Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিকিমকে প্রকাশ্যে হুমকি বিনয় তামাঙ্গের

 দেড় ঘণ্টার বক্তৃতা। তার মধ্যে এক ঘণ্টা জুড়ে শুধুই পাহাড়ের জন্য নানা প্রকল্পের ঘোষণা। তাও কোনও সরকারি সভা নয়, দলীয় মঞ্চ থেকেই একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা প্রস্তাব বলে গেলেন বিনয় তামাঙ্গ। শোনালেন তাঁর শিল্প ভাবনাও।

হুঁশিয়ারি: সুকনার সভামঞ্চে বিনয় তামাঙ্গ। হুঁশিয়ারি দিলেন পড়শি রাজ্যকে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

হুঁশিয়ারি: সুকনার সভামঞ্চে বিনয় তামাঙ্গ। হুঁশিয়ারি দিলেন পড়শি রাজ্যকে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

দেড় ঘণ্টার বক্তৃতা। তার মধ্যে এক ঘণ্টা জুড়ে শুধুই পাহাড়ের জন্য নানা প্রকল্পের ঘোষণা। তাও কোনও সরকারি সভা নয়, দলীয় মঞ্চ থেকেই একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা প্রস্তাব বলে গেলেন বিনয় তামাঙ্গ। শোনালেন তাঁর শিল্প ভাবনাও। জিটিএ-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে রবিবারই প্রথম দলের বড় মাপের জনসভায় বক্তৃতা করলেন বিনয়। সে কথা নিজেও বললেন। বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘এতদিন প্রকাশ্যে সভা করিনি। উন্নয়নের পরিকল্পনা করছিলাম, নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম। আজ আপনাদের কাছে সব বলতে এলাম।’’

সুকনা হাইস্কুলের মাঠে এ দিন জনসভার আয়োজন করেছিল মোর্চা। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বিরাট জনসভা’। সংগঠনের রাশ তাঁদের হাতেই রয়েছে বোঝানোর বার্তা দিতেই এ দিনের সভা ডেকেছিল মোর্চা। এ দিনের সভার ভিড় দেখে নিজেরা সফল বলেও দাবি করেছেন নেতারা। বিনয়ও বলেন, ‘‘এ দিনের সভা প্রমাণ করল, পাহাড়ে বিমল গুরুঙ্গের কোনও অস্তিত্ব আর নেই।’’ বক্তৃতার শুরুটা হয়েছিল রাজনৈতিক সুরেই। গুরুঙ্গকে নিয়ে নানা ঠাট্টা-রসিকতাও করেন। পাহাড়ের অশান্তিতে গুরুঙ্গ যে সরাসরি মদত দিয়েছে তাও জানান। বলেন, ‘‘পাহাড়ের আন্দোলনের সময় কয়েকশো জিলোটিন স্টিক চুরি হয়েছিল। সেগুলি ফিরিয়ে দিতে বলেছিলাম। সেই কথা বিমল গুরুঙ্গ শুনলে আজকে তাঁর এই অবস্থা হতো না।’’

গুরুঙ্গের সঙ্গে যে তার ফারাক রয়েছে তা বোঝাতেই বারবার উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এতদিন মোর্চার সভায় গুরুঙ্গের বক্তব্য জুড়ে শুধু বন্‌ধ-আন্দোলনের কথা শুনতেই অভ্যস্ত ছিলেন নেতা-কর্মীরা। এ দিন বিনয় বলেন, ‘‘আমি থাকাকালীন পাহাড়ে কোনও বন্‌ধ হবে না। আমরা তো ডাকবই না, অন্য দলগুলিকেও না ডাকার আর্জি জানিয়েছি।’’

পাহাড়ে কাজ করতে গেলে ‘তোলা’ দিতে হয় বলে একাধিক সংস্থা অভিযোগ করেছে অতীতে। বিনয়ের কথায়, ‘‘স্থায়ী ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কোনরকম ভাবে নাকাল হতে দেব না। পাহাড়ে গুন্ডাগিরি আর চলবে না।’’ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে পাহাড়ে বড় মাপের সভা-আলোচনাও চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিনয়।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করেছেন বিনয়-অনীতরা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা পর্যটন আপাতত উন্নয়ের ক্ষেত্র। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে পাহাড়ের সব গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন জিটিএ-এর চেয়ারম্যান। ইকো-পর্যটনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াঙ হাসপাতালকে সুপার স্পেশালিটিতে উন্নতি করার কথা জানিয়েছেন। কলকাতা-দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য পাহাড়ের বাসিন্দারা গেলে নামমাত্র খরচে গোর্খা ভবনে থাকার সুযোগ পাবেন। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী পড়ুয়াদের জিটিএ বৃত্তি দেবে চলতি বছর থেকেই। বিনয়ের ঘোষণা, ‘‘রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল কলেজে যাতে জিটিএ-র কোটা থাকে সে চেষ্টাও করছি।’’

সরাসরি যাতে বাসিন্দাদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য জিটিএ-র চেয়ারম্যানের ত্রাণ তহবিলও তৈরি করেছেন বিনয়। চিকিৎসার খরচ দেওয়া হবে এই তহবিল থেকে। পর্যটনের স্বার্থে রোহিনীর টোল ট্যাক্স তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। আগামী এপ্রিল থেকে তা তুলে দেওয়া হবে। রোহিনীর রাস্তাকে সুবাস ঘিসিঙ্ঘের নামে নামকরণ করার কথা বিনয়ের মুখে শুনে সভায় হাততালিও পড়েছে। ঘিসিঙ্গের আমলে তৈরি কলকাতা-দিল্লির গোর্খা ভবনে ঘিসিঙ্গের নাম ফলক ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই প্রবণতাও চলবে না দাবি করে বিনয় বলেন, ‘‘সুবাস ঘিসিঙ্গ তার আমলে যা যা তৈরি করেছেন সবেতেই তাঁর নাম ফলক থাকবে।’’ এই ঘোষণার পেছনে রাজনীতির কৌশলও দেখছেন অনেকে। গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছে জিনএলএফও। ঘিসিঙ্গ পুত্র মন জিএনএলএফের মাথায়। এ দিন বিনয় ঘিসিঙ্ঘের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জিএনএলএফকেও কাছে টানার রাস্তা পরিষ্কার করলেন।

বিনয় ছাড়া মোর্চার মহাসচিব অনীত থাপা সহ পাঁচ জন বক্তব্য রাখেন। এ দিনের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল লম্বালম্বি ভাবে। কেন্দ্রীয় কমিটি সহ সব শাখা সংগঠনের পদাধিকারীদের মঞ্চে বসানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, মর্যাদা দিতেই সকলকে মঞ্চে তুলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিনয়। বক্তব্যেও বিনয় ‘আমি’র থেকে বারবার বলেছেন ‘আমরা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE