Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সতর্কতা সিপিএমে

কুপন-কাণ্ডটা খোলসা করুন, মুকুলকে গৌতম

মুকুলবাবুর তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কত্যাগের ঘোষণার সময় এগিয়ে আসতেই আলিমুদ্দিন এই বিষয়ে আলোচনা সেরেছে। রাজ্যসভার সদ্যপ্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে তলে তলে দলের কিছু নেতার যে যোগাযোগ হচ্ছে, জেলা থেকে তেমন কিছু রিপোর্টও পেয়েছে আলিমুদ্দিন।

গৌতম দেব।—ফাইল চিত্র।

গৌতম দেব।—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

তৃণমূলের ‘নাম্বার টু’ থাকার সময়ে তাঁর হাত দিয়েই দল ভাঙানো হয়েছে দেদার! এখন তৃণমূলের বাইরে গিয়েও মুকুল রায় আবার দল ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারেন, ধরে নিয়েই দলে সতর্কতা জারি করল সিপিএম।

মুকুলবাবুর তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কত্যাগের ঘোষণার সময় এগিয়ে আসতেই আলিমুদ্দিন এই বিষয়ে আলোচনা সেরেছে। রাজ্যসভার সদ্যপ্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে তলে তলে দলের কিছু নেতার যে যোগাযোগ হচ্ছে, জেলা থেকে তেমন কিছু রিপোর্টও পেয়েছে আলিমুদ্দিন। সরাসরি বিজেপি-তে যেতে অসুবিধা কিন্তু পৃথক মঞ্চ পেলে যেতে পারি— এই ধরনের মানসিকতার বশবর্তী হয়ে কিছু নেতা-কর্মী মুকুলবাবুর দিকে ঝুঁকতে পারেন বলে আশঙ্কা আছে সিপিএমের। সেই জন্যই দলের অন্দরে সতর্কতা।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এখন জেলায় জেলায় দলীয় বৈঠক বা কর্মসূচিতে গিয়ে কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, তৃণমূলের মোকাবিলা বিজেপি-কে দিয়ে হবে না। আবার তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপি-র মোকাবিলা হবে না। আর এর বাইরে কিছু লোক বলছেন, আমার সঙ্গে এসো। আসলে এঁদের সঙ্গে দু’দিকেরই যোগাযোগ রয়েছে! এঁদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। সূর্যবাবুর এই হুঁশিয়ারির লক্ষ্য মুকুলই। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা করেই ঠিক করেছেন, মুকুলকে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁরা কোনও বিবৃতি দেবেন না। মুকুলকে গুরুত্ব দিতে না চাওয়ার কৌশল নিয়েই শুক্রবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু তৃণমূলের সদ্যপ্রাক্তন নেতাকে নিয়ে প্রশ্নে তেমন আমল দিতে চাননি।

দলের অন্দরে সতর্কতা রাখার পাশাপাশিই মুকুলবাবুর ‘দায়মুক্ত’ হওয়ার চেষ্টাকে বিঁধতে চাইছে সিপিএম। যাতে কর্মীদের বুঝিয়ে দেওয়া যায়, তৃণমূল ছাড়ার ঘোষণা করলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের ডান হাত ‘সাধু’ হয়ে যাচ্ছেন না! ঠিক সেই নিশানাই করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। সেই ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে কুপন কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন গৌতমবাবু। প্রায় সাড়ে ৬ বছর পরেও তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুকুলবাবু যদি বাংলার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চান, তা হলে এখন অন্তত কুপন-কাণ্ড নিয়ে জবাব দিন! না হয় এটাই বলুন যে, বাধ্য হয়ে কুপনের কাজ করেছিলেন! তার পরে আমার আর যা বলার, বলব।’’

কুপন-কাণ্ড নিয়ে গৌতমবাবু অভিযোগ করায় তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন মুকুলবাবু। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘মামলা করে তার পরে একটা শুনানিতেও আসেননি! এখন তো তৃণমূল থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। এখন তো বলুন! আরও একটা বিষয় উনি খুব ভাল করে জানেন। সেটা পরে প্রকাশ্যে বলব।’’

বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার কৌশল নিলেও আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক সংক্রান্ত মুকুলবাবুর দাবিকে অবশ্য রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চাইছে আলিমুদ্দিন। সঙ্ঘের সঙ্গে মমতার অতীতের বোঝাপড়ার কথা বহু বার বলেছে সিপিএম। এখন মুকুলবাবুও দাবি করেছেন, ২০০৩-০৪ সাল নাগাদ তাঁর দায়িত্ব ছিল আরএসএসের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার। তৃণমূল নেত্রী নিজেও সঙ্ঘ নেতা অশোক সিঙ্ঘলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এমনকী, বিজেপি-র সঙ্গে জোট না বাঁধলে আলাদা দল হিসাবে তৃণমূল দাঁড়াতে পারতো না বলে মন্তব্য করেও সিপিএমের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন মুকুলবাবু!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE