Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মিড ডে মিলে এ বার থালাও দেবে সরকার

বই-খাতার সঙ্গে ব্যাগে নিত্য সঙ্গী হত থালা। সে থালা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিনতে হত নিজেদেরই। এ বার মিড ডে মিলের খাবার খাওয়ার জন্য থালা ও গ্লাস দিচ্ছে সরকার। থালা ও গ্লাস পাওয়ায় সুবিধে যেমন হবে, তেমনই কিছু অসুবিধের দিকও উঠে আসতে পারে বলে আশঙ্কা স্কুল কর্তৃপক্ষের।

এত দিন বাড়ি থেকেই থালা নিয়ে আসতে হত।—ফাইল চিত্র।

এত দিন বাড়ি থেকেই থালা নিয়ে আসতে হত।—ফাইল চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

বই-খাতার সঙ্গে ব্যাগে নিত্য সঙ্গী হত থালা। সে থালা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিনতে হত নিজেদেরই। এ বার মিড ডে মিলের খাবার খাওয়ার জন্য থালা ও গ্লাস দিচ্ছে সরকার। থালা ও গ্লাস পাওয়ায় সুবিধে যেমন হবে, তেমনই কিছু অসুবিধের দিকও উঠে আসতে পারে বলে আশঙ্কা স্কুল কর্তৃপক্ষের। থালা রাখা হবে কোথায়? স্কুলে রাখলে চুরির ভয়। ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি নিয়ে যেতে দিলে অষ্টম শ্রেণির পর তা যদি ছাত্রছাত্রীরা ফেরত না দেয়! তবে নতুন থালা গ্লাস পাওয়ায় সব কিছু ছাপিয়ে উঠেছে আনন্দও।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গল মহলে ইতিমধ্যেই থালা ও গ্লাসের জন্য টাকা দিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। নতুন থালা ও গ্লাস কিনে ব্লক থেকে স্কুলে স্কুলে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে মাওবাদী উপদ্রুত ১১টি ব্লকের বাইরের স্কুলগুলি এখনও থালা-গ্লাস পায়নি। শীঘ্রই তাঁদেরও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। তিনি বলেন, “মিড ডে মিলের খাবার খাওয়ার জন্য সরকার ছাত্রছাত্রীদের নতুন থালা ও গ্লাস দিচ্ছে। জঙ্গলমহলে আগেই আমরা দিয়েছি। এবার ধীরে ধীরে সব স্কুলেই তা দিয়ে দেওয়া হবে।”

মাওবাদী উপদ্রুত শালবনি ব্লকের স্কুলগুলি ইতিমধ্যেই নতুন থালা-গ্লাস পেয়ে গিয়েছে। আগে বেশিরভাগ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের টাকায় থালা কিনে আনতে হত। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য স্কুল কিনে দিয়েছিল। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্কুল কিছু কিনতে পারলেও বাকি কিনতে হয়েছিল ছাত্রচাত্রীদেরই।

মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ যেমন কিছু ছাত্রছাত্রীকে কিনে দিলেও সবাইকে তা দিতে পারেনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, “স্কুলের তহবিল কম তো। তাই সবাইকে কিনে দিতে পারিনি। এ বার সরকার থেকে দেওয়ায় সবাই নতুন থালা ও গ্লাস পেল।” ছাত্রছাত্রীদের তা বিলিও করে দেওয়া হয়েছে। স্কুল শেষে বাড়ি নিয়ে যাবে। স্কুলে আসার সময় বই-খাতার সঙ্গে থালা ও গ্লাস নিয়ে আসবে। কেন এই পরিকল্পনা? প্রধান শিক্ষকের কথায়, “স্কুলে এত থালা গ্লাস রাখব কী ভাবে? তাছাড়া ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা, এটা আমার থালা, ওটা তার গ্লাস বলে নিত্য ঝগড়াও করতে পারে। সে সমস্যা মেটাতে গিয়ে মিড ডে মিলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বসবে। তাই হাতে দিয়ে দিয়েছি।” অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উঠে গেলে ছাত্রছাত্রীরা মিড ডে মিলের আওতায় বাইরে যাবে। তখন কী হবে? প্রধান শিক্ষক বলেন, “অষ্টম শ্রেণি শেষে ফেরত দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।” যদিও সে সময় আসেনি। তখন বোঝা যাবে ফেরত দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হল কিনা।” এই ঝক্কি এড়াতে ভাদুতলা হাইস্কুল স্কুলেই থালা ও গ্লাস রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “ছাত্রছাত্রীরা খাবার পরে ধুয়ে দিচ্ছে। রান্নার দায়িত্বে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠী খাবার সময় থালা বের করে দিচ্ছে। কোনটা কার থালা বা গ্লাস, তা নিয়ে এখনও কোনও বিতর্ক বাধেনি।”

যে সব স্কুল এখনও পাননি তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন কবে পাবেন, সেই আশাতে। তারই সঙ্গে নতুন থালা-গ্লাস নিয়ে কী করবেন, তা নিয়েও চিন্তায়। প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অনেক গরিব ছাত্রছাত্রী রয়েছে। যাদের থালা কেনার ক্ষেত্রেও সমস্যা। এক্ষেত্রে নতুন থালা-গ্লাস ভীষণ কাজে লাগবে। কিন্তু তা ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে দেওয়া হবে নাকি স্কুলে রাখবেন—তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে লক্ষীপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাণ্ডের কথায়, “স্কুলে যদি চুরি হয়ে যায়। তখন এত থালা-গ্লাস স্কুল থেকে কিনে দেব কী ভাবে? তাই সে সব ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে দেব। স্কুল থেকে দিলে কোনটা কার থালা তা নিয়েও ঝক্কি এড়ানো যাবে।” ব্যাগ ভর্তি বইয়ের সঙ্গে থালা নিতে অসুবিধে হচ্ছিল না। গ্লাসটা যেন ব্যাগের মধ্যে মানাসই লাগছে না। ছাত্রছাত্রীদের সমস্যাটা শুধু এটাই। তবে নতুন নতুন হওয়ায় স্কুলের ব্যাগের মধ্যে থালা-গ্লাস নিয়ে চলেছে প্রায় সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Plate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE