Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গুরুঙ্গকে ‘চ্যালেঞ্জ’ জিএনএলএফ নেতাদের

কারও অভিযোগ, গুরুঙ্গরা মানুষকে প্রতারিত করেছেন, কেউ দাবি করলেন পাহাড়বাসীকে দুর্ভোগে ঠেলে দিয়ে গুরুঙ্গ সিকিমে দিব্যি আছেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মহেন্দ্র ছেত্রী বললেন, ‘‘বিমল গুরুঙ্গের যদি সত্যি গোর্খাল্যান্ড দাবির প্রতি সততা থেকে থাকে, তবে তিনি সামনে আসুন।

অনির্বাণ রায়
তিনধারিয়া (কার্শিয়াং) শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিমল গুরুঙ্গের নেতৃত্বে সব দলের সমন্বয় মঞ্চ এখন অতীত। প্রকাশ্য সভায় গুরুঙ্গের নেতৃত্বকে কার্যত ‘চ্যালেঞ্জ’ জানালেন জিএনএলএফ নেতারা।

কারও অভিযোগ, গুরুঙ্গরা মানুষকে প্রতারিত করেছেন, কেউ দাবি করলেন পাহাড়বাসীকে দুর্ভোগে ঠেলে দিয়ে গুরুঙ্গ সিকিমে দিব্যি আছেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মহেন্দ্র ছেত্রী বললেন, ‘‘বিমল গুরুঙ্গের যদি সত্যি গোর্খাল্যান্ড দাবির প্রতি সততা থেকে থাকে, তবে তিনি সামনে আসুন। জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন কেন?’’ গুরুঙ্গের ডাকা বন্‌ধ তুলে মহালয়ার দিন থেকে পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক করার ডাকও দেওয়া হল। শুক্রবার কার্শিয়াং মহকুমার তিনধারিয়ায় মিছিল এবং সভা করল জিএনএলএফ। সভায় মোর্চা সমর্থক দেড়শো পরিবারের হাতে সবুজ পতাকা তুলে দিয়ে দলে যোগ দেওয়ালেন জিএনএলএফ নেতারা। দলের নেতাদের একাংশের দাবি, পাহাড়ের হারানো জমি পেতে আপাতত গুরুঙ্গকে আক্রমণের পথেই হাঁটবে দল। দু’এক দিনের মধ্যেই মিরিক এবং কালিম্পঙে সভার কথাও ঘোষণা করেছে জিএনএলএফ।

এক সময়ে জিএনএলএফের ‘খাস তালুক’ বলে পরিচিত তিনধারিয়াতেও মোর্চার উত্থানে সংগঠন তলানিতে পৌঁছেছিল। শুক্রবার দলের মিছিলে ভিড় দেখে উজ্জীবিত দলের নেতারা। তিনধরিয়া জুড়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সবুজ পতাকা নিয়ে মিছিল হয়। স্লোগান ওঠে ‘জনতার নেতা’ সুবাস ঘিসিঙ্গ অমর রহে। বর্তমানে দলের নেতা মন ঘিসিঙ্গের নামেও জিন্দাবাদ স্লোগান ওঠে।

পথে: তিনধারিয়ায় শুক্রবার জিএলএলএফের মিছিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, পাহাড়ে ঘিসিঙ্গের নামে স্লোগান তুলে এত বড় মিছিল সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। গোর্খা হিল কাউন্সিলের প্রাক্তন সদস্য ইন্দ্র নারায়ণ প্রধান গুরুঙ্গকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আপনি মানুষকে মিথ্যে আশা দেখিয়ে প্রতারণা করেছেন। সুবাস ঘিসিঙ্গ ছিলেন জনতার নেতা আর বিমল গুরুঙ্গ লুকিয়ে থাকা নেতা।’’ যুব নেতা রমেশ লিম্বুর মন্তব্য, ‘‘গুরুঙ্গের নাকি সিংহের মতো মেজাজ। কিন্তু পাহাড়ের সিংহ এখন জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে।’’ যা শুনে হাততালিও পড়েছে দেদার।

বন্‌ধের বিরুদ্ধে আগেও জিএনএলএফের নেতারা মুখ খুলেছিলেন। এ দিন জিএনএলএফের মিছিল দেখে তিনধারিয়ার বেশ কিছু দোকান খুলে যায়। মোমো-আলুর দমের দোকান খুলতেই দেদার বিক্রি শুরু হয়। অনিতা রাই, পুজা ওয়াইবা দু’জনে দোকান চালান। অনিতা বলেন, ‘‘পুজোর সময় চলে এসেছে। এখন যদি দু-একটা পয়সা রোজগার না করি তবে তো বাচ্চাদের পুজোর জামাও দিতে পারব না।’’ বাসিন্দাদের এই মনোভাবের কথা বুঝেই এ দিন বারবার বনধ তোলার কথা বলেছেন নেতারা। ইন্দ্র নারায়ণ সাফ বলেন, ‘‘মহালয়ার থেকে পাহাড়ে কোনও বন্‌ধ চলবে না। সব দোকান খুলিয়ে দেব।’’ মহেন্দ্র ছেত্রী বলেন, ‘‘আলোচনা আর আন্দোলন একসঙ্গে চলতে পারে না। আলোচনা যখন শুরু হয়েছে তখন পাহাড়ের জনজীবন দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে।’’

ছন্দে: রাস্তার ধারের দোকানে চলছে মোমো তৈরি। —নিজস্ব চিত্র।

জিএনএলএফের দাবি, মিছিল এবং সভায় অন্তত দু’হাজার সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় একটি কমিউনিটি হলে মোটা চালের ভাত-ডাল এবং আলুর সব্জি রান্না হয়েছে। হেঁসেলে উকি দিয়ে জানা গেল হাজারখানেক কর্মী-সমর্থক পাত পেড়ে খেয়েছেন সেখানে। সকালে মিছিলের পরে থেকে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সভা হয়েছে। পুরো এলাকা সবুজ পতাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। গুরুঙ্গদের আত্মগোপনের পরে পুলিশি ধরপাকড় বেড়ে যাওয়া এলাকায় মোর্চার স্থানীয় নেতাদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না বলে বাসিন্দারা দাবি করলেন। তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মোর্চার কিছু পোস্টার দেখা গেল দেওয়ালে, পতাকাও চোখে পড়ল। বৃষ্টির জল পোস্টার ছিঁড়ে দিয়েছে, পতাকাও বিবর্ণ। নেতা-হীন দলের কর্মীরাও ধীরে ধীরে পোস্টার-পতাকা লাগানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এমন চর্চাই চলছে তিনধারিয়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE