Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক

নানা কারণে কাজ আটকে এক দশক

সরকারি কর্তারা জানান, সড়ক পথে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে পৌঁছতে এই রাস্তাই একমাত্র অবলম্বন। তাই এই রাস্তার উপরে চাপও বেশি। সেই কারণে যানজটের ফাঁসে পড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছতে দ্বিগুণ সময় লেগে যায়।

সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৫০
Share: Save:

কোথাও বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন চলে গিয়েছে। কোথাও রাস্তার দু’ধারের জবরদখল উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। কোথাও মামলা হয়েছে। কোথাও আবার ঠিকাদার সংস্থা কাজ ছেড়ে পালিয়েছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে চার লেন এবং তিনটি বাইপাস করার কাজ এমন পদে পদে বাধা পেয়ে কার্যত এক দশক ধরে আটকে। কেউ জানে না কাজ কবে শেষ হবে। যদিও রাজ্যের দাবি, পুরো রাস্তাকে চার লেন করার কাজ শেষ হয়ে যাবে আর এক বছরের মধ্যেই।

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা — মোটামুটি এই ৪৭৫ কিলোমিটার পথই জাতীয় সড়ক ৩৪ বলে পরিচিত। এর মধ্যে বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর (৭০ কিমি) পর্যন্ত রাস্তার কাজ করছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। আর বহরমপুর থেকে ডালখোলা (৪০৫ কিমি) পর্যন্ত কাজটি করছে জাতীয় সড়ক কতৃর্পক্ষ।

সরকারি কর্তারা জানান, সড়ক পথে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে পৌঁছতে এই রাস্তাই একমাত্র অবলম্বন। তাই এই রাস্তার উপরে চাপও বেশি। সেই কারণে যানজটের ফাঁসে পড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছতে দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। সমস্যা সমাধানে এই রাস্তাকে চার লেন করার প্রস্তাব ওঠে বাম আমলে। কিন্তু জমি না পেয়ে তখন কাজ এগোতে পারেনি। রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়। নবান্নের দাবি, এখন আর কোথাও জমির সমস্যা নেই। তবু পদে পদে বাধা।

কী রকম? সরকারি সূত্রে খবর, বারাসত থেকে সন্তোষপুর পর্যন্ত বাড়িঘর-সহ প্রচুর নির্মাণ থাকায় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। তার পর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত মোটামুটি কোনও সমস্যা নেই। তার পর থেকেই আবার সমস্যার শুরু। যেমন, বহরমপুরের অনেকটা রাস্তা জবরদখল হয়ে রয়েছে। দু’-একটি জায়গায় জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ বেশি টাকা দাবি করে মালিকরা মামলা করেছেন। বহরমপুরের বল্লারপুরে একটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ (আরওবি) হবে। সেখানে কর্মরত ঠিকাদার আর্থিক সঙ্কটে পড়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঠিকাদার সংস্থা যখন দায়িত্ব নিয়েছিল, তখন যে খরচ ধরা হয়েছিল, সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় সেই খরচ বেড়ে গিয়েছে। এই যুক্তিতেই অনেক জায়গায় ঠিকাদার সংস্থা কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে।’’

বহরমপুর শহরেই ১১ কিলোমিটার লম্বা একটি বাইপাস হবে। এখানে বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন থাকায় কাজ শুরুই করা যায়নি। কর্তারা জানান, মালদহের কালিয়াচক থেকে সুজাপুরের মধ্যে সাত কিলোমিটার রাস্তা জবরদখল হয়ে রয়েছে। ফলে প্রতিদিন তীব্র যানজট হচ্ছে। ডালখোলায় আবার ঠিকাদার সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে কবে কাজ শুরু হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, বহরমপুর, মালদহ এবং ডালখোলায় তিনটি বাইপাস তৈরি করবেন। এতে মালদহে জমির সমস্যা না থাকলেও ডালখোলায় ঠিকাদার সমস্যা এবং বহরমপুরে বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন থাকায় কাজ আটকে। তবে অনেক জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, দুই সরকারের যৌথ উদ্যোগে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে রাজ্য জমি দিয়েছে। জাতীয় সড়ক সংস্থা প্রকল্পের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার হয়েছে।
ঠিক হয়েছে, খরচের টাকা তুলতে ঠিকাদার সংস্থাগুলি ‘টোল’ আদায় করবে। পঁচিশ বছর ধরে তারা টোল আদায় করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE