প্রতীকী ছবি।
অপরাধ দমন পুলিশের কাজ। কিন্তু জেলের ভিতরে থেকেও দুষ্কৃতীরা অপরাধ করে কী করে?
মঙ্গলবার গুড়াপে হুগলি জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে হুগলি জেলে সাম্প্রতিক গোলমাল নিয়ে ওই প্রশ্ন তুলে পুলিশের কাজে উষ্মা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলারও নিদান দিলেন তিনি।
গত বছর তারকেশ্বরে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা জেলা পুলিশকে দু’ভাগে ভাগ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেইমতো হুগলি শিল্পাঞ্চলের ৯টি থানাকে নিয়ে গড়া হয় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। বাকি ১৫টি থানা আসে গ্রামীণ পুলিশের আওতায়। কিন্তু তার পরেও লাগাম পড়েনি চুরি, ছিনতাই, খুন, মারামারি, অস্ত্র নিয়ে আস্ফালনের। গত ১৭ জানুয়ারি হুগলি জেলে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায়। জেলের আধিকারিকদের মারধরও করে তারা।
সেই প্রসঙ্গ সরাসরি তুলে এ দিন মমতার প্রশ্ন, ‘‘জেলে মোবাইল ফোন থেকে ল্যাপটপ, ক্যামেরা— সবই ঢুকে যায়। দুষ্কৃতীরা কেন জেল থেকে অপারেশন করবে? এমন ঘটনা কেন ঘটবে? উপযুক্ত পরিকল্পনা বা নজরদারির অভাবে এটা হয়।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু সেই উত্তর মমতাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘‘নজরদারিতে ফাঁক থাকলেই জেলে এই ধরনের সমস্যা হয়। লোকাল আইসি-দেরও এটা কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে। কোনও ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। উপযুক্ত নজরদারি দরকার।’’
জেলায় বালি-কয়লা-জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আছে কিনা, জানতে চান মমতা। জেলার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান, এমন অভিযোগ এখন নেই। পুলিশ সতর্ক আছে। যদিও মমতা জানান, জমি-মাফিয়ার দৌরাত্ম্যের একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নে বিভিন্ন থানার ওসি, আইসি-রা জানান, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমসা নেই। বরং এলাকায় শান্তি রয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ পরে বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে আগেভাগে খবর পেয়ে দুষ্কর্ম আটকে দেওয়া গিয়েছে।’’
কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। গত কয়েক মাসে কখনও একাকী বৃদ্ধা খুন হয়েছেন নিজের ফ্ল্যাটে, কখনও দিনেদুপুরে ডাকাতি হয়েছে ব্যাঙ্কে, কখনও বা ছিনতাই হয়েছে প্রকাশ্যে। জেলা সদরের কাছেই বোমাবাজি হয়েছে একাধিকবার।
কিছু ঘটনায় পুলিশ কিনারা করতে পেরেছে। কিছু ক্ষেত্রে আবার দুষ্কৃতীরা অধরা। গ্রামীণ এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহারও দেখা গিয়েছে। বৈঠকে কেউ কিছু না-বললেও জেলার পুলিশকর্তারা কিন্তু আগে একাধিকবার পরিকাঠামোর অভাবের কথা তুলেছেন। পুলিশকর্মীর অভাবে শুধু জেলা সদরেই একের পর এক ফাঁড়ি বন্ধ হয়েছে। এই অবস্থায় যথাযথ পরিকাঠামো না-হলে কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শমতো আইসি, ওসি-রা জনসংযোগ বাড়াবেন, কী করেই বা মারামারি হলে ব্যবস্থা নিতে দৌড়বেন, সে প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে এসেছে পুলিশ মহলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy