গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৬ থানায় বসে বড়বাবু অরবিন্দ কুমারের গালে হাত। তিনি সম্ভবত এটাই ভেবে চলেছেন যে, কী কুক্ষণেই না রুম্পা বিবিকে গ্রেফতার করতে গেলাম!
রুম্পার জন্য অরবিন্দের থানার তিন পুলিশকর্মী এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছেন দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে, কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। ৩০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ রুম্পা সুস্থ হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত গুরুগ্রাম পুলিশের দলটিকে থাকতেই হবে কলকাতায়। ‘‘দাদা, ভীষণ ফেঁসে গিয়েছি,’’ শুক্রবার ফোনে বললেন অরবিন্দ।
শুক্রবার অস্ত্রোপচারের পরেও রুম্পাকে কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। অরবিন্দ জানান, কলকাতা থেকে রুম্পাকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দগ্ধ রোগীকে স্থানান্তরিত করা যায় না।
রুম্পা হলদিয়ার ঝিকুরখালির বাসিন্দা। অভিযোগ, গুরুগ্রামের বিজেপি নেতা, আটটি ইটভাটার মালিক সুশীল কুমারের পরিচারিকা রুম্পা ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে আসেন। গত ১০ জানুয়ারি গুরুগ্রামের থানায় অভিযোগ করেন সুশীল। এএসআই দিলীপ সিংহ দু’জন মহিলা এবং দু’জন পুরুষ কনস্টেবলকে নিয়ে রুম্পাকে খুঁজতে ১৭ জানুয়ারি পৌঁছন হলদিয়ায়।
রুম্পা এবং তাঁর স্বামী আফতাবুলকে গ্রেফতার, তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে দু’লক্ষ ৭০ হাজার এবং এক লক্ষ ১২ হাজার টাকা উদ্ধার, হলদিয়া মহকুমা আদালত থেকে দু’জনের ট্রানজিট রিমান্ডের অনুমতি— সব কিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছিল। কিন্তু গ্রেফতারের পরের দিন, ১৮ জানুয়ারি গুরুগ্রাম রওনা হওয়ার আগে রুম্পা দুর্গাচক থানার শৌচালয়ে গিয়ে নিজের গায়ে আগুন দেন। অগ্নিদগ্ধ রুম্পাকে হলদিয়া ও তমলুক হাসপাতাল ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে।
দিলীপের সঙ্গে আসা দুই পুরুষ কনস্টেবলকে দিয়ে ১৯ জানুয়ারি আফতাবুলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গুরুগ্রাম। আফতাবুল এখন গুরুগ্রামের জেলে বন্দি। রুম্পাকে পাহারা দিতে দুই মহিলা কনস্টেবলের সঙ্গে কলকাতায় থেকে হয়েছে দিলীপকে। তিনি জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে তাঁদের প্রতিটি রাত কাটছে এসএসকেএম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বেঞ্চে। ব্যবহার করতে হচ্ছে হাসপাতালের শৌচালয়। খাওয়াদাওয়া বাইরে। প্রথমে যে-দুই মহিলা কনস্টেবল মণিকা ও শিক্ষা পাহারায় ছিলেন, তাঁরা দিন চারেক পরেই কান্নাকাটি জুড়ে দেন। গুরুগ্রামে তাঁদের দু’জনেরই বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে। মা ছাড়া তাদের সামলানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল।
অনেক কাকুতিমিনতি, চিঠিচাপাটির পরে ২ ফেব্রুয়ারি মণিকা ও শিক্ষার ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। তাঁদের জায়গায় এসেছেন প্রবীণা ও মণিষ্কা নামে দু’জন। হলদিয়া আদালত জানায়, হাসপাতাল ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দিলে তার দু’দিন পরে গুরুগ্রামে আদালতে তুলতে হবে রুম্পাকে।
ফলে কলকাতায় অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই গুরুগ্রাম পুলিশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy