Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ মামলা গ্রহণ করল হাইকোর্ট

অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগকে অসাংবিধানিক বলে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি মামলা বৃহস্পতিবার গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ২০:২৭
Share: Save:

অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগকে অসাংবিধানিক বলে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি মামলা বৃহস্পতিবার গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

১৯৯৪ সালের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইনের ৩ নম্বর ধারা ২ নম্বর উপধারাটি (যে ধারায় আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিযুক্ত করেছেন রাজ্যপাল) সংবিধান সম্মত নয় বলে এ দিন সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। আবেদনকারীদের আর্জি ছিল, অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার যেন গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, সেই ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিক আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করলেও, অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাজ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কোনও নির্দেশ দেননি। মামলার মূল বিষয়ের শুনানি চলবে।

অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলাপনবাবু স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন না বলে এ দিন আদালতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সমরাদিত্যবাবু। সেই সময় বিচারপতি দত্ত পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এক জন সরকারি অফিসার ‘স্বাধীন’ ভাবে কাজ করতে পারবেন না, আগাম এই আশঙ্কা করা হচ্ছে কেন?’’ সমরাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘ওই অফিসার এখনও সরকারের অধীনেই কাজ করেন। সেই কারণে একেবারে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভাবে তাঁকে কাজ করতে দেওয়া না-ও হতে পারে।’’

সমরাদিত্যবাবু আদালতকে বলেন, ‘‘প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ইস্তফা দিয়েছেন, তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কেউ রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাজ করতে না পারলে ধরে নিতে হবে দেশের সংবিধান ধর্ষিত হচ্ছে।’’ বিচারপতি দত্ত মন্তব্য করেন, ‘‘কেউ যদি চাপ সহ্য করতে না পারেন, তা হলে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া তাঁর আর কী-ই বা করার থাকে। তবে প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এ ক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারতেন।’’

একই সঙ্গে বিচারপতি দত্তের প্রশ্ন, ‘‘সংবিধানে কি বলা আছে, কে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হতে পারেন?’’ সমরাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘না, তা বলা নেই। তবে সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভারতের নির্বাচন কমিশনের সমতুল্য।’’ তা জেনে বিচারপতি দত্ত সমরাদিত্যবাবুকে নির্দেশ দেন, কারা ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত হন, তাঁর দুই সহকারীই বা কারা নিযুক্ত হন তা আদালতকে জানাতে। শুক্রবার বেলা ১২টায় এই মামলার পরবর্তী শুনানির সময়ে তা জানাতে হবে সমরাদিত্যবাবুকে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইন (৩ নম্বর ধারা ২ নম্বর উপধারা) অনুযায়ী আলাপনের নিযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে এ দিনই মামলা দায়ের করেছেন সল্টলেকের বাসিন্দা অমিতাভ মজুমদার। সেই মামলার শুনানিতে সমরাদিত্যবাবু আদালতে আরও জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওই আইনের ধারাটি অসাংবিধানিক। কারণ ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩ জেড-এ ধারা মতে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কারও নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারেন না। তিনি স্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার রায়ে (কিষাণ সিংহ তোমার বনাম মিউনিসিপাল কর্পোরেশন, গুজরাত) সংবিধানের ওই ধারাকেই বহাল রেখেছে‌।

কেন রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইনের ওই ধারাটিকে তিনি অসাংবিধানিক বলছেন, তার ব্যাখ্যা করে সমরাদিত্যবাবু আদালতে বলেন, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও সরকারের অধীনে কর্মরত। তিনি এখনও রাজ্য পরিবহণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি-র পদ থেকে ইস্তফা দেননি। তিনি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। অথচ, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার একা স্বাধীন ভাবে কাজ করবেন। তাঁকে কড়া হাতে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হবে। একই সঙ্গে ওই প্রবীণ আইনজীবী বলেন, ‘‘কোনও রাজ্যের বিধানসভা যখন কোনও আইন তৈরি করবে, সেই সময়ে তাকে দেশের সংবিধান মেনে সেই আইন তৈরি করতে হবে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনী করে যখন ৩ নম্বর ধারা ২ নম্বর উপধারা ঢোকানো হল, তখন সংবিধানের ধারা মেনে তা করা হয়নি।’’ প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জনবাবু কী ভাবে চাপের মুখে পড়েছিলেন, এ দিন আদালতে সেই কথাও জানান প্রবীণ ওই আইনজীবী। তিনি জানান, ৩ অক্টোবরের বিধাননগর পুরভোট কার্যত সুশান্তবাবুর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। রাজ্য সরকার তাঁকে বার বার চাপ দিয়ে বলেছে, এই এই কাজ আপনাকে করতে হবে। তিনি ভোট গণনা স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করতেই রাজ্যের শাসক দলের নেতা, এমনকী মন্ত্রীরা তাঁকে ঘেরাও করে বসলেন। তাঁর উপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করলেন। তাঁকে স্বাধীন ভাবে, নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দেওয়া হল না। চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি ইস্তফাপত্র পেশ করলেন। তাঁর ইস্তফা গৃহীত হওয়ার কথাও মানুষ জানতে পারল না।

সেই সময় রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত আদালতে সরকারের একটি গেজেট দাখিল করেন। তা পড়ে বিচারপতি দত্ত সমরাদিত্যবাবুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘এতে লেখা রয়েছে, সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ খালি হওয়ায় সরকারি অফিসার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যপাল নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করছেন।’’

এ দিন মামলার শুনানির সময় সমরাদিত্যবাবুকে সাহায্য করেন হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও অরুণাভ ঘোষ। তাঁরা পরে অভিযোগ করেন, অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিযুক্তি নিয়ে হাইকোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে জেনেও, রাজ্য সরকারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সল্টলেকের কয়েকটি বুথে পুনরায় ভোট করার কথা ঘোষণা করলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

EC high court by poll court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE