Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উঠল অনশন, বন্‌ধে ধন্দই

এই ‘ভুল বোঝাবুঝি’ যাতে নতুন করে জট তৈরি না করে, সে জন্য এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়েছে, রাজনাথ কিন্তু মোর্চা নেতাদের ডাকেননি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। দলের যুব গোষ্ঠীর অনশন কর্মসূচি তুলে নিলেন বিমল গুরুঙ্গ। যদিও বন্‌ধ কবে তোলা হবে, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি তিনি। দলের অন্দরের খবর, গুরুঙ্গ চাইছেন, বন্‌ধ তোলার ব্যাপারে গোর্খাল্যান্ড দাবি আদায় সমন্বয় কমিটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিক। তা হলে আর মোর্চার একার ঘাড়ে আর দায়টা থাকে না। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিনয় তামাঙ্গ বলেছেন, ‘‘কমিটি অনুরোধ করেছে বলেই অনশন তোলা হয়েছে। বন্‌ধ নিয়েও কমিটির সঙ্গে আলোচনার পরে পদক্ষেপ করা হবে।’’

টানা দু’মাস ধরে বন্‌ধ চলায় বিপর্যস্ত পাহাড়ের জনজীবন। মোর্চার উপরে এই নিয়ে চাপ যথেষ্টই। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও চাইছে বন্‌ধ থেকে সরে এসে আলোচনায় বসুক পাহাড়ের দলগুলি। রবিবারের বৈঠকেও সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে সমন্বয় কমিটিকে। মোর্চার অন্দরের খবর, ওই বৈঠকের পরেই ইতিবাচক ইঙ্গিত দিতে এ দিন আপাতত অনশন তুলে নিল মোর্চা। এর পরে রাজ্য কী করে, সে দিকেও তাকিয়ে রয়েছেন গুরুঙ্গরা।

কিন্তু রাজনাথ যে ভাবে মোর্চা নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছেন, তাতে নবান্ন ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে রাজনাথের সেই ডাক পাওয়ার কথা যে ভাবে মোর্চা প্রচার করেছে, তাতে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তাই আপাতত আগ বাড়িয়ে মোর্চাকে আলোচনায় ডাকতে নারাজ রাজ্য। শনিবার নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তিন বার আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছেন। বিধানসভাতেও বলেছেন। এর পরে নতুন করে আর বলার কিছু থাকতে পারে না।’’

তা হলে কি আলোচনা শুরু হবে না? ওই কর্তার কথায়, রাজনাথ তাঁর আবেদনে যা বলেছেন, মোর্চা আগে তা মেনে নিক। বন্‌ধ তুলুক। তার পরে কথা হতে পারে। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি জানান, বৃষ্টির জেরে যেখানে ধস বা অন্য কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা প্রশাসন মেরামত করবে।

এই ‘ভুল বোঝাবুঝি’ যাতে নতুন করে জট তৈরি না করে, সে জন্য এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়েছে, রাজনাথ কিন্তু মোর্চা নেতাদের ডাকেননি। বরং মোর্চা নেতারাই বারবার একটি স্মারকলিপি জমা দিতে চাইছিলেন। সেই মতো রাজনাথ তাঁদের নর্থ ব্লকে না ডেকে নিজের বাড়িতে ডাকেন।

আরও পড়ুন:স্বাধীনতা পালনে বিজেপিকে পাল্টা

যদিও এর পরেও চিঠি দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না রাজ্য। রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশ এ-ও মনে করছে, এখনই আলোচনার চিঠি না দিয়ে মোর্চার উপরে চাপ বাড়ানো ভাল।

বস্তুত, রাজনাথের আর্জি সত্ত্বেও বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত মোর্চা নিয়েছে, তাতে পাহাড়াবাসীর অনেকেই উদ্বিগ্ন। তাঁদের আশঙ্কা, কেন্দ্রের অনুরোধে সাড়া না দিলে আগামী দিনে পাহাড়ে আরও আধাসেনা আসতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার আলোচনায় বসার ডাক দিলেও কেন মোর্চা সাড়া দিচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে পাহাড়ে।

এর মধ্যে ধীরে ধীরে পাহাড়ে নিজেদের মুঠো শক্ত করছে পুলিশ-প্রশাসন। সোমবারই যেমন পাতলেবাসের উপকণ্ঠে মালেধুরায় অবৈতনিক একটি স্কুলে আধাসেনাকে সঙ্গী করে ঢুকে ঘাঁটি গেড়েছে পুলিশ। যে ট্রাস্ট ওই স্কুলটি চালায়, তার কর্ণধারদের অন্যতম হলেন বিমল গুরুঙ্গের ছেলে অভিষেক। মোর্চার এক নেতা জানান, স্কুলের জমির মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। সেই সময়ে পুলিশ কী ভাবে জায়গার দখল নিল? তবে বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলব না।’’

এই অবস্থায় দ্রুত আলোচনার পথে যেতে মোর্চার অন্দরেও এখন চাপ বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE