বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কাউকে কিছু বলতে তাঁর ঘোরতর অনীহা। অসুস্থ হলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালে ভর্তি করার কথা এলেও পিছিয়ে যান। তাঁকে নিয়ে কেউ ব্যতিব্যস্ত হোক, চান না একেবারেই। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার পরে সাড়ে ছ’বছরে সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একমাত্র সুপারিশ এখনও সরকারি ফাইলবন্দি!
প্রায় দু’বছর আগে অবসর নিয়েছেন বুদ্ধবাবুর সরকারি গাড়ির চালক। বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকে অনেক বছর ধরে মহম্মদ ওসমানই তাঁর প্রিয় সারথি। সরকারি কাজে পুনর্বহাল হতে চেয়ে পরিবহণ দফতরের অধীন পুল কার বিভাগের প্রশাসনিক আধিকারিকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন ওসমান। কাজ কিছু না হওয়ায় পরে আবার তিনি আবেদন করেন। সেই আবেদনেই নিজের সুপারিশের কথা জানিয়ে সই করে দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তা-ও হয়ে গিয়েছে এক বছরের বেশি। কিন্তু এখনও সেই আর্জিতে সাড়া মেলেনি!
বাম সরকার পরিবর্তনের রায় বেরোনোর দিন রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা দেওয়ার পরেই সরকারি গাড়িতে চড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। সেই সময় ফাঁকা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন ওসমান। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার খাতিরে পুরনো বন্দোবস্ত আবার ফিরিয়ে আনা হয় কিছু দিন পরে। অনেক অনুরোধ-উপরোধের পরে রাজি হন বুদ্ধবাবুও। সেই ঘটনার পর থেকে নিজের অবসরের দিন পর্যন্ত বুদ্ধবাবুর গাড়ি চালিয়েছেন ওসমানই। এখন বাড়ি থেকে খুব কমই বেরোন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বেরোলে চালকের আসনে তাঁর যে ওসমানকেই পছন্দ, বুদ্ধবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলে অনেকেই তা জানেন। বুদ্ধ-ঘনিষ্ঠ সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘অসুস্থতার সময়ে বুদ্ধদা’কে দেখতে গিয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তাঁর যে কোনও প্রয়োজনে সরকারকে জানাতে। বুদ্ধদা যে কোনও প্রয়োজনে কাউকে জানানোর লোক নন। কিন্তু তাঁর এই সামান্য অনুরোধটুকু এখনও সরকার রাখল না!’’
ওই নেতার যুক্তি, সরকারের বিভিন্ন দফতরে দেদার পুনর্নিয়োগ হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের। তা হলে এ ক্ষেত্রে কীসের অসুবিধা? আর ওসমান শারীরিক ভাবে পুরোপুরিই সক্ষম। তাঁকে শেষ বার পরিবহণ দফতরে ডাকা হয়েছিল গত অক্টোবরে। তার পরেও গাড়ি চালানোর ডাক আসেনি। এখন যার যখন দায়িত্ব পড়ে, পুল কালের সেই চালকই বুদ্ধবাবুর গাড়ি চালান।
ওসমান বলছেন, ‘‘বুদ্ধবাবুর গাড়ি চালানোর সময়ে আমি প্রত্যেক দিন ডিউটি করেছি। আমার পাওনা বহু ছুটি এমনিই নষ্ট হয়েছে। তার বিনিময়ে কি আমি আরও কিছু দিন মানুষটার সঙ্গে থাকার সুযোগ পেতে পারি না?’’ পরিবহণ দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, আবেদন পুল কার বিভাগে জমা আছে। এখনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। আর পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানাচ্ছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। অবশ্যই খোঁজ নেবেন।
তত দিন গাড়ি ছাড়াই প্রতীক্ষায় সারথি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy