Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পড়তে চেয়েই পালাল মালবিকা

পড়তে চায় মালবিকা। কিন্তু পড়বে কখন? কাক ভোরে বিছানা ছাড়ার পর থেকে ঘরের কাজ সারতেই যে সময় চলে যেত নাম কা ওয়াস্তে স্থানীয় ইস্কুলের খাতায় নাম থাকা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটির। সন্ধে থেকে ফের ঘরের কাজ।

মালবিকা বিশ্বাস

মালবিকা বিশ্বাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

পড়তে চায় মালবিকা। কিন্তু পড়বে কখন? কাক ভোরে বিছানা ছাড়ার পর থেকে ঘরের কাজ সারতেই যে সময় চলে যেত নাম কা ওয়াস্তে স্থানীয় ইস্কুলের খাতায় নাম থাকা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটির। সন্ধে থেকে ফের ঘরের কাজ। একটু বেচাল হলেই জেঠিমার সংসারে কানমলা, লাঠিপেটা জুটতো বলে অভিযোগ। তাই নিশ্চিন্তে পড়ার জন্য একটা আশ্রয় খুঁজতে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল ১২ বছরের মালবিকা বিশ্বাস।

আলিপুরদুয়ারের স্টেশন বাজারের ভিড়ে দিশাহারা ছোট্ট একলা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় এলাকার বাসিন্দা রুণা সরকারের। স্নেহের হাত মাথায় রাখতেই কান্নায় ভেঙে পড়া মেয়ে শোনায় তার কাহিনি। মালবিকার একটাই আর্তি, ‘‘আমি পড়তে চাই। আমাকে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দাও। জেঠুর বাড়িতে আর ফিরব না।’’ শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনা নিয়ে এখন আলোড়ন গোটা আলিপুরদুয়ারে। ঘটনা জানাজানি হতেই অনেকেই মালবিকাকে আশ্রয়ে রেখে পড়াতে চেয়েছেন। কিন্তু, রুণাদেবীর সৌজন্যে মালবিকা আপাতত আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশের আশ্রয়ে। জানা গিয়েছে, এলাকার বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী মালবিকাকে সরকারি আশ্রয়ে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার জন্য জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণমের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ারে সরকারি হোম নেই। ওকে জলপাইগুড়িতে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, বছর আটেক আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন মালবিকার বাবা। পাঁচ বছর আগে তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর থেকেই জেঠুর সংসারে আশ্রিতা ওই কিশোরী। কিশোরীর অভিযোগ, ‘‘কাকা, জেঠু ও জেঠিমা অত্যাচার করত। ক্লাস সিক্সে ওঠার পরে একটা খাতাও কিনে দেয়নি। লিখতে পারি না। পড়ার সময় পাই না। সারা দিন রান্নাবান্না, বাসন মাজা, কাপড় কাচায় সময় চলে যায়। পেট ভরে খাবারও দেয় না। লাঠি দিয়ে মারধর করত।’’ এমনকী লাঠিতে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে শক দেওয়া হতো বলেও তার অভিযোগ। মালবিকার কাকা মদনমোহন বিশ্বাস ও জেঠিমা যশোদাদেবী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। যশোদার দাবি, ‘‘মেয়েটা খুব দুষ্টু। তাই শাসন করতাম।’’ পুলিশ জানিয়েছে মেয়েটির বাবার কিছু বিষয়-সম্পত্তি রয়েছে। তা দখলের জন্য মেয়েটিকে তাড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE