেল পর্যন্ত খাস কলকাতায় ৬৪.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জল জমে যায় মহানগরীর বেশ কিছু এলাকাতেও।

যা হয়েছে, তার উপরে আরও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসেই বিপদের গন্ধ পাচ্ছে সেচ দফতর। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। টানা বৃষ্টির পিছনে আছে তারই কারিকুরি। সেই ঘূর্ণাবর্ত আজ, সোমবার তা নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ আরও শক্তি বা়ড়তে পারে তার। সম্ভাব্য সেই নিম্নচাপের প্রভাবেই বৃষ্টির দাপট বাড়বে। ‘‘নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আর নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে সরতে শুরু করলে বীরভূম, বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতে বৃষ্টির দাপট বাড়বে,’’ বলেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: নাগাড়ে বৃষ্টিতে ভ্রূকুটি বন্যার, সতর্ক প্রশাসন

বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে সহজে নিম্নচাপের সরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, নিম্নচাপটি দ্রুত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর থেকে সরে যেতে পারবে না। কেননা পশ্চিম ভারতে থাকা একটি নিম্নচাপ তার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পশ্চিমের ওই নিম্নচাপের বাধা না-থাকলে হাওয়ার টানে বাংলার নিম্নচাপটি স্বাভাবিক গতিতে সরে যেতে পারত। তার বদলে নিম্নচাপটি যত ঢিমেতালে সরবে, ততই বৃষ্টি হবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। বাড়তে থাকবে বিপদের মাত্রাও।

সেচ দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টির ফলে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন নদনদীর জলস্তর বেড়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে দ্বারকেশ্বর, দ্বারকা, কুঁয়ে ও শিলাবতী নদীর জল বিপদসীমা ছুঁইছুই। তবে কোনও এলাকাতেই তেমন বিপদের খবর এখনও নেই। এই অতিবৃষ্টির কথা চিন্তা করে রাজ্যের বিভিন্ন জলাধারগুলি কিছুটা খালি করে রাখা হয়েছিল। তাই সেখান থেকে জল ছাড়ার প্রয়োজন এখনও হয়নি।

সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের অভিজ্ঞতা বলছে, বর্ষায় ডিভিসি-র জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে পরিস্থিতি বিগড়ে যায়। তাই এই অতিবৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানার পরেই ডিভিসি-কে জল ছাড়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারকে না-জানিয়ে যেন আদৌ জল ছাড়া না-হয়। সেচ দফতরের খবর, এ দিন ডিভিসি হাজার চারেক কিউসেক জল ছেড়েছে। তাতে অবশ্য কোনও সমস্যা হবে না। বরং নিয়মিত একটু একটু জল না-ছাড়লে পরে অতিবৃষ্টি হলে জল ধরে রাখা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE