Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর মাথায় বন্দুক ধরে মাকে গণধর্ষণের নালিশ

এক কামরার ছোট্ট ঘুপচি ঘর। তক্তপোষে ঘেঁষাঘেঁষি করে শুয়ে মা-ছেলে। অভিযোগ, বুধবার মাঝরাতে কাঠ-দরমার দরজায় লাথি মেরে ঢুকে পড়ে তিন যুবক। সাড়ে তিন বছরের ঘুমন্ত শিশুটির মাথায় বন্দুক ধরে মাকে পরপর ধর্ষণ করে তারা। বছর একুশের ওই তরুণী বধূ প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, ঘরের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গুলি চালানোয় তিনি আর প্রতিরোধের সাহস পাননি বলেও অভিযোগ।

ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত মহম্মদ শাহাবুদ্দিন। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত মহম্মদ শাহাবুদ্দিন। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

সীমান্ত মৈত্র
মধ্যমগ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

এক কামরার ছোট্ট ঘুপচি ঘর। তক্তপোষে ঘেঁষাঘেঁষি করে শুয়ে মা-ছেলে। অভিযোগ, বুধবার মাঝরাতে কাঠ-দরমার দরজায় লাথি মেরে ঢুকে পড়ে তিন যুবক। সাড়ে তিন বছরের ঘুমন্ত শিশুটির মাথায় বন্দুক ধরে মাকে পরপর ধর্ষণ করে তারা। বছর একুশের ওই তরুণী বধূ প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, ঘরের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গুলি চালানোয় তিনি আর প্রতিরোধের সাহস পাননি বলেও অভিযোগ।

মধ্যমগ্রাম থানার চণ্ডীগড়-রোয়ান্ডা পঞ্চায়েতের যে রাজবাটি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার থেকে মাত্র কিছু কিলোমিটার দূরেই কামদুনি। সেই কামদুনি, বছর দু’য়েক আগে যেখানে কলেজ ফেরত এক তরুণীকে গণধর্ষণের পরে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। যে ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। এই মধ্যমগ্রামেই বিহার থেকে আসা এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করেছিল স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। পরে এয়ারপোর্টের কাছে বাসা ভাড়া করে চলে গিয়েছিলেন কিশোরীর পরিবার। সেখানেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় মেয়েটি। তাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগের মামলা চলছে।

রাজবাটির ঘটনায় নির্যাতিতা বধূর প্রতিবেশী এক যুবককে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গণধর্ষণের অভিযোগে মহম্মদ শাহাবুদ্দিন ওরফে ক্যাশ নামে এক জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’ মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে বারাসত জেলা হাসপাতালে। পুলিশ জানায় আজ, শুক্রবার তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে বারাসত আদালতে।

বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ইটের দেওয়ালের উপরে অ্যাসবেস্টসের চালের ছোট্ট বাড়িতে থাকেন ওই মহিলা। তাঁর স্বামী গাড়ি চালান। প্রায়ই রাতে ফেরেন না। বুধবার রাতেও বাড়ি ছিলেন না। মহিলা বলেন, ‘‘আমার ছেলে ঘুমিয়েছিল। ওরা তার মাথায় বন্দুক ঠেকাল। বলল, ‘জামাকাপড় খুলে ফেল, না হলে ছেলেকে গুলি করে দেব।’ আমি প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু ওদের এক জন ঘরের মধ্যেই গুলি চালিয়ে দিল। গুলি লাগল শো-কেসে। আমি আর আপত্তি করার সাহস দেখাইনি।’’ ঘরের ভিতরে স্টিলের শো-কেসে ফুটো দাগ। যদিও গুলি চালানোর কথা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানাননি তিনি।

নির্যাতিতা মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, ক্যাশের কারখানার মেশিন বাড়িতে এনে এক সময়ে কাজ করতেন তিনি। সে কারণেই আধো অন্ধকারে চিনতে পেরেছিলেন তাকে। যদিও ক্যাশের স্ত্রী ও মায়ের দাবি, কোনও ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে ওই যুবককে। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে স্বামী ফিরলে তাঁকে ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। স্বামীর কাছ থেকে সে ভাবে সাড়া না পেয়ে তিনি শাসনের বোয়ালঘাটা এলাকায়, নিজের বাপের বাড়িতে ফোন করে মাকে সব জানান। তাঁর পরামর্শ মতোই শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মহিলা চলে যান বাপের বাড়িতে। পরে, শাসন থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাস্থল মধ্যমগ্রাম হওয়ায় শাসন থানার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ওই থানার সঙ্গে। দুপুরের দিকে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় ক্যাশকে। মহিলার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশ জানতে পেরেছে, আদতে রাজাবাজারের বাসিন্দা হলেও বছর পাঁচেক আগে ক্যাশ এই এলাকায় এসে ওয়াশার তৈরির কারখানা করে। বাড়িও বানায়। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, মহিলার স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা ছিল ধৃত ক্যাশের। বাড়িতেও যাতায়াত ছিল। ক্যাশের সঙ্গে তাঁর স্বামীর ঘনিষ্ঠতার কথা মানছেন মহিলাও। তবে, ক্যাশ তাঁর বাড়িতে আসত বলে মানতে চাননি। ক্যাশকে স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখা যেত বলেও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি। মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তৃণমূলের রথীন ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমাদের দলেরও কেউ জড়িত নয়।’’

পড়শিদের অনেকেরই বক্তব্য, রাতে তাঁরা গুলির আওয়াজ পাননি। চিৎকার-চেঁচামেচিও শোনেননি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamgram Gang rape allegation barasat Gun
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE