আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত।
যে সব কৌঁসুলি তাঁর ডিভিশন বেঞ্চে মামলা লড়তে ইচ্ছুক, বয়কটকারীরা তাঁদের বাধা দিতে পারেন কি না, বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গুপ্ত। ওই দিন এক নির্দেশ জারি করে তিনি আইনজীবীদের সংগঠনের কাছে জানতে চান, কোন আইনে বাধাদানের এমন অধিকার দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিচারপতি গুপ্ত আইনজীবীদের সংগঠনগুলির কাছে জানতে চাইলেন, কীসের ভিত্তিতে আইনজীবীদের সংগঠনগুলি তাঁর আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত নিল। আগামী সোমবার আইনজীবীদের সংগঠনগুলিকে ওই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
গত ২২ জুলাই থেকে বিচারপতি গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ বয়কট করছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ। যাঁরা ওই আদালতে মামলা লড়তে চান, তাঁদেরও বয়কটকারীরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন বিচারপতি গুপ্ত এক নির্দেশ জারি করে সংগঠনের নেতাদের কাছে এ-ও জানতে চেয়েছেন, যাঁরা তাঁর আদালতে মামলা লড়তে আসা আইনজীবী বা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে আগামী সোমবার তাঁর কাছে পেশ করতে।
হাইকোর্টের প্রবীণ এক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারপতি গুপ্ত যথাযথ আচরণ করেননি বলে অভিযোগ তুলে তাঁর আদালত বয়কট করছেন আইনজীবীদের একাংশ। বিচারপতি গুপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মনজিৎ সিংহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মামলার কেস ডায়েরি ও তদন্তকারী অফিসারদের তাঁর আদালতে হাজির করাতে। বৃহস্পতিবার বেশ কয়েক জন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বিচারপতি গুপ্তের আদালতে হাজির হতে গিয়ে বয়কটকারীদের কাছে বাধা পান বলে অভিযোগ। সেই প্রেক্ষিতেই একটি নির্দেশ জারি করেন বিচারপতি। এ দিনও বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ কয়েক জন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বিচারপতি গুপ্তের হাজির হতে গিয়েছিলেন। এ দিনও তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বাধা দেওয়ার বিষয়টি তাঁর কোর্ট অফিসারদের কাছ থেকে জানতে পেরে বিচারপতি গুপ্ত এ দিন আরও একটি নির্দেশ জারি করেন।
সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বয়কট করা নিয়ে প্রস্তাব পাশ করেছিল হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। কত জন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কত জন সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন। বয়কটের প্রস্তাব সংক্রান্ত যাবতীয় নথিও তাঁর আদালতে পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গুপ্ত। ‘বার লাইব্রেরি’ এবং ‘ইনকর্পোরেটেড ল সোসাইটি’ নামে অন্য দু’টি আইনজীবী সংগঠনও যদি বয়কট নিয়ে কোনও প্রস্তাব নিয়ে থাকে, তা হলে তাদেরও যাবতীয় নথি-সহ তথ্য পেশ করতে হবে।
এ দিন প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা তাঁর একটি মামলার প্রেক্ষিতে বিচারপতি গুপ্তের আদালতে হাজির ছিলেন। কুণালবাবু আদালতে জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, আইনজীবীরা এই ভাবে কোনও আদালত বয়কট করতে পারেন না। আদালত বয়কট হলে প্রয়োজনে আদালত আইনজীবীদের জরিমানা পর্যন্ত করতে পারে। বিচারপতি গুপ্ত তা শুনে ওই চিকিৎসকের উদ্দেশে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে হবে কেন, বয়কট নিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন রায় রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টেরই। বিচারপতি এ-ও জানান, তিনি এত দিন বয়কটকারীদের সময় দিয়েছেন। তাড়াহুড়ো করে বয়কট নিয়ে কোনও রায় দিতে তিনি রাজি নন। আইনজীবী সংগঠনগুলিকে তাদের বক্তব্য পেশের জন্য তিনি সময় দিয়েছেন।
এ দিন বিচারপতি গুপ্তের আদালতে হাজির ছিলেন সারদা-কাণ্ডে ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষের বৃদ্ধ শ্বশুর অসীম সোম। কুণালের জামিনের আবেদনের মামলাটি বিচারপতি গুপ্তের আদালতে দায়ের হয়েছিল। মামলাটি বিচারপতি গুপ্তের আদালত থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন জানান অসীমবাবু। বিচারপতি গুপ্ত জানান, তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘চিট ফান্ড’ সংক্রান্ত কোনও মামলার শুনানি তাঁরা শুনবেন না। তাই কুণাল ঘোষের জামিনের মামলাটিও তাঁরা ছেড়ে দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy