ফলযোগ: ফুটপাথের দোকানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে। ছবি: জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
নোট বাতিলের পরে তিনিই ছিলেন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। একতরফা ভাবে এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে তিনিই সবার আগে মুখ খোলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২৭ জুন আসছেন নেদারল্যান্ডসে। উদ্দেশ্য তাঁর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে বিনিয়োগ টানা। কিন্তু তার ঠিক সাত দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির বন্দর, বায়ুকল আর বাগানের দেশে। প্রধানমন্ত্রীর আগেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য লগ্নি আহ্বান করবেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও মোদীর চ্যালেঞ্জার হিসেবে নিজেকে এ ভাবে তুলে ধরতে চান মমতা।
ভারতীয় দূতাবাস সূত্রের খবর, ভারত-নেদারল্যান্ডস কূটনেতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্ণ হল এ বার। সেই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতের সঙ্গে দেখা করবেন মোদী। পাঁচ ঘণ্টার সফরে তিনি যোগ দেবেন শিল্প সম্মেলনেও। কিন্তু তার আগে এ দিনই মমতার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসছে কলকাতায়। নেদারল্যান্ডস রয়্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করলেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। তিন মাসের মধ্যে হবে চুক্তি সই। মুখ্যমন্ত্রী চান, ক্রুয়েফ, খুলিত, বাস্তেন, ভ্যান পারসি, রবেন, নিস্তেলরুইদের দেশের সঙ্গে ফুটবল-যোগ গড়ে তুলতে যাতে কলকাতা থেকে খেলোয়াড়দের এখানে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। সে ব্যাপারে দায়িত্ব নেবে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী।
আগামী কাল ‘দ্য হেগ ম্যারিয়ট’ হোটেলে বসবে শিল্প সম্মেলন। এখানকার সবচেয়ে বড় বণিকসভা ভিএনও এমসিডব্লিউ তাতে অংশ নেবে। আসবেন এখানকার শিল্প কর্তারা। যাঁরা অনেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও একটি রাজ্যের শিল্প প্রতিনিধি দল হেগ শহরে এসেছেন। রাজ্যের শিল্প সচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘নেদারল্যান্ডসে আমাদের আসার মূল উদ্দেশ্য হল রাজ্যের শিল্প সংস্থার সঙ্গে এখানকার সংস্থাগুলির প্রযুক্তি বিনিময়, অভিনব উদ্যোগের গাঁটছড়া বাঁধা। বিশেষ করে জলপথ উন্নয়ন, বন্দর, কৃষি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখানকার সংস্থাগুলিতে সহযোগী হিসাবে পাওয়া গেলে লাভ হবে রাজ্যের।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আসা রিলায়েন্সের তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা, অম্বুজা গোষ্ঠীর হর্ষ নেওটিয়া, পিসিএম গোষ্ঠীর কমল মিত্তলরা বলেন, ‘‘লগ্নি একদিনে পাওয়া যায় না। পরিবেশ তৈরি করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী সেই কাজটাই করছেন। সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানি, ইতালির পর এবার নেদারল্যান্ডসের পালা।’’ শিল্প সম্মেলনের পরের দিন রটেরড্যামে শিল্পকর্তারা জলপথ উন্নয়ন সংক্রান্ত কয়েকটি কারখানা দেখতে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এ বারের সফর আসলে সরকারের সামাজিক উন্নয়নের প্রকল্পগুলি রাষ্ট্রসঙ্ঘের মঞ্চে তুলে ধরা এবং স্বীকৃতি নিয়ে দেশে ফেরার জন্য। কিন্তু এলাম যখন, তখন শিল্প আহ্বানের কাজটাই বা বাকি থাকে কেন?’’ জিএসটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আসতে পারেননি। তিনি শিল্প সম্মেলনের দিন সরাসরি এসে পৌঁছবেন বলে জানিয়েছেন শিল্প সচিব।
আগামী কালের সম্মেলনের পরেই ২২ জুন রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলন শুরু হবে। জনপরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের আলোচনায় সভাপতিত্ব করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের কর্তারা। যা বেশ সম্মানের বলেই প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন। কিন্তু নিজে সেই অনুষ্ঠানে না থেকে সেখানে শিল্পমন্ত্রীকেই সভাপতিত্ব করতে পাঠাবেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৩ জুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মন্ত্রীদের একটি সভায় বক্তৃতা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাজকল্যাণ সচিব রোশনি সেন কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরবেন প্রতিনিধিদের সামনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy