Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
খড়্গপুরে সতর্কবার্তা নেতৃত্বের

‘ভারতী-পর্ব’ শেষ হতেই তৃণমূলে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব!

‘ভারতী-জমানা’ শেষ হতেই ফের খড়্গপুরে মাথাচাড়া দিচ্ছে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল। ফেসবুকের দেওয়াল থেকে দলের বৈঠক— পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলা নেতৃত্বের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এই দ্বন্দ্ব। খ়ড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের জেলা নেতা দেবাশিস চৌধুরীর গোষ্ঠীর কোন্দল নতুন কিছু নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫২
Share: Save:

পুলিশ সুপার পদে থাকাকালীন ‘বকলমে’ তিনিই শাসকদল চালাতেন বলে অভিযোগ উঠত। তাঁর ‘ভয়ে’ মুখে কুলুপ এঁটে থাকতেন তৃণমূলের তাবড় নেতারাও। ভারতী ঘোষকে জেলার পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ‘উলট-পুরাণ’।

‘ভারতী-জমানা’ শেষ হতেই ফের খড়্গপুরে মাথাচাড়া দিচ্ছে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল। ফেসবুকের দেওয়াল থেকে দলের বৈঠক— পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলা নেতৃত্বের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এই দ্বন্দ্ব। খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের জেলা নেতা দেবাশিস চৌধুরীর গোষ্ঠীর কোন্দল নতুন কিছু নয়। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, খড়্গপুরে শাসকদলের একটি গোষ্ঠীকে ভারতীদেবী ‘মদত’ দিতেন। কেউ এ সব নিয়ে মুখ খুললেই থানায় ডেকে পাঠিয়ে ‘শাসানো’ হত বলেও অভিযোগ। ফলে সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি কোন্দল।

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, দেবাশিসবাবু ও জহরলালবাবুর গোষ্ঠীর কোন্দল এখন কিছুটা হলেও কমেছে। ২০১৫ সালে প্রদীপ সরকার খড়্গপুরের পুরপ্রধান হওয়ার পর থেকেই পাশা উল্টোতে শুরু করে। পুরপ্রধান হওয়ার আগে পর্যন্ত দেবাশিসবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন প্রদীপবাবু। পরে তাঁদের ‘দূরত্ব’ ক্রমে বাড়তে থাকে। প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর সঙ্গে দেবাশিসবাবুর সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। তৃণমূলের সভায় দেবাশিসবাবুকে পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও দেখা যায়।

আরও পড়ুন: সব চাইলে কী করে হবে: মমতা

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, ‘ভারতী-জমানায়’ কেউ এ বিষয়ে কিছু বলার সাহস করেননি। ভারতীদেবী জেলা ছাড়তেই সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে বলে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মত। রেলশহরে শাসকদলের দু’পক্ষের সমর্থকদের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি পৌঁছেছে ফেসবুকের দেওয়ালেও। কেউ দেবাশিস চৌধুরীর সঙ্গে ভারতী ঘোষের করমর্দনের বিতর্কিত ছবি পোস্ট করছেন ফেসবুকে। কেউ আবার পোস্ট করছেন শহরে অশান্তি ছড়ানোয় অভিযুক্ত এক আরএসএস নেতার সঙ্গে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের ছবি। খড়্গপুরের পুরপ্রধান পদ নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি শহরের রামমন্দিরে এক দলীয় বৈঠকে কোন্দল মাত্রা ছাড়ায় বলে শাসক দলের এক সূত্রে খবর।

দেবাশিসবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত যুব নেতা রাজা সরকারের অভিযোগ, “রামমন্দিরে দলের শহর কমিটির বৈঠকের পরেই দলবিরোধী মন্তব্য করছেন প্রদীপ সরকারের ঘনিষ্ঠরা।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এর জবাব দিতেই তিনি ফেসবুকে ছবি-সহ মন্তব্য করেছেন। তবে আর করবেন না।” প্রদীপবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত সোহম ঘোষ ভারতীদেবীর সঙ্গে দেবাশিসবাবুর বিতর্কিত ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। সোহম অবশ্য বলছেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমার দলের নেতারা এ নিয়ে মন্তব্য করবেন।”

কোন্দল বাড়লেও দুই শিবিরের ‘মাথা’ অবশ্য দায় ঝেড়ে ফেলতেই চাইছেন। দেবাশিসবাবু বলছেন, “যে কেউ ফেসবুক করতে পারে। তবে ফেসবুক বা অন্য সোশাল মিডিয়ায় কখনও দলের নেতা বা দলবিরোধী মন্তব্য করা উচিত নয়। যাঁরা এটা করছে ঠিক করছে না। দল ব্যবস্থা নেবে।” প্রদীপবাবুর কথায়, “ফেসবুকে যাঁরা দল বিরোধী কার্যকলাপ করছে তাঁদের ক্ষেত্রে দল ব্যবস্থা নেবে। যেই এ ধরনের কাজ করে থাকুক ঠিক করেননি।”

কোন্দল লাগাম ছাড়া হওয়ার আগেই হাল ধরতে শুক্রবার বৈঠক করেন তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে। বৈঠকে ছিলেন দেবাশিসবাবু, জহরলালবাবু, প্রদীপবাবু-সহ নেতৃত্ব। সকলকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ, শনিবার এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও ডেকেছে তৃণমূল। রবিশঙ্করবাবু বলেন, “দলবিরোধী কোনও কাজ দল মেনে নেবে না। যাঁরা ফেসবুকে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। আমরা কী পদক্ষেপ করব, সাংবাদিক বৈঠকে সে বিষয়ে জানিয়ে দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE