Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

৬০ বছরে লোকাল ট্রেন, ফিরে দেখা কাল

হাওড়া স্টেশনের রেল পরিষেবা দেড়শো বছর পেরিয়েছে অনেক দিন। বলা বাহুল্য, প্রথমে ছিল স্টিম ইঞ্জিন। তার পরে এল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন। কলকাতা শহরে ক্রমশ যাত্রীর চাপ বাড়ছে দেখে শেষ পর্যন্ত রেল মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিল ইএমইউ লোকাল ট্রেন চালানোর।

১৯৫৭: শেওড়াফুলি থেকে হাওড়া ইএমইউ লোকালের উদ্বোধনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ফাইল চিত্র

১৯৫৭: শেওড়াফুলি থেকে হাওড়া ইএমইউ লোকালের উদ্বোধনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ফাইল চিত্র

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

হাও়ড়া থেকে ইলেকট্রিক ট্রেন পরিষেবা উদ্বোধন করতে এসেছিলেন বছর তেরোর রাজীবের দাদু। রাজীবও এসেছিল তাঁর সঙ্গে, কলকাতায়। জায়গার অভাবে হাওড়ায় অবশ্য সে অনুষ্ঠান হয়নি। হয়েছিল শেওড়াফুলি স্টেশনে। সে দিন একটা ইঞ্জিনে চড়ে শেওড়াফুলি স্টেশনে পৌঁছেছিলেন অতিথিরা। পতাকা নেড়ে সেখান থেকেই বিদ্যুৎচালিত লোকাল ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধন করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ট্রেন গিয়েছিল শেওড়াফুলি থেকে হাওড়া। নেহরুর সঙ্গে ছিলেন রেলমন্ত্রী জগজীবন রাম, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। এবং নেহরু-কন্যা ইন্দিরার পুত্র রাজীব।

সে দিন ইএমইউ (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) ট্রেন চলার প্রথম দিনের গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি ছোটগল্প। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ইঞ্জিন শেওড়াফুলিতে পৌঁছনোর পরে হঠাৎ দেখা যায়, রাজীব নেই। খোঁজ খোঁজ। নেহরু প্রবল উদ্বিগ্ন। রেলকর্তারা তো বটেই। দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয় পুলিশও। কিছুক্ষণ পরে দেখা যায়, ওই ইঞ্জিনে বসেই একমনে যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করে চলেছে রাজীব। বড় হয়ে যে প্রথমে পাইলট হবে, তার পর দেশ চালাবে— প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী হয়ে।

তারিখটা ছিল ১৯৫৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। দেখতে দেখতে ৬০ বছর হতে চলেছে চির-চেনা ইলেকট্রিক লোকাল ট্রেনের। ওই দিনটাকে মনে রাখতেই আগামিকাল, ১২ ডিসেম্বর বিশেষ ভাবে সাজানো-গোছানো একটা লোকাল ট্রেন হাওড়া থেকে যাবে শেওড়াফুলিতে। সেখান থেকেই আবার ফিরে আসবে হাওড়ায়।

রেল সূত্রের খবর, ১৯৫৮ সালেই রেলের টাইম টেবলে প্রথম লোকাল ট্রেন পরিষেবার সময় উল্লেখ করা হয়। তত দিনে অবশ্য লোকালের যাত্রাপথ বেড়ে হয়েছে ব্যান্ডেল পর্যন্ত। রেলের নিয়ম অনুয়ায়ী, ওই সময় লোকাল ট্রেনের নম্বরের আগে লেখা হত ‘এইচ’, তার পরে যে স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটি যাবে, তার প্রথম অক্ষর। একেবারে শেষে ট্রেনের নম্বর।

হাওড়া স্টেশনের রেল পরিষেবা দেড়শো বছর পেরিয়েছে অনেক দিন। বলা বাহুল্য, প্রথমে ছিল স্টিম ইঞ্জিন। তার পরে এল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন। কলকাতা শহরে ক্রমশ যাত্রীর চাপ বাড়ছে দেখে শেষ পর্যন্ত রেল মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিল ইএমইউ লোকাল ট্রেন চালানোর।

রেলকর্তারা জানান, হাওড়া থেকে শেওড়াফুলি পর্যন্ত গোটা যাত্রাপথে ওভারহেড তার লাগানোর কাজ শেষ করা হয়েছিল প্রকল্প ঘোষণার মাত্র তিন বছরের মধ্যে। তার পরে এই লাইনে একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ক্রমে বেড়েছে যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য। পূর্ব রেলের হাওড়া মেন লাইনে এখন ইএমইউ চলছে বর্ধমান পর্যন্ত। রেল সূত্রের খবর, এখন হাওড়া ডিভিশনে সারা দিনে লোকাল ট্রেন চলে মোট ৪৭৬টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE