Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মোর্চার ঘুম নেই, গুরুঙ্গ ব্যস্ত পুজোয়

কোনও কিছু অপছন্দ হলেই যখন তখন আন্দোলনে পাহাড় অচল করে একাধিকবার বহু লোকের ঘুম কেড়েছেন বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর সহযোগীরা। মদন তামাঙ্গ মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটের পরে সেই মোর্চা নেতাদের অনেকেরই রাতের ঘুম যেন উবে গিয়েছে। মোর্চার একাধিক প্রথম সারির নেতা একান্তে জানিয়েছেন, কারও রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে, কেউ আবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘুমের ওষুধ খাচ্ছেন।

দার্জিলিঙে গোর্খা লিগের দফতরে সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করছেন দলের সভাপতি মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতী তামাঙ্গ। ছবি: রবিন রাই।

দার্জিলিঙে গোর্খা লিগের দফতরে সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করছেন দলের সভাপতি মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতী তামাঙ্গ। ছবি: রবিন রাই।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

কোনও কিছু অপছন্দ হলেই যখন তখন আন্দোলনে পাহাড় অচল করে একাধিকবার বহু লোকের ঘুম কেড়েছেন বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর সহযোগীরা। মদন তামাঙ্গ মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটের পরে সেই মোর্চা নেতাদের অনেকেরই রাতের ঘুম যেন উবে গিয়েছে। মোর্চার একাধিক প্রথম সারির নেতা একান্তে জানিয়েছেন, কারও রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে, কেউ আবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘুমের ওষুধ খাচ্ছেন।

তাতেও উৎকণ্ঠা কমার নয়। বরং শনিবার দিনভর পাহাড়ের কোথাও মোর্চা নেতাদের পক্ষে একটিও পোস্টার না-পড়ায় গুরুঙ্গদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কোনও প্রতিবাদ মিছিল-মিটিংও হয়নি। অথচ, সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলে পাহাড়ের নানা জনবহুল এলাকায় হাতে লেখা পোস্টার পড়াটাই দস্তুর। সভা বা মিছিলও করা হয় অনেক সময়।
সে সবই এ বার অনুপস্থিত দেখে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি মোর্চার জনসমর্থনে ভাটার টান শুরু হয়েছে?

গুরুঙ্গ অবশ্য এ দিন দিনভর ব্যস্ত ছিলেন চণ্ডীপাঠ ও পুজোয়। মোর্চার এক নেতা জানান, দার্জিলিং থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে জামুনিতে টানা কয়েকদিন ধরে পুজোর আয়োজন হয়েছে। মোর্চার শীর্ষ নেতাদের এ দিন বৈঠক ছিল পাতলেবাসে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় বৈঠকে সভাপতি ছিলেন না। উনি পুজোয় ব্যস্ত ছিলেন। ওঁর স্ত্রী আশা দেবী অবশ্য ছিলেন।’’ তবে ফোনে সতীর্থদের সঙ্গে গুরুঙ্গের কথা হয়েছে।

পাহাড়ে এই দিন গুরুঙ্গদের গ্রেফতারের দাবিও জোরদার হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ দার্জিলিঙে দফতর খুলেছে। সেই দফতরে উপচে পড়েছে অত্যুৎসাহীদের ভিড়। লিগের প্রতাপ খাতি জানান, বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরিরা পাহাড়ে প্রচণ্ড প্রভাবশালী, সে জন্য ওঁদের বাইরে রেখে বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে হবে বলে তাঁদের মনে হয় না। তিনি বলেন, ‘‘তাই আমরা দ্রুত গুরুঙ্গ সহ যে সব নেতার নাম চার্জশিটে রয়েছে, তাঁদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।’’

এই পরিস্থিতিতে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থাতেই পড়েছেন গুরুঙ্গেরা। শুক্রবার চার্জশিট পেশের খবর মেলার পরে গুরুঙ্গ ও তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠ নেতারা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরে গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে আলোচনা। তাঁরা প্রত্যাশা করেছিলেন, পাহাড়ের মানুষ এই ঘটনায় প্রতিবাদ করবেন। তা-ও হয়নি। এর পরে তাই চার্জশিটকে
গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আন্দোলনে নামলে কতটা কী সাড়া মিলবে, তা নিয়েও দলের অন্দরে সংশয় রয়েছে। তাই এখনই আন্দোলনে না গিয়ে আপাতত আইনি পরামর্শদাতাদের সাহায্যই নেওয়া হচ্ছে। যাতে অন্তত, গুরুঙ্গদের গ্রেফতার হওয়াটা রোখা যায়।

ঘটনাচক্রে, মোর্চার নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের অনেকেও দলের নেতাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন। এ দিন সকাল থেকে দার্জিলিঙের সিংমারির মোর্চার সদর দফতরে ছিল ফাঁকা। লালকুঠি ও ভানু ভবনে জিটিএ প্রধানের অফিস ছিল তালাবন্ধ। শনিবার ছুটির দিন হলেও গুরুঙ্গ মাঝে মধ্যে গিয়ে বসে কাজ করেন। জিটিএ-র কর্মী তথা মোর্চা প্রভাবিত সংগঠনের এক নেতা জানান, আসলে মদন তামাঙ্গ খুনের মামলাটি পাহাড়বাসীর কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সে জন্যই নেতাদের খুব মেপে পা ফেলতে হচ্ছে বলে তাঁর ধারণা।

বস্তুত, জনসভার মধ্যে হামলা চালিয়ে গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাঙ্গকে গলা কেটে খুন করার সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য আজও ভুলতে পারেনি পাহাড়। ঘটনার পরে প্রায় গোটা পাহাড় গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে রাস্তায় নেমেছিল। বাম আমলের সেই ঘটনার পরে গুরুঙ্গ দার্জিলিঙে ঢুকতে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছিলেন। মহাকরণে নির্দেশে পুলিশি ঘেরাটোপে গুরুঙ্গ সে যাত্রায় খাসতালুকে পৌঁছতে পারেন। এখন নবান্ন থেকে দিল্লি, কোথাও যে সহজে দাঁত ফোটানো যাচ্ছে না, তা একান্তে জানান মোর্চার অনেক নেতাই। ফলে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে কী ভাবে আগের মতো নিশ্চিন্ত ঘুম হবে তারই উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri GJM CBI GTA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE