Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ই-প্রেসক্রিপশন কোথায়, চিন্তিত স্বাস্থ্যকর্তারা

চিকিৎসায় স্বচ্ছতা রাখতে কখন কোন ওষুধ, কতটা দেওয়া হচ্ছে তার রেকর্ড রাখার জন্য ই-প্রেসক্রিপশন চালু করতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা ই-প্রেসক্রিপশনে সহজেই ধরা পড়ে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

চিকিৎসায় স্বচ্ছতা রাখতে কখন কোন ওষুধ, কতটা দেওয়া হচ্ছে তার রেকর্ড রাখার জন্য ই-প্রেসক্রিপশন চালু করতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা ই-প্রেসক্রিপশনে সহজেই ধরা পড়ে।

গত বুধবার টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ওই নির্দেশের পরে স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা কিছুটা আতঙ্কে। কারণ, সরকারি হাসপাতালগুলিতে ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ই-প্রেসক্রিপশন চালুর যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা সর্বত্র কার্যকরই করা যায়নি। উল্টে যেখানে যেখানে পরীক্ষামূলক ভাবে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল সেখানেও তা টিমটিম করছে।

সরকারি হাসপাতালে ই-প্রেসক্রিপশন চালুর পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন অডিটের নির্দেশও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি হাসপাতালের ফার্মাকোভিজিল্যান্স টিম আচমকা ই- প্রেসক্রিপশনগুলি খতিয়ে দেখবে। হাসপাতাল অযথা বেশি ওষুধ বিশেষত অ্যান্টিবায়োটিক লিখলে বা ব্র্যান্ড নেম-এ ওষুধ লিখলে অথবা হাসপাতালের স্টোরে আসে না এমন ওষুধ লিখলে অডিটে ধরা যাবে। এমআর বাঙুর হাসপাতাল, হাওড়া জেলা হাসপাতাল, এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগে শুরু হয়েছিল ই-প্রেসক্রিপশন ও প্রেসক্রিপশন অডিট।

তিন বছরে কী হাল সেই পরিষেবার? ওই চার হাসপাতালের ই-প্রেসক্রিপশন ব্যবস্থা কেমন চলছে, খতিয়ে দেখতে গিয়ে হতবাক স্বাস্থ্য ভবন। নতুন করে শুরু করা দূরে থাক, যেখানে যেখানে পাইলট প্রকল্প হিসাবে ই-প্রেসক্রিশন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল তার অধিকাংশতেই এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেমন হাওড়া জেলা হাসপাতাল ও এমআর বাঙুর হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও ই-প্রেসক্রিপশনের উপরে মুখ্যমন্ত্রী জোর দেওয়ায় পরেই প্রমাদ গুনেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

স্বাস্থ্যভবনে বৃহস্পতিবার এই নিয়ে দফায়-দফায় বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কত দ্রুত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ই-প্রেসক্রিপশন চালু করে অন্তত মুখরক্ষা করা যায়, সেই পথ খুঁজছেন তাঁরা। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন যদি বেসরকারি হাসপাতালগুলো বলে বসে, সরকারি হাসপাতালে ই-প্রেসক্রিপশন ব্যবস্থা ঠিক নেই অথচ মুখ্যমন্ত্রী শুধু আমাদের খুঁত ধরছেন, তা হলে মুখ লুকনোর জায়গা থাকবে না।’’

আরও পড়ুন:
৩৪০ কোটির লগ্নি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে

হাওড়া হাসপাতালে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেল, হাতেই চলছে প্রেসক্রিপশন লেখা। আর তা লেখার সময় কিছু চিকিৎসক তাতে টুকটাক ব্র্যান্ড নেম-ও লিখে দিচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানালেন, অর্থোপেডিক্স, সাইকিয়াট্রি, ইএনটি, অঙ্কোলজির মতো বিভাগে ই-প্রেসক্রিপশন কার্যত হয় না। কেন? অন্য বিভাগের এক চিকিৎসক কিছুটা রহস্য করে বলেছেন, ‘‘ওই সব বিভাগে যে সব রোগের চিকিৎসা হয়, তাতে ওষুধের দাম বেশি। বাকিটা বুঝে নিন।’’ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কারও কারও অভিযোগ, প্রয়োজন না থাকলেও রোগীদের বাইরে থেকে দামি টেস্ট করতে বলা, স্টোরে নেই এমন ওষুধ প্রয়োজন না থাকলেও লেখা—এই সব ই প্রেসক্রিপশনে করা যাচ্ছিল না।

হাওড়া হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘ভিড়ের মধ্যে সবসময় সব জায়গায় ই-প্রেসক্রিপশন করা সম্ভব নয়।’’

এমআর বাঙুর হাসপাতালে এক বছর হতে চলল ই-প্রেসক্রিপশন পুরো বন্ধ। সুপার তাপস ঘোষ তা মেনেও নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘৮-৯ মাস হল এসেছি। তার আগে থেকেই এটা বন্ধ। এখানে যে বিষয়টি চালু ছিল তা কেউ আমাকে বলেনি।’’

এমতাবস্থায় কী করবে স্বাস্থ্য ভবন? সেখানে ই-প্রেসক্রিপশনের বিষয়টি দেখভাল করেন অতিরিক্ত সচিব (আইটি) দেবাশিস বসু। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘সব কিছু ঠিকঠাক চলছে।’’

কী এবং কেন?

• হাতে না লিখে প্রেসক্রিপশন করা হয় কম্পিউটারে

• তা সংরক্ষিত থাকে এবং ডাক্তার ও রোগী প্রয়োজন মতো খুলে দেখতে পারেন বা প্রিন্ট নিতে পারেন

• হারিয়ে যাওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না

• রোগীর মেডিক্যাল হিস্ট্রি প্রয়োজনে সহজে জানা যায়

• যে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করছেন তাঁর নাম স্পষ্ট হরফে থাকে

• সরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে সাধারণত স্টোরের সঙ্গে ই-প্রেসক্রিপশনের সফটঅয়্যার যুক্ত থাকার কথা

• তাতে কোন ওষুধ হাসপাতালের ভাঁড়ারে রয়েছে তা দেখে সেই অনুযায়ী ওষুধ লেখা যায়

• ফলে রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয় না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

E Prescription Health Authority
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE