Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এর পরে বৈঠক পাহাড়েই, প্রস্তাব দিলেন তামাঙ্গেরা

গত তিনটি বৈঠকে ধীরে ধীরে পাহাড়কে স্বাভাবিক করার রূপরেখা তৈরি করেছে রাজ্য সরকার এবং পাহাড়ের দলগুলি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

কিশোর সাহা ও কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬
Share: Save:

জুনের ৮ তারিখ দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময়ে শুরু হয় মোর্চার বিক্ষোভ। তার পরে ১০৪ দিনের টানা বন্‌ধে বিপর্যস্ত হয় গোটা পাহাড়। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে সেই পাহাড়ে আবার যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন শিলিগুড়ির কাছে পিনটেল ভিলেজে চতুর্থ সর্বদল বৈঠকের পরে তিনি জানান, জিটিএ-র পক্ষে তাঁকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গত তিনটি বৈঠকে ধীরে ধীরে পাহাড়কে স্বাভাবিক করার রূপরেখা তৈরি করেছে রাজ্য সরকার এবং পাহাড়ের দলগুলি। সে জন্য বিনয় তামাঙ্গদের তরফে বেশ কিছু দাবিদাওয়া করা হয়েছিল প্রথম বৈঠক থেকেই। এ দিন বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, সেই সব দাবির বেশির ভাগই মেনে নেওয়া হয়েছে। যেমন, পাহাড়ে আন্দোলনের সময়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের এককালীন অনুদান তো বটেই, পরিবারের এক জনকে চাকরি দেবে জিটিএ। যে সব সরকারি কর্মী বন্‌ধের সময়ে কাজ করেছেন, তাঁদের জন্য থাকছে ছুটির ব্যবস্থা। আবার শিক্ষকদের বাড়তি ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘আমরা পাহাড়ে যাব। উন্নয়নের সঙ্গে কোনও আপস হবে না।’’

আরও পড়ুন: বালি-বেলুড়ে পোকায় কাটা জ্বর, সতর্ক উত্তরপাড়াও

প্রশ্ন হচ্ছে, এ দিন মমতা কল্পতরু কেন? অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন বন্‌ধ চলার ফলে পাহাড়ে যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ধাক্কা লাগে পাহাড়ের অর্থনীতিতে। তাকে চাঙ্গা করতে এবং পাহাড়বাসীর মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই দাবিগুলি প্রথম থেকেই করে আসছিলেন বিনয় তামাঙ্গরা। এ বারের বৈঠকে সেই দাবিদাওয়ার বেশিরভাগকে ছাড়পত্র দিয়ে সেই আস্থা ফেরানোর পথেই হাঁটতে চাইলেন মমতা।

দ্বিতীয়ত, পাহাড়ে এখনও বিমল গুরুঙ্গের প্রভাব রয়েছে। সদ্য সোমবারই তাঁকে সামান্য হলেও স্বস্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরে এ দিন অডিও-বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি শীঘ্রই দিল্লি যাবেন। নিজেকে ‘অধ্যক্ষ’ বলেও উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে তাঁর হয়ে সমানে মুখ খুলছেন বিজেপি নেতারা। এ দিন মুখ খুলেছেন মুকুল রায়ও। এই অবস্থায় মোর্চার নতুন প্রধান তথা জিটিএ-র কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গকে ভরসা জোগাতে তাঁদের দাবিগুলি মেনে নেওয়া জরুরি ছিল। সেই কাজটাই কৌশলে এ দিন সারলেন মমতা।

অনেকে বলছেন, পিনটেল ভিলেজ কিন্তু বহু স্মৃতির ধারক-বাহক। এখানেই এক সময়ে জিটিএ চুক্তি হয়েছিল রাজ্য সরকার ও মোর্চার মধ্যে। দরাজ হাতে গুরুঙ্গকে উন্নয়নের বরাদ্দ দিয়েছিলেন মমতা। তার পরে গুরুঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কের দীর্ঘ উত্থানপতন চলে সরকারের। তার পর সাম্প্রতিক বন্‌ধ-আন্দোলন পেরিয়ে আবার সেই পিনটেল ভিলেজ সাক্ষী থাকল আর এক বৈঠকের, আর এক দরাজ ঘোষণার। তবে সেখানে অন্য প্রান্তে আছেন বিনয় তামাঙ্গ।

গুরুঙ্গের ছায়া অবশ্য এখনও রয়েছে পাহাড়ে। সদ্য সোমবার তিনি কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে। যদিও তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন বিনয়। তাঁর কথায়, যে হরিশ সালভে মামলা লড়ছেন গুরুঙ্গের হয়ে, তিনি দেশের সব থেকে দামি উকিল। তাঁর দাবি, ‘‘শুনেছি ওই মামলায় এখন অবধি ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা গুরুঙ্গ পেলেন কোথায়?’’

কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী

• মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা, এক জনকে গ্রুপ ডি পদে চাকরি, আহতদের ৫০ হাজার করে অনুদান। তবে ফৌজদারি মামলা থাকলে এ সব মিলবে না।

• যে সরকারি কর্মীরা বন্‌ধের সময়ে অফিস করেছেন, তাঁদের ১৫ দিনের সবেতন ছুটি। অনুপস্থিতরা দু’মাসের মাইনে পাবেন।

• বন্‌ধের সময়ের বেতন পাবেন পাহাড়ের শিক্ষকরা। তবে তাঁদের সিলেবাস শেষ করতে হবে।

• যে চা বাগানে বোনাস হয়নি, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।

• মিরিকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড হবে।

• কার্শিয়াং, তিনধারিয়ায় থাকার জায়গা তৈরি হবে।

• কালিম্পংয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের তালিকা করবে জিটিএ।

• স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করবে জিটিএ।

• পরিবহণে কর বাবদ যাবতীয় জরিমানা মকুব।

• পিনটেল ভিলেজকে ঢেলে সাজা হবে। দায়িত্ব পুলিশের।

• পাহাড়ে শিল্প বৈঠকের ভাবনা।

• পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করবে জিটিএ।

• চালু হবে দার্জিলিং গোল্ড কাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE