Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নিশানায় সেই কাজল

নতুন পদ পেয়েই হুঙ্কার গদাধরের

হারের ক্ষত ঢাকতে যেন মলম নিয়ে হাজির নতুন পদ। বিধায়ক পদে প্রার্থী হয়ে হার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, সংগঠনে পদোন্নতি হল গদাধর হাজরার। নরেশচন্দ্র বাউড়িকে সরিয়ে বীরভূম জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি করা হল নানুরের পরাজিত প্রার্থী গদাধরকে। বুধবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

হারের ক্ষত ঢাকতে যেন মলম নিয়ে হাজির নতুন পদ।

বিধায়ক পদে প্রার্থী হয়ে হার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, সংগঠনে পদোন্নতি হল গদাধর হাজরার। নরেশচন্দ্র বাউড়িকে সরিয়ে বীরভূম জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি করা হল নানুরের পরাজিত প্রার্থী গদাধরকে। বুধবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আর এ দিকে, নতুন পদ পাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন যুব সভাপতি জানিয়ে দিলেন নিজের লক্ষ্যের কথা। কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা কাজল শেখের নাম করেই হুঙ্কার ছাড়লেন। বললেন, ‘‘ওকে অনেক খেলতে দেওয়া হয়েছে। আর কোনও গদ্দা রি বরদাস্ত করব না। ওরই অস্ত্রে, নানুরের রাজনীতিতে ওকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেব।’’

এক সময় দলকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করাতে কাজলকে জেলা যুব সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সময়ে পাপুড়ি গ্রামে গড়ে উঠেছিল জেলা যুব তৃণমূল কার্যালয়। সেখানে বসেই কাজল এলাকার যুব সম্প্রদায় নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব বাহিনী। সেই বাহিনীর দাপটে এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে সিপিএম। গত দু’টি পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১১ সালের বিধানসভা, এমনকী লোকসভায় সেই বাহিনীর দাপট দেখেছিল নানুর। এ বারের নির্বাচনেও চেনা দাপট দেখা গিয়েছে। তবে এ বারে তা বিপক্ষে গিয়েছে। তৃণমূলেরই একটি অংশের মত, ‘‘কাজল-ফ্যাক্টরেই হার হয়েছে গদাধরের।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই এলাকার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে গদাধর-কাজলের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। কাজলের আপত্তি অগ্রাহ্য করে এ বারেও দল প্রার্থী করে গদাধরকে। অনেকের মত, সেই আক্রোশ থেকে কাজল নানুরের প্রার্থীকে হারাতে সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলান। ওই সূত্রের দাবি, তারই জেরে পাপুড়ি-সহ বেশ কিছু বুথে দীর্ঘক্ষণ কোনও এজেন্ট বসাতে পারেনি তৃণমূল। ফলাফলেও তার প্রভাব পড়ে। দেখা যায়, ২৫ হাজারেও বেশি ভোটে গদাধরকে হারিয়ে দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধান।

ফল ঘোষণার দিন, বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল গদাধর হাজরাকে। ভোটে হেরে মহা খাপ্পাও ছিলেন। প্রথম দিকে অবশ্য বোলপুরের পারুলডাঙ্গা আশ্রম বিদ্যালয়ের গণনাকেন্দ্রে এই তৃণমূল প্রার্থী খোশমেজাজেই ছিলেন। তখন নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতাধীন বোলপুর ব্লকের কিছু পঞ্চায়েতের গণনা চলছিল। ওখানে গদাধরের প্রভাব বেশি। অল্প ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন গদাধর। ছবিটা বদলাতে শুরু করে, নানুর ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের গণনা শুরু হতেই। দেখা যায়, গদাধরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী। হার নিশ্চিত জেনে, ফল ঘোষণার আগেই গণনাকেন্দ্র ছাড়েন গদাধর।

সে দিন কাজলের নাম না করে বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বাসঘাতকতা করেই আমাকে হারানো হল।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত নিজেও বলেছিলেন, নানুরে হারবেন কল্পনাও করেননি। তারপরেই বিকেলে বোলপুরে পার্টি অফিসে বিধ্বস্ত গদাধরকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘‘মন খারাপ কোর না। আমি যদি বেঁচে থাকি, পাঁচ বছর পরে তুমি আবার বিধায়ক হবে।’’ কেষ্টদার হাত যে বরাবর তাঁর মাথায় ছিল এবং হারের পরেও তা আছে সেটাই প্রমাণিত হল পদোন্নতির খবরে।

বস্তুত, নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে এ বার দলের মধ্যে থাকা অন্তর্দ্বন্দ্বে রাশ টানতে চাইছেন দলনেত্রী। সে কারণেই রাজ্যের বহু জায়গার রদবদল করেছেন বলে অনেকের মত। সেই সূত্রেই উঠে আসছে নানুরের প্রসঙ্গ। বিধানসভা ভোটে শ্যামলী প্রধান জয়ী হওয়ার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে গুঞ্জন ওঠে। অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘খেল দেখাল বটে কাজল।’

কিন্তু কালীঘাটের বৈঠকে দলনেত্রী স্পষ্ট করে দেন, যাঁদের জন্য দল হেরেছে, তাঁদের বরদাস্ত করা হবে না। এরপরেই উঠে আসে গদাধরের নাম। তৃণমূলের এক পদস্থ নেতার কথায়, ‘‘নতুন দায়িত্বে এনে ঝিমিয়ে যাওয়া গদাধরকে চাঙ্গা করাই লক্ষ্য।’’

এমন কড়া বার্তার পরে কিছুটা হলেও চুপসে গিয়েছে কাজল শিবির। কারণ এর আগে বিভিন্ন সময়ে কাজলের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠলেও তিনি কিছুটা প্রশ্রয় পেয়ে এসেছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত। সে কারণেই বিভিন্ন অভিযোগ ওঠা সত্বেও পুলিশ তাঁর টিকি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। কিন্তু এ বার কী হবে? লাখ টাকার প্রশ্ন সেটাই।

গদাধরের হুঙ্কার সম্পর্কে কাজলের সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর এক অনুগামী বলছেন, ‘‘দলের সূচনালগ্ন থেকে পরিবার পরিজনদের হারিয়ে আজ যদি দাদাকেই গদ্দার শুনতে হয়, তা হলে কিই-ই বা বলার থাকতে পারে। দলনেত্রী যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকে মান্যতা দিয়েই বলছি, দাদাকে কারা দূরে সরিয়ে দিল তা তদন্ত করে দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ তাঁর দাবি, দাদা নিজে কিছু করেনি। তাঁকে দলে অচ্ছুত করে দেওয়া হয়েছিল বলেই অনুগামীরা ভোটের কাজে হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন।

গদাধর যাঁর জায়গায় এলেন যুব তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি নরেশচন্দ্র বাউরির প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি বোলপুরের উপপুরপ্রধান। এখন বিধায়ক হয়েছি। অনেক দায়িত্ব। এই অবস্থায় যুব তৃণমূলের দায়িত্ব গদাধরকে দিয়ে ভালই হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE