Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমদানি প্রচুর, তবুও আগুন ইলিশ

শুরু হয়েছে ইলশে গুড়ি বৃষ্টি। বইছে পূবালি হাওয়া। ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় করছে ইলিশ। মৎস্যজীবীদের জাল রীতিমতো ভরভরন্ত। জালে ধরা পড়ছে টন টন ‘রূপোলি শস্য’। আর তা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন মৎস্য বাজারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম মাছের বাজার ছড়িয়ে আছে ক্যানিং, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, রায়দিঘিতে।

নামখানায় ইলিশের ছবি তুলেছেন শশাঙ্ক মণ্ডল।

নামখানায় ইলিশের ছবি তুলেছেন শশাঙ্ক মণ্ডল।

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

শুরু হয়েছে ইলশে গুড়ি বৃষ্টি। বইছে পূবালি হাওয়া। ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় করছে ইলিশ। মৎস্যজীবীদের জাল রীতিমতো ভরভরন্ত। জালে ধরা পড়ছে টন টন ‘রূপোলি শস্য’। আর তা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন মৎস্য বাজারে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম মাছের বাজার ছড়িয়ে আছে ক্যানিং, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, রায়দিঘিতে। ক্যানিং বাজারেও প্রচুর মাছের আমদানি হয়। কিন্তু ইলিশের যা দাম, তাতে হাত ছোঁয়াতে পারছেন না বলে হা হুতাশ শোনা যাচ্ছে ক্যানিংবাসীর গলায়। ৭০০-৮০০ গ্রামের মাছের দাম পাইকারি বাজারে ৫০০-৬০০ টাকা প্রতি কেজি। যা খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে।

সৌরভ কর, রমেশ দাসদের গলায় হতাশার সুর। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতেই তাঁরা হাতে থলি নিয়ে কাদা ভেঙে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাজারে। ইচ্ছে ছিল, খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে বর্ষা উদযাপন করবেন। কোথায় কী! দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘ইলিশের যা দাম শুনলাম, তাতে চক্ষু চড়কগাছ। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে কী ওই মাছ মুখে তোলার সাধ্য আছে! অথচ শুনছি আশপাশের এলাকা থেকে নাকি প্রচুর ইলিশ উঠছে জালে।’’ ইলিশের শোক ভুলতে খিচুড়ির সঙ্গে দু’টি পরিবারই সে দিন কাটা পোনা ভাজা দিয়ে দুপুরের খাবার সেরেছে বলে জানালেন।

কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবারের মতো কুলতলি, ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী থেকেও বহু ট্রলার সমুদ্রে যায় ইলিশ ধরতে। তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকার পরে মরসুমের প্রথমে মাছ ধরতে বেরিয়ে এই ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মেলায় খুশি মৎস্যজীবীরা। টুনু দাস, কার্তিক সর্দার, রাজু দাসের মতো মৎস্যজীবীদের কথায়, ‘‘গত বছর তেমন ইলিশ ওঠেনি। এ বছর শুরুতে যে ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে, তাতে আশা করা যাচ্ছে দু’পয়সা লাভের মুখ দেখতে পারব।’’ মাতলা, কলস, হেড়োভাঙা, মুড়িগঙ্গা, হরিণভাঙা, বিদ্যা-সহ বিভিন্ন নদীর মোহনায় ধরা পড়ছে ইলিশ। ফলে লোকালয়-লংলগ্ন নদীতে ট্রলার না নিয়েও ধরা যাচ্ছে ইলিশ। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় ইলিশ ধরতে পেরে খুশি মৎস্যজীবিরা।

কিন্তু ইলিশ যতই লোকালয়ের কাছে চলে আসুক না কেন, মাছের দাম না কমায় ব্যাজার মুখ স্থানীয় ক্রেতাদের। ক্যানিং মহকুমার সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুকান্ত সরকার বলেন, ‘‘দিঘা, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, রায়দিঘি-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু ট্রলার এখনও সমুদ্রে মাছ ধরতে নামেনি। এ বছর সুন্দরবন-সহ আশপাশের নদী-খাঁড়িতে ইলিশের আমদানি ভাল। বাইরের বাজারে তাদের চাহিদাও বেশি। ফলে বেশির ভাগ মাছই বাইরে চলে যাচ্ছে। যে কারণে, স্থানীয় বাজারে দাম একটু বেশিই থাকছে।’’ মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গভীর সমুদ্রে যে সব ট্রলার মাছ ধরতে যায়, তাদের মাছ ধরে ফিরতে ফিরতে ১০-১২ দিন সময় লেগে যায়। সেই সময়টায় মাছ বরফে রাখতেই হয়। তাতে কিছুটা স্বাদ নষ্ট হয় তো বটেই। কিন্তু ইদানীং ছোট ছোট ডিঙি নিয়ে সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে যে সব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তা তুলনায় অনেক টাটকা অবস্থায় ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। বাইরের বাজারে তার যথেষ্ট চাহিদাও আছে।

ক্যানিং মৎস্য আড়তদার সমিতির সম্পাদক সীতানাথ দাস বলেন, ‘‘অন্যান্য জায়গায় সে ভাবে ইলিশ না ওঠায় স্থানীয় যে ইলিশ আমদানি হচ্ছে, বাইরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম একটু বেশি থাকছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE