বিভিন্ন বিষয়ে অনেক রাজ্যই পশ্চিমবঙ্গকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। তবে এইচআইভি-র মতো রোগ সম্পর্কে সতর্কতা-সচেনতায় এবং ছুতমার্গ বিসর্জনে বাংলা অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্তরের স্বাস্থ্য সমীক্ষা।
কী ভাবে সেটা সম্ভব হল?
স্বাস্থ্য-শিক্ষা কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, মূলত সচেতনতা বৃদ্ধির ফলেই ছুতমার্গের উপরে ওঠা সম্ভব হয়েছে এবং হচ্ছে। রোগকে ঘৃণা করো, রোগীকে নয়— এই সুবচনের শিক্ষাই এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। পানিপথের যুদ্ধ এবং আলোর গতিবেগের পাশাপাশিই প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ এবং ছুতমার্গ সম্পর্কে খুঁটিনাটি শেখানো হয়েছে স্কুলে। এইচআইভি সংক্রমণের মতো প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করা হচ্ছে স্কুল স্তরেই। তার জেরেই এ রাজ্যে এড্স সম্পর্কে ধারণা বদলে গিয়েছে, কমেছে ছুতমার্গের প্রবণতাও।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে (২০১৫-’১৬)-র সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট জানাচ্ছে, এ রাজ্যে মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি এবং এর ছুতমার্গ সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০০৫-’০৬ সালের তথ্য অনুসারে গ্রামীণ মহিলাদের মধ্যে মাত্র ৯.৮% এই বিষয়ে সচেতন ছিলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সচেতনতার হার বেড়ে হয়েছে ১৬.১%। সচেতনতা বেড়েছে গ্রামের পুরুষদেরও। আগে ১৪.৬% পুরুষ এই রোগ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। এখন তা ২০.২%। এগিয়েছে শহরও। শহুরে পুরুষ এবং মহিলারাও এই রোগ সম্পর্কে সতর্ক হয়েছেন।
সচেতনতা বাড়ায় গোটা দেশেই এইচআইভি-আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ২০১৫ সালে সংখ্যাটা ছিল ২১ লক্ষ ১৬ হাজার ৫৮১। ২০১৬ সালে সেটা কমে হয় ২১ লক্ষ ১০ হাজার ২১। ২০১৭-য় ২১ লক্ষ ছ’হাজার ৭০৬। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪৮৩২ জন আক্রান্ত। ২০১৮ সালে এ-পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত নতুন ৬৪৩২ জনের খোঁজ মিলেছে। চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। সেখানে সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে আঠাশ হাজার। বাংলার অগ্রগতি এই পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট।
এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কন্ডোমের প্রয়োজন সম্পর্কেও সচেতনতা বেড়েছে বাংলায়। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৯.৭% গ্রামীণ এবং ৬৩.১ শহুরে মহিলা এই বিষয়ে সচেতন হয়েছেন। গ্রামের ৮০.৭ এবং শহরের ৮৬.৩% পুরুষ কন্ডোমের প্রয়োজন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই ছবি গোটা দেশের থেকে অনেকটাই আশাপ্রদ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্যান্য রাজ্যে, বিশেষত গ্রামে মহিলাদের এইচআইভি সম্পর্কে সচেতনতা এবং কন্ডোম ব্যবহার সম্পর্কে সতর্কতা কমেছে। বেড়েছে ছুতমার্গ। গোটা দেশে ২০১৫-’০৬ সালে গ্রামীণ মহিলাদের সচেতনতার হার ছিল ১৭.৩%। সেটা কমে ১৬.৭% হয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও কমেছে রোগ সম্পর্কে সচেতনতার হার।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগেও এড্স নিয়ে ছুতমার্গ ছিল। বাবার এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়ায় মেয়েকে স্কুল ছাড়ার ফরমান জারির মতোও ঘটনা ঘটেছে। সরকারের উদ্যোগে সচেতনতার পাঠ বদলের ফলে পাল্টেছে ছবি। প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি কৈশোর থেকেই রোগ সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রোগ সম্পর্কে তথ্য থাকছে স্কুলের পাঠ্যবইয়েও। স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালা চালিয়েছেন দফতরের কর্তারা। ওই শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দেওয়ায় বদলেছে সচেতনতার ছবি।’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, এইচআইভি-তে আক্রান্ত কিংবা তাঁর পরিজনদের একঘরে করে রাখার ঘটনা রুখতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হত। পরিস্থিতি বদলাতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করতেন। কমিউনিটি লেভেলে লাগাতার প্রচার চালান অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাও। মহিলাদের নিয়ে কর্মশালা চালানো হয়েছে। রোগ-সচেতনতার সামগ্রিক বৃদ্ধি সেই বহুমুখী চেষ্টারই ফল, জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy