Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কোন পরীক্ষায় বুঝব ডেঙ্গি, সংশয়ে রোগীরা

আবার যে-সব চিকিৎসক বেসরকারি ক্লিনিক বা চেম্বারে রোগী দেখেন, তাঁরা এলাইজা পরীক্ষার (রক্তে ডেঙ্গির অ্যান্টিবডির উপস্থিতির পরীক্ষা) পাশাপাশি রক্তের এনএস-১ পরীক্ষার উপরেও ভরসা রাখছেন।

ডেঙ্গিবাহক এডিস ইজিপ্টাই

ডেঙ্গিবাহক এডিস ইজিপ্টাই

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

ডেঙ্গির মরসুম শুরু হতেই এর শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে শুরু চাপান-উতোর। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের। ডেঙ্গি নির্ণায়ক কোন পরীক্ষা তাঁরা করাবেন, তা নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন রাজ্যের মানুষ।

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল এবং পুরসভার ক্লিনিকগুলি জানিয়েছে, জ্বর হওয়ার অন্তত পাঁচ দিন পরে যত ক্ষণ না এলাইজা পরীক্ষায় আক্রান্তের রক্তে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ কাউকে ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে ঘোষণা করা যাচ্ছে না। ডেঙ্গি নির্ণয়ের যে দ্রুত পরীক্ষা (এনএস-১) চালু রয়েছে, তার উপরেও তাঁদের ভরসা নেই বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।

আবার যে-সব চিকিৎসক বেসরকারি ক্লিনিক বা চেম্বারে রোগী দেখেন, তাঁরা এলাইজা পরীক্ষার (রক্তে ডেঙ্গির অ্যান্টিবডির উপস্থিতির পরীক্ষা) পাশাপাশি রক্তের এনএস-১ পরীক্ষার উপরেও ভরসা রাখছেন।

দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, যে সব এলাকা ডেঙ্গি প্রভাবিত, সেখানে এনএস-১ (নন স্ট্রাকচারাল প্রোটিন-ওয়ান) পরীক্ষা উপযোগী। রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ঢুকলে তার অ্যান্টিবডি তৈরি হতে অন্তত দিন চার-পাঁচ সময় লাগে। সেই সময়টায় এনএস-১ পরীক্ষা খুব উপযোগী। কারণ ডেঙ্গির জীবাণু অর্থাৎ অ্যান্টিজেনের প্রাথমিক উপস্থিতির প্রমাণ মেলে ওই পরীক্ষায়।

কলকাতার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই কিন্তু এনএস-১ পরীক্ষার উপরেই ভরসা রাখছেন। এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, এনএস-১ পজিটিভ রোগীদের বড় অংশেরই পরে এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি নিশ্চিত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এনএস-১ পজিটিভ রক্তে ডেঙ্গির অ্যান্টিজেনের নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি মেলেনি।

ম্যালেরিয়াবাহক অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এনএস-১ পজিটিভ রোগীদের বড় একটা অংশই যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত, তার প্রমাণ পেতে বেশ দেরি হয়ে যায়। ফলে হেমারেজিক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যেতেপারে। তাই এনএস-১ পজিটিভ হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখলে বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে।’’

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারাও মনে করছেন, এনএস-১ ডেঙ্গি নির্ণয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা নয় ঠিকই। কিন্তু একে হেলাফেলা করাও ঠিক নয়। মন্ত্রকের এক যুগ্ম সচিবের কথায়, ‘‘এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়লে সেটাকে সঙ্কেত হিসেবে ধরা যেতেই পারে। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে সরকার যদি গোড়া থেকেই ওই রিপোর্ট নস্যাৎ করে দিতে চায়, তা হলে তা রোগীর পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’’ যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই প্রশ্ন, এলাইজা পরীক্ষার ফলের জন্য বসে থাকা কোনও ডেঙ্গি রোগী যদি স্বাভাবিক ভাবে ঘুরে বেড়ান, তা হলে রোগ অনেকের মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। এডিস ইজিপ্টাই মশা ওই সব ব্যক্তিকে কামড়ালে ডেঙ্গির জীবাণু মশার শরীরে প্রবেশ করে। সেই মশা তার পরে যত জনকে কামড়াবে, প্রত্যেকের শরীরেই প্রবেশ করবে ডেঙ্গির জীবাণু।

ডেঙ্গি-কথা

রোগটা কী?


ডেঙ্গি ভাইরাস বহনকারী এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশা কাউকে কামড়ালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডেঙ্গি রোগ হয়। স্ত্রী এডিস মশা এই রোগ এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়।

বইয়ে যা লেখা আছে:

উপসর্গ কী?


জ্বর প্রথমে কম থাকে, পরে হঠাৎ করে বেড়ে যায়


মাথার পিছনে, চোখের পিছনে প্রচণ্ড যন্ত্রণা


হাত-পায়ের মাংসপেশীতে, গাঁটে ব্যথা


গায়ে লাল লাল ছোপ, চোখ লাল হওয়া


অনেক সময়ে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, বমি, পাতলা পায়খানা


দেহে জলের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে গিয়ে শক সিন্ড্রোম


প্লেটলেট কমে যাওয়া, শরীর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়া

এখন যা হচ্ছে:


জ্বর সেরে যাওয়ার তিন-চার দিন পরে হঠাৎ করে লাল দাগ


জ্বর নেই, প্রচণ্ড পেট খারাপের সঙ্গে পেশীতে যন্ত্রণা


প্রথম থেকেই প্লেটলেট হু হু করে কমে যাচ্ছে


গায়ে লাল দাগ, প্রচণ্ড জ্বর কিন্তু ডেঙ্গি ধরা পড়ছে না


শরীর থেকে এত জল বেরিয়ে যাচ্ছে যে রোগীর গা-হাত-পা ঠান্ডা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE