Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুজো যে! শম্পার সঙ্গে উপোস করবে শবনমও

প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হাসানুর কোথায় গেল? সেই তো পুজো কমিটির সম্পাদক। উত্তর এল, মণ্ডপ সাজানোর জোগাড়যন্ত্র করতে গিয়েছে। ব্যস্ত হওয়ার কারণও রয়েছে।

আলোচনা: ফাঁসিদেওয়ার স্কুলের মাঠে চলছে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতির বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।

আলোচনা: ফাঁসিদেওয়ার স্কুলের মাঠে চলছে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতির বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

সরস্বতী পুজোয় খিচুড়ি না ঘিভাত? মাঘের রোদে স্কুলের মাঠে গোল হয়ে বসে শুরু হয়েছে আলোচনা। কে কে হাজির? হাত তুলে এক এক করে নাম বলা শুরু হল—অর্পণা, শম্পা, নৌসাদ, মুসকান, শবনম, ইসরাত...।

প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হাসানুর কোথায় গেল? সেই তো পুজো কমিটির সম্পাদক। উত্তর এল, মণ্ডপ সাজানোর জোগাড়যন্ত্র করতে গিয়েছে। ব্যস্ত হওয়ার কারণও রয়েছে। এ বার পুজো ঘিরে দু’দিনের অনুষ্ঠান। শিলিগুড়ির সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর মুরলীগঞ্জ হাইস্কুলে তাই এখন উপস্থিতির হারও চমৎকার। এমন আনন্দ কে আর ইচ্ছে করে হাতছাড়া করে? স্কুলের পুজোয় ফুল তোলা থেকে রান্না, সব কাজ নিজেদের হাতেই করা। অন্য স্কুলে নিমন্ত্রণ করতে যাওয়া। আর সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানের মহড়া।

ইসরাত একাদশ শ্রেণির। ‘বিহুর এ লগন’ গানের সঙ্গে নাচবে। কী পরবে, তা নিয়েই চিন্তায়। মুসকান আরা বাড়িতে আব্দার করেছে সরস্বতী পুজোতে নতুন শাড়ি চাই। শম্পার সহপাঠী শবনমও সারাদিন উপোস করে পুজোর আয়োজন করবে। পুজোর বাজারের দায়িত্ব হাসানুরের। তার কথায় ‘‘বাবা-মা খুব খুশি।’’

প্রধান শিক্ষক সামসুল জানালেন, এক বছর আগেই কিন্তু একটু গোলমাল হয়েছিল। মিড ডে মিলের খাবার খাওয়ার জন্য স্কুল থেকেই থালা দেওয়া হয়। তাতে রাজি ছিলেন না কিছু অভিভাবক। দাবি ছিল, বাড়ি থেকেই তাঁদের ছেলেমেয়েরা থালা নিয়ে যাবে। তাহলে এক দিন এক জনের খাওয়া থালায় অন্য দিন অন্য জনকে খেতে হবে না। কিন্তু কিছুতেই তা মানতে চাননি সামসুল। তাঁর কথায়, ‘‘থালা ভাল করে ধোওয়া হয়। অস্বাস্থ্যকর কোনও কিছুকেই প্রশ্রয় দেব না।’’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্কুলেরই এক শিক্ষক মজিনুর হেসে ফেলে বলেন, ‘‘বাচ্চাদের মনের স্বাস্থ্যেরও যত্ন করি আমরা।’’

সে কথা শুনতে শুনতেই দেখা গেল, শবনম আর শম্পা ভাগ করে খাচ্ছে ঝুরিভাজা। আর তারপরে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে গেল, ‘‘আরে দূর! কতবার এর ওর খাতা দেখে লিখেছি। আমার জামা ও পরেছে, ওরটা আমি। খাবার খেলেই দোষ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE