Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমি যে রাষ্ট্রপতি ভুলেই যাই

নদী-নালায় ছিন্ন প্রান্তিক জেলাটায় এলে এখনও চার বছর আগের দিনগুলো মনে পড়ে তাঁর।দেশের অর্থমন্ত্রকের চাপ সামলেও সে সময়ে মাঝে মধ্যেই পা রাখতেন আটপৌরে এই মফস্সলে। জায়গা কিনে পেল্লাই একটা বাড়িও করেছিলেন। ছড়িয়ে থাকা পুকুর, বাড়ির পিছনে কিচেন গার্ডেন— একেবারে গার্হস্থ্য জীবন।

জঙ্গিপুরে রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদল।— নিজস্ব চিত্র

জঙ্গিপুরে রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদল।— নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

নদী-নালায় ছিন্ন প্রান্তিক জেলাটায় এলে এখনও চার বছর আগের দিনগুলো মনে পড়ে তাঁর।

দেশের অর্থমন্ত্রকের চাপ সামলেও সে সময়ে মাঝে মধ্যেই পা রাখতেন আটপৌরে এই মফস্সলে। জায়গা কিনে পেল্লাই একটা বাড়িও করেছিলেন। ছড়িয়ে থাকা পুকুর, বাড়ির পিছনে কিচেন গার্ডেন— একেবারে গার্হস্থ্য জীবন।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে এলে তিনি যে সেই পুরনো দিনেই ফিরে যান, বুধবার জঙ্গিপুর ফুডপার্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খোলা মঞ্চ থেকেই তা কবুল করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বলছেন, ‘‘জঙ্গিপুরে যখন আমি আসি তখন ভুলে যাই যে আমি রাষ্ট্রপতি। মনে পড়ে আমি এই জঙ্গিপুরেরই সাংসদ ছিলাম।’’

এ দিন স্পষ্টই আবেগতাড়িত শোনায় তাঁর গলা। খোলা মঞ্চ থেকেই স্মৃতি হাতড়াতে থাকেন প্রণববাবু ‘‘প্রায় ১২ বছর হয়ে গেল, অধীর চৌধুরীর আমন্ত্রণে জঙ্গিপুর থেকে লোকসভায় দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পর পর দু’বার, আপনারাই আমাকে নির্বাচিত করে লোকসভায় পাঠিয়েছেন। এ সব কী ভুলতে পারি।’’ হয়তো সে কারণেই পাশে বসে থাকা কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরসিমরত কাউর বাদলের কাছে আর্জি জানান, ‘‘একটু বাংলায় বলি!’’

শুরু করেন তিনি— ‘‘২০০৪ ও ২০০৯ পরপর দু বার আপনারা আমাকে নির্বাচিত করে লোকসভায় পাঠিয়েছেন। তার আগে দীর্ঘদিন আমি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলাম। লোকসভায় পাঠিয়ে আমার একটা যে অভাব বোধ ছিল সেটা আপনারা কাটিয়ে দিয়েছেন।’’ তিনি জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা ভয় ছিল। তিনি দিল্লি থেকে রাজনীতি করেন, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, কলকাতা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে তিনি জঙ্গিপুরে প্রতিনিধিত্ব করলেও তার সঙ্গে এলাকার কোনও সম্পর্ক থাকবে তো! প্রণববাবু বলেন, ‘‘সেটা অমূলক নয়। তবে আট বছরে আমি প্রতি মাসে তো বটেই, অধিকাংশ সপ্তাহে কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও আমি জঙ্গিপুরে আসতাম।”

সেই সময়েই শিলান্যাস হয়েছিল এই ফুড পার্কের। সে কথাও মনে পড়িয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তার পর?

চব্বিশ মাসের মধ্যে যে মেগা ফুড পার্কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল তা আট বছরেও হল না কেন?

এ দিন রাষ্ট্রপতির সামনেই তার অসন্তোষ গোপন করলেন না কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, “১০০ একর জমির উপর এই ফুড পার্ক গড়তে খরচের ১৩২ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করেছে। ২০০৮ সালে কাজ শুরু হয়েছিল । অথচ একসময় দেখা যায় অর্থ সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে সে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।’’ ২০১৪ সালে শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পটি রিভিউ করে বাড়তি অর্থের সংস্থান করে দিতে হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে। কারণ এই প্রকল্প থেকে এই এলাকার ৩০ হাজার চাষি উপকৃত হবেন। চার হাজার কর্ম সংস্থান হবে। আশ্বাস অন্তত এমনই।

এ দিন অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ মানতে চাননি নিয়োগকারীদের অন্যতম জাহাঙ্গির বিড়ি কোম্পানীর মালিক ও ফুড পার্কের ডিরেক্টর শাজাহান বিশ্বাস।

তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের জন্য ফুড পার্কের কাজে কোনো বিলম্ব হয় নি।” রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক মোল্লাও বলছেন, ‘‘খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এত দিন। যার ফলে উৎপাদিত ফসল নষ্ট হচ্ছে। দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ফুড প্রসেশিং মিশনকে অবিলম্বে সংস্কার করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE